বিটকাল মারুফ-পর্ব-১

মারুফ চুলে ব্র্যাক ব্রাস দিয়ে, আর বগলে হালকা পারফিউম মেখে ড্রয়িং রুমের দিকে রওয়ানা হলো। ড্রইং রুমে অনেকক্ষন থেকে আসতে বলছে রিয়া। কে জানি এসেছে তার ভার্সিটির! রিয়ার ফ্রেন্ড ট্রেন্ড হবে। সুন্দর না হলে মার আছে রিয়ার কপালে।

মারুফ এই পৃথিবীর সবচেয়ে নিরুৎসাহি মানুষদের মধ্যে একজন। কোন কিছুতেই খুব একটা আকর্ষন নেই। তবে মাঝে মাঝে তার নিরুৎসাহি গল্পগুলি শোনাবার জন্য একটি অতি উৎসাহী গার্লফ্রেন্ডের অভাব খুব অনুভব করে।

তবে গার্লফ্রেন্ড বানানোর পিছনে যে পরিশ্রম আছে, খরচা আছে, তা করার মত আগ্রহ বা ধৈর্য কোনোটাই নেই। প্রতিদিন মোবাইলে কথা বলতে হয়, মেয়েদের ন্যাকা ন্যাকা কথা শুনতে হয়, সারাদিন 'আই ল্যেবু, আই ম্যাস্যিউ, বেব্যি' স্টাইল করে বলতে হয়।

প্রায় প্রায় দেখা করতে হয়, গিফট কিনতে হয়, সবচেয়ে বিরক্তিকর হলো বার্থ ডে মনে রাখতে হয়, এফেয়ার ডে স্মরণ রাখতে হয়, কম প্যারা??? অবশ্য মোবাইলে ইভেন্ট এলার্ম দিলেও হয়। কিন্তু সেটা করতেও তো মনে থাকা লাগবে!!

মারুফ ড্রয়িং রুমে ঢুকে দেখল গালে হালকা দাড়ি ওয়ালা একটা ছেলে চাদর গায়ে বসে আছে। দেখতে মোটামুটি সুদর্শন মনে হলেও শরীরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন জন্ডিস রোগে ভুগেছে।

মারুফ আশা করেছিল কোনো মেয়ে এসেছে। তার পুরোপুরি আশা ভঙ্গ হলো।
মারুফকে দেখে ছেলেটি উঠে দাঁড়াল। হ্যান্ড-সেকের জন্য চাদর থকে হাত বের করছে সে...

মারুফ তাকে পুরোপুরি আগ্রাহ্য করে গাল চুলকাতে চুলকাতে রিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,

__কি রে তোর কোনো বান্ধবী আসে নাই? খামাখা পারফিউম নষ্ট করলাম দুই ব্র‍্যান্ডের। তোর পাশের এই বলদটা কে?

রিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেল... হাঁ হয়ে গেল তার মুখ... কি বলবে মুখে কিছু আসছেনা।

...ভাইয়া তুই কি বলছিস এসব... উনি... উনি আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র একজন বড় ভাই। আর তুই...

রিয়াকে কথা শেষ করতে না দিয়েই প্রচন্ড অনাগ্রহের সাথে আবার প্রশ্ন করলো,

__ এই ছাগলা বলদ ছেমড়া চায় কি? নেতা টেতা নাকি, ভোট টোট চায়?

গালিব অপ্রস্তুতভাবে নড়েচড়ে বসে রিয়ার দিকে তাকায়, রিয়াও স্তব্ধ..
__ ভাইয়া তুই... তুই ঠিকভাবে কথা বল, উনি গালিব ভাই, একজন সিঙ্গার। আমাকে গিটার শিখাবেন, সপ্তাহে একদিন।

... গালিব হ্যান্ডসেকের জন্য হাত বাড়াতে যাবে এমন সময়...

__ দেখছোস, ঠিকই চিনছি!!! - বলদই তো! পুরাই চিকনা বলদ!

রিয়া হা হয়ে গেলো...

__ বলদই তো মানে?

__ আরে সিঙ্গার মানেই তো বলদ। সারাদিন কাম নাই কাজ নাই, প্রেম প্রেম করে। প্রেমের গান গায়। প্রেমের গান সারা দিন-রাত ধরে গাওয়ার কি আছে? তার উপর ড্রিংক ট্রিংক করে চিত্তোই মুত্তাই থাকে।

কি ঠিক বলছিনা গোলাপ ভাই?

__ জী? আপনি কি আমাকে...

__ এই যে দেখ, জী বলছে!  হেহ হে... দেখো কান্ড! আরে... আপনার তো প্যান্টের চেইন খোলা!

গালিব হতচকিয়ে গিয়ে প্যান্ট চেক করে দেখে আসলেই সত্যি কিনা। তারপর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে,
_" আরে কি বলেন এটা তো পায়জামা! পায়জামার তো চেইন-ই থাকেনা।"

মারুফ না শোনার ভান করে বলে,
_  বস তোরা! কি খেতে দেয়া যায় আমি একটু দেখে আসি। আপনি বসেন ব্রাদার, আমি যাই।

উঠে যেতে যেতে কানে হেডফোন লাগাতে লাগাতে বলল,
__"ও হ্যাঁ মনে পড়ছে, বাসায় চা পাতা নাই। তাই চা টা কিছু দিতে পারবনা। দুধ খান। বাসায় ড্যানিশ আছে, পানির সাথে একটা গ্লাসে দিয়ে দিচ্ছি। আঙ্গুল দিয়ে গুলায়ে পুচুক করে খেয়ে নেবেন।"

এবার আর গালিব চুপ থেকে পারলনা,

__ দেখুন আমার দুধ টুধ লাগবেনা, আর হ্যাঁ- আমি গালিব।

মারুফ হেডফোনের কারণে কিছু ভালো করে শুনতে পেলনা...

যেতে যেতে বলে গেল,

__ আপনি যতই বালেগ হন, দুধ ছোট বড় সবাই খেতে পারে দুধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই পুষ্টিকর, যত দুধ খাবেন ততই দুধের মত সাদা হবেন। ঠিক না লাবিব ভাই?

গালিব মনে মনে গজ গজ করতে লাগলো, "আর আফ্রিকান নিগ্রোরা তো দুধ খায় না, ওরা তো গরুর মুত খায়, তাই দেখতে অমন কালা!! "

_________________________________
>>>> Next page

Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top