মারুফ vs অর্নিশার বাবা : পর্ব:৪

"তো তুমি তো সরকারি চাকরি করো না! তাইতো? তা কোন ভরসায় তোমার হাতে মেয়েকে তুলে দেবো?"

"একটা সরকারি চাকুরি হয়েছিলো অবশ্য, কিন্তু আমি করি নি। "
"কেনো করো নি? "

" নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েও আবার লাখ খানেক টাকা ঘুষ দিতে হবে, আবার সেই ঘুষের টাকা উঠাতে আবার ঘুষ খেতে হবে। এই নিয়ম মানতে পারি নি।"

"চাকরি হবার পর তুমি তো তোমার জীবন তোমার মতো করে চলতে পারতে, পারতে না?"

" ঘুষ দেওয়ার সময় যদি আমার বিবেকে না বাঁধে তবে একদিন ঘুষ খেতেও আমার বিবেকে বাঁধবেনা। মন ঘুষ খাওয়ার পক্ষে সুন্দর কোনো যুক্তি খুঁজে নেবে। "

"যেমন?"

"যেমন একজন খুনি ব্যাক্তি! তারও অনেক মজবুত যুক্তি থাকে! সে হয়তো খুন করতে চায় নি, কাজ না পেয়ে ছোট্ট মেয়ের অভুক্ত পেটে কিছু খাবার যোগান দেওয়ার জন্য শেষমেষ ছিনতাইয়ের অবলম্বন নিলেন। নিজে না খেলেও চলে কিন্তু খাবারের অভাবে নিজের সন্তানকে কোনো বাবা মরতে দেবেন না।

ধরুন ছিনতাই করতে গিয়ে লাগলো ঝামেলা, ভিকটিম চিৎকার শুরু করে দিলো। কিছুক্ষনের মাঝেই লোক জমাট বেঁধে যাবে। এ দেশে ছিনতাই ধরা পড়ার শাস্তি পিটিয়ে হত্যা। সে মারা গেলে মারা যাবে তার দুটো অভুক্ত সন্তান। তাই কি করবে কিছু ভেবে না পেয়ে ঢুকিয়ে দিলো চাকু, হয়ে গেলো খুন! সে যে কি করে ফেলেছে তখন তার সে জ্ঞান নেই। হতে পারে সেই ব্যাক্তিটিই পরবর্তীতে হয়ে গেলো সিরিয়াল কিলার!"

"এর সাথে ঘুষের কি সম্পর্ক?"

কিছুক্ষণ চুপ থেকে,
"একই ভাবে একজন সৎ ব্যাক্তি হয়ত ঘুষ খেলো তার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য?"

"সেটা কি খুব বড় অপরাধ?"

"হয়তো না। কিন্তু সেই ব্যাক্তিটি? যে ভাবছে, ঘুষ খেয়ে টাকা জমিয়েছিলো বলেই আজ স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে বিলাতে নিয়ে যেতে পারছে? অথচ ঘুষ খেয়ে তার জমানো টাকাই হয়তো স্রষ্টার ইচ্ছায় শরীর কেটে দিয়ে দিতে হচ্ছে?"

রফিক সাহেব চমকে উঠলেন। তিনি যেন ধাঁধায় পড়ে গেলেন। আবার নিজেকে সামলে নিয়ে,

" যারা সরকারি চাকরি করে তাদের সবাই কি ঘুষ খায়? তোমার কি মনে হয়?"

"যারা খায় না, তারা দীর্ঘদিন অন্তর্দন্দ্বে ভোগে। প্রতিকূল পরিবেশে কেমন যেন বিপাকে পড়ে এবং অন্যদের চাপে বেশিদিন সততা নিয়ে টিকতে পারে না। এক সময় পরিবারের অশান্তিতে নানা অভাবে সংকটে ঘুষ খাওয়াটাই তার কাছে শ্রেয় বলে মনে হয়। কিংবা মনকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, যে এটা আসলে ঘুষ নয়, এটা কাজের বিনিময়ে টাকা এবং পরোক্ষভাবে কারো না কারো উপকার! আর তারপরেও যারা খাননা তাদের আমি শ্রদ্ধা করি, তারা মহাপুরুষ!"

" নিজের উপরে তোমার বিশ্বাস নেই?"
" আছে। অবশ্যই আছে। যখন ১০ জন মিলে একটি মিথ্যেকে সত্য অর্থাৎ ঠিক বলে ধরে নেয়, তখন ঐ মিথ্যেটাই অবচেতন মন সত্য বলে গ্রহণ করে নেয়। "

"যেমন?"
" যদি দশজনের মধ্যে নয় জন ইচ্ছে করেই দাবি করে যে ৭+৬= ১৪,  এবং তারা অত্যন্ত আত্ববিশ্বাস সহকারে উপস্থাপন করে, তাহলে দশম ব্যাক্তিটি কনফিউজড হবে এবং যখন খেয়াল করবে নয়জনই খুব জ্ঞানী ও সনামধন্য ব্যাক্তি, তখন সে  ধীরে ধীরে সংকীর্ণ হয়ে এক সময় তা মেনে নেবে। ধরে নেবে, তার বাল্য শিক্ষায় কিছু একটা ভুল ছিলো। সবাই তো আর মিথ্যে বলতে পারে না।"

"এই থিউরি তুমি কোথায় পেলে!"
"এটি   পরীক্ষিত।  প্রমাণ করেছেন জার্মানির মনোবিজ্ঞানীদের বেশ একটি দল! সিনেমায় গলা কাটার দৃশ্য দেখে আমরাও গলায় আঙুল বোলাই, মনে হয় গলায় যেন সামান্য ব্যাথা করছে। তারও কারন আছে....."

" আজ থেকে ১০ বছর পরও কি তুমি এই নীতি কথাগুলিকে বিশ্বাস করবে?"
" জানি না স্যার। এখন থেকে ১০ মিনিট পরে কি হবে কেউ জানেনা। তবে গত ২৬ বছর ধরে তো বিশ্বাস করে আসছি।  নিজের সততাকে শ্রদ্ধা করি, মান্য করি।
তবে সততা নিয়ে অহংকার করি না কখনো।  অহংকার সব সময়ই খারাপ। কতটুকু আঘাত, কতটুকু অসাহায়ত্ব এক জনের সততাকে চূর্ণ বিচূর্ণ হতে পারে, তা তাকে যিনি বানিয়েছেন,  সেই স্রষ্টা  খুব ভালো করেই জানেন।"

"তোমার চোখের ভাষা তোমার কথার চাইতেও অনেক ধারালো। ভালো থাকার জন্য যে তোমাকে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়েছে, তা  চোখ দেখেই বুঝতে পারছি।
আসল কথায় আসি, দেখো ছেলে, সব তো শুনলাম, তোমার ধারণা, বক্তব্য সবই মন দিয়ে শুনেছি। তোমার যুক্তি খারাপ না। কথার মাঝে অনেক অসংগতি আছে, কিছু ভুল আছে, অভিজ্ঞতার অভাব আছে, কিন্তু তোমার উদ্দেশ্য সঠিক।

আমি একজন সরকারি চাকরিজীবী, ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা আমার। তুমি যা বলছো, সরকারি চাকরি না করেই বলছো। ঠিক আছে, তুমি আজ আসো, আমি তোমাকে পরে আবার ডাকবো।

"বাবা! এখানে বসে আছো যে? তোমার কি মন খারাপ?"
বাবা উত্তর দিলেন না!
"তুমি কি মারুফের কথায় কষ্ট পেয়েছো? ও একটু এরকমই। একটু সার্কাস্টিক!"
বাবা পত্রিকা থেকে মুখ তুললেন না।
"না রে মা! আমি কষ্ট পাই নি।! তোর মা যখন লন্ডনের সবচেয়ে সনামধন্য হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন, সেদিন মনে হয়েছিলো... আমি আমার সাধ্যের সবটুকু করেছি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে, আমার কারণেই.... "

"একি বাবা? তুমি কাঁদছো? বাবা? তুমি কাঁদছো কেনো! ও কিসব উলটা পালটা কথা বলেছে, তাই বলে....

বাবা অর্নিশার কাঁধ শক্ত করে ধরে বললেন, "না রে মা! ওর কথার একবিন্দুও ভুল নেই। He is the right man! He is a great man! তাকে আমার পছন্দ হয়েছে।
বাবা চোখ মুছে বললেন, "ওর সাথে যদি তোর বিয়ে না হয়, আমি তোকে আর বিয়েই দেবো না!"

"বাবাঅাঅাঅা!!"
মেয়ে আর বাবা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। তাদের দুজনের চোখেই পানি।

_______
প্রিয় পাঠক!
আপনারা যদি ভেবে নেন যে,
মেয়ে আর বাবা যেহুতু রাজি তখন বিয়েটা বুঝি হয়েই গেলো।
কিন্তু মনে রাখবেন, এ হচ্ছে মারুফ! আকাইম্মার আকাইম্মা!
কুত্তার লেজ কোনোদিন সোজা হয় না! :p

... পরের পেইজে>>>>>

Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top