৩৯
"স্যার?" স্যালুট দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন মেজর মশিউর।
"এসো মেজর, আমি তোমার অপেক্ষাই করছিলাম। "
মেজর মশিউর তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে একটা বিশেষ রঙের ফাইল হাতে পেলেন। খুব জরুরি ভিত্তিতে একটি কাজে তাকে যোগদান করতে বলা হয়েছে। কাজটা খুবই গোপনীয় এবং বিপদকজনক।
" পার্বত্য চট্টগ্রামের অলিগলি এখনও তোমার নখদর্পনে আছে আশা করি মেজর।"
উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মুখে এমন কথা শুনে মৃদু হাসলেন মশিউর। পার্বত্য চট্টগ্রাম মানেই পাহাড় আর পাহাড় আর সেনাবাহিনীর এই চাকরিতে কম পাহাড় ডিঙাইনি সে এই কটা বছর। ওখানকার গাঢ় সবুজ বনানীর আড়ালে, পথের বাঁকে বাঁকে অনেক নাম না জানা বিপদ লুকিয়ে আছে। সেই পাহাড় আর বিপদ দুটোই আবার তাকে ডাকছে। কিন্তু একজন সৈনিকের জীবন মানেই বন্ধুর পথে হাঁটা, জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘুরে বেড়ানো... তাই হাসি মুখেই ফাইলটা খুললেন মশিউর।
ফাইলটা পড়তে গিয়ে হাসি হাসি মুখটা বদলে গেল মশিউরের, হাসির পরিবর্তে এক ধরনের কাঠিন্য ছড়িয়ে পড়তে লাগল শিথিল পেশীতে ।
পুরো ফাইলটা পড়া শেষ করার পর ঠান্ডা চোখে আর একবার তাকিয়ে দেখল মশিউর লিস্টে থাকা নামগুলোকে, তারপর দৃঢ়তার সাথে বলল, "আমি তৈরি স্যার।"
"আমি জানতাম তুমি এই অপারেশনে যেতে চাইবে... তাই সেদিনের মিটিংয়ে তোমার নামটা প্রস্তাব করেছিলাম।"
"ধন্যবাদ স্যার আমাকে সুযোগটা দেয়ার জন্য।"
"ইটস ওকে মাই বয়।"
স্যালুট দিয়ে কক্ষটি থেকে বের হয়ে আসলেন মশিউর। এক্ষুনি তাকে ব্যাগ গোছান শুরু করতে হবে। কাগজের কালো কালো লিখাগুলো যেন তীব্র এক দ্যুতি নিয়ে তার চার বছর আগের জীবনটাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে, সঙ্গে অনেক অনেক দেনা পাওনাও।
....................
অরণ্য যতবার ওর মাথার বালিশটা বিছানায় রাখছে ততবার সেটা আবার ঘুরে ঘুরে মেঝেতে কার্পেটের উপর চলে আসছে।
"এটা কী ধরনের পাগলামো হচ্ছে ঝুম?"
নিঝুম কোন উত্তর না দিয়ে অরণ্যর বালিশটা আবার কার্পেটের উপর ছুড়ে দিল, তারপর দ্রুত নিজের বালিশের মধ্যে মুখ লুকাল।
" ঝুম প্লিজ তুমি এতো রাগ করোনা। এতো রাগ করলে সেটা বাচ্চাটার উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে," অরণ্য বালিশটা তুলে
আবার বিছানায় রেখে দিল জায়গামতো।
"আমি তো রাগ করছিনা, তুমি জাস্ট আমাকে ছোঁবে না দ্যাটস ইট।"
"কেন, আমার বউকে আমি ছোঁবো না কেন? তাও আবার দুই দুইবার যাকে বিয়ে করেছি।"
"তুমি এই হাত দিয়ে অহনাকে আদর করেছ না?"
"ঝুম.. আমি "
"করেছ কি করনি?"
" করেছি," মুখটা প্যাঁচার মতো করে উত্তর দিল অরণ্য।
"সে কী তোমার বিয়ে করা বউ ?"
এবার অরণ্য শরবিদ্ধ চাতকের মতো নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল। তা আর বলতে, বউয়ের সামনে অন্য মেয়েকে আদর করা বৈধ বললে বালিশ কেন জুতোও ছুড়ে মারতে পারে ঝুম। এখন ঝুমের জন্য সব জায়েজ। অরণ্য একটা টু শব্দও করল না।
"কি হলো.. এখন এরকম গোবেচারা মুখ করে কেন বসে আছ, আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।"
"কী উত্তর দিব?"
"তার মানে! তুমি.. তুমি বলতে চাইছ যে তুমি যা করেছ সেটা ঠিক কাজ করেছ? ওটা করা তোমার উচিৎ হয়েছে? "
"আমি কী সেটা বলেছি একবারও," বলেই আবার মাথা নিচু করে বসে রইল অরণ্য। চোখে চোখ পড়লেই নিঝুম আরো রেগে যাবে, একদম কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে ওকে খরগোশের মতো।
"খবরদার অরণ্য কথা প্যাঁচাবা না একদম।"
"ঝুম আমি কথা প্যাঁচাচ্ছি না। তুমি শুধু আমার কথাটা একবার বোঝো। আমি তো বার বার বলছি যে অহনা একটা বড়ো এভিডেন্স আমাদের জন্য। এখন অহনার সামনে যদি প্রকাশ হয়ে যায় যে আমি অরণ্য, রাইসুল সতর্ক হয়ে যাবে। আর সেটা হলে আমার সাথে সাথে তোমারও বিপদ ঝুম। আর তোমার বিপদ মানে আমাদের বাচ্চাটাও তখন অনেক বড়ো বিপদের মধ্যে থাকবে। আমি এটা কী করে হতে দিতাম? "
”অ্যাই খবরদার আমার বাচ্চা... আমার বাচ্চা বলে দরদ দেখাতে আসবেনা। আমাকে নিজের মরার মিথ্যা খবর দিতে একটুও লজ্জা করলো না তোমার? আমি জায়গায় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম,তখন যদি বাচ্চাটা মরে যেত তখন কই ছিলা তুমি? মিথ্যুক একটা লোক,"নিঝুম কথা বলতে বলতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল।
নিঝুমের কান্না দেকে অরণ্যর মনে হলো আসলে ওর মরে যাওয়াই উচিত ছিল সেদিন, ও সেটারই উপযুক্ত। আসলে এত কিছু ভেবে দেখার মতো অবস্থায় তখন ও ছিল না। অয়নের ওই অবস্থা দেখে বোধ বুদ্ধি পুরো স্থবির হয়ে গিয়েছিল ওর। গুলি হয়েছে শোনার সাথে সাথে থানা থেকে পুলিশ এসে যখন ওদের ঘিরে ফেলেছিল.. অয়নের শরীরে তখনো ওর ইউনিফর্মটা নিজ সৌন্দর্যে আলোকিত হয়ে ছিল।
আসলে অয়নের নতুন কেনা গেঞ্জিটা নিয়ে ট্রায়াল রুমে গিয়ে ট্রায়াল দিচ্ছিল অরণ্য, তখনই নিঝুমের সাথে ফান করবে বলে ওর ইউনিফর্মটা চট করে পরার জন্য বায়না ধরে অয়ন। অরণ্য প্রথমে অয়নকে না বললেও পরে এই শর্তে রাজি হয় যে, তামাশা করা শেষ হলেই ওটা খুলে ফেলবে অয়ন। কিন্তু নিঝুম আসার আগেই দোকান থেকে বের হবার সময় গুলি খায় অয়ন। পুরো ঘটনাটা এতই অতর্কিত ছিল যে, অরণ্যর বোধবুদ্ধি সব লোপ পেয়েছিল ওই মুহূর্তেই। ও কেবল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল অয়নের দিকে। ওর বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে এমন কিছুও কোনদিন হতে পারে। অয়ন ওকে ছেড়ে চলে যাবে তাও আবার এতোটা দূরে, এতো দূরে গিয়ে অয়ন থাকবে কী করে?
প্রথমে অয়নকেই পুলিশ কর্মকর্তা মনে করলেও, পরে অরণ্যর এক সহকর্মী ওদের পায়ের মিসম্যাচ জুতো দেখে অরণ্যকে চিনে ফেলে। সেই ওকে সতর্ক করে যে, " মিস্টার রহমান আপনি এক্ষুনি অ্যাম্বুলেন্সে উঠে জুতো পাল্টে ফেলুন। ওদের মূল টার্গেট কিন্তু আসলে আপনি।"
অরণ্য সেদিন অ্যাম্বুলেন্সে বসেই নিজের জুতা পাল্টে নিয়েছিল। হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার যখন অয়নকে মৃত ঘোষনা করে তখন ওর সাথে ওর বাবা রায়হান সাহেব সর্বক্ষন ঢালের মতো ওর পাহারায় ছিলেন । অরণ্য এখনও বুঝতে পারেনা বাবা কী করে অত শক্ত ছিল সেদিন। অরণ্য নিজেই আবোলতাবোল হয়ে গিয়েছিল অথচ বাবা ওকে সারাক্ষণ আগলে রেখেছিল। বাবা শুধু বলেছিল, অয়ন তো আর ফিরবেনা বাবা। কিন্তু ওরা এখন তোকে কিছু করলে আমি আর তোর মা তো এতিম হয়ে যাবো।
অরণ্যর বেঁচে থাকাটা এতোদিন বাড়ির মধ্যে কেবল ওর বাবা রায়হান সাহেবই জানতেন কিন্তু আজ থেকে নিঝুমও সেটা জেনে গেল। নিঝুমের অভিযোগগুলো খুবই সত্যি অরণ্য অস্বীকার করতে পারেনা। কিন্তু এক মিথ্যা ঢাকতে গিয়ে আসলে অনেক মিথ্যার অবতারনা করতে হয়, নিঝুমের সামনে অভিনয়টাও এমনি একটা অংশ। অরণ্যর প্রচন্ড মর্মপীড়া হচ্ছে থেকে থেকে কিন্তু হাত থেকে ছুটে চলে যাওয়া ঢিল তো আর আগের অবস্থানে ফিরে আসে না... আর আফসোস সব কিছুর পরিপূরকও হয় না।
সত্যি বলতে নিঝুমের কথা, ওর দুঃখ ওসব আসলে তখন খুব বেশি আর ভাবায়নি অরণ্যকে। মনে হয়েছে, ওতো আর সত্যি মরেনি। তাহলে নিঝুমের তো আর হারানোর কিছু নেই। যা হারিয়েছে অরণ্য নিজেই হারিয়েছে, ওর বাবা - মা হারিয়েছে। দুনিয়াটা বড্ড স্বার্থপর লেগেছিল তখন অরণয়র কাছে আর তাই নিজেও একটা স্বার্থপর মানুষে পরিনত হয়ে গিয়েছিল। নিজের দুঃখের সামনে তখন গোটা দুনিয়াটা অন্ধকার লাগছিল।
অয়নের হত্যাকান্ডের কেস ফাইল করার আগেই বাবা সহ ওকে নিয়ে জরুরি একটা মিটিং হয় অফিসে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় যে অয়নের প্রকৃত খুনী ধরা না পড়া পর্যন্ত অরণ্য নিজের পরিচয় গোপন রাখবে। এতে অপরাধী ধরা যেমন সহজ হবে সাথে ওর নিজের এবং পরিবারের উপর থেকেও নতুন করে বিপদ ঘটার সম্ভবনা কমে যাবে। সেই সাথে অফিস থেকে অরণ্যকে এই নির্দেশও দেয়া হয় যে ওর পরিবারের কাছে যেহেতু অরণ্য অয়নের মৃত্যু সংবাদটা গোপন রেখেছে সেহেতু ওর পরিবারের সদস্যদের কাছেও ব্যাপারটা গোপনই থাক। একমাত্র ওর বাবা রায়হান সাহেবই এই ঘটনাটা পুরোপুরি জানেন আর তিনিও অঙ্গীকারবদ্ধ যে তিনি ব্যাপারটা দ্বিতীয় কাউকে জানাবেন না। এমনকি অনুমতি ছাড়া তিনি তার স্ত্রীকেও ব্যাপারটা বলতে পারবেন না।
এই কথাগুলো সেই সময় এত যৌক্তিক মনে হয়েছিল যে, অরণ্য ওর উর্ধতন কর্মকর্তাদের সামনে সে সময় কোন কথাই বলেনি, তারা যা বলেছেন ও সেটাই মেনে নিয়েছিল এক বাক্যে।
পুরো ঘটনাটা নিঝুমের উপর কী প্রভাব ফেলবে তার কোন চিন্তাই তখন ওর মাথায় ছিল না। অয়ন ছাড়া বাকি সব কিছু তখন ওর কাছে তুচ্ছ মনে হচ্ছিল।
কিন্তু বাস্তব বড়ো কঠিন। আর সময়েরও অসীম ক্ষমতা। এক সময় একটু একটু করে নিজের চারপাশের জগৎটাকে আবার চেনা লাগতে থাকে অরণ্যর। আর তখন নিঝুমের অভাবটা খুব বেশি অনুভব হতে থাকে। ওর আম্মু যেভাবেই হোক... পাগলপ্রায় অবস্থাতেও ওর সাথে আছে কিন্তু নিঝুমের জীবনে যেন প্রলয় ঘটে গেছে। আর প্রলয়টা ও নিজে ঘটিয়েছে। অয়ন মারা যাবার পর এই কয়েকটা মাস ওর কাছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাবাসের মতো লাগছিল। অরণয় যেন ঠিকমতো দমও নিতে পারছিলনা। এক বাবা ছাড়া আর কারও কাছে নিজের মনের ভার হালকা করার কোনো উপায় অরণ্যর ছিলনা। মাঝে মাঝে খুব সতর্কতার সাথে কেবল পার্থর সাথে আলাপ হয়... এই যা। নিজের স্ত্রীর সামনে ভিন্ন একটা চরিত্রের মুখোশ ধরে রাখতে অরণ্যকে অমানুষিক কষ্ট করতে হচ্ছিল। বিয়ের দিন রাগে, অভিমানে ওর বুকের ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছিল। আর কটা দিন অপেক্ষা করলে কী এমন ক্ষতি হতো ওর শাশুড়ির। অয়নের নামে বিয়ের অনুষ্ঠানটা করতে গিয়ে অরণ্যর চোখে পানি এসে যাচ্ছিল। শান্তি করে বউটাকে বিয়ে করাও ওর কপালে নেই।
"কি হলো সর আমি শোব," নিঝুমের বকা খেয়ে একটু সরে বসল অরণয়। সেটা দেখে নিঝুমের মেজাজ আরও চড়ল। ইমোশনাল সব কথা শুনিয়ে নিজের পাপ ঢাকবে, এতো শস্তা। আর সব কিছু মাফ করে দিত ও কিন্তু ওই অহনাকে চুমু... জীবনেও না। এক লক্ষ্যটা নাকে খত দিলেও না। অসভ্য,শয়তান, বিশ্বাসঘাতক কোথাকার। কত্তো বড়ো সাহস ওর সামনে চোখমুখ চুবিয়ে চুবিয় চুমা খাচ্ছিল ওই শয়তান মেয়েটাকে। জিন্দেগীতেও মাফ করতে পারবে না নিঝুম, কক্ষনো না।
"অয়ন, তুমি তোমার ঘরে গিয়ে শোও যাও।"
বেড সুইচটা অফ করে শুয়ে পড়ল নিঝুম। এক সময় ঝিমুনিও এসে গিয়েছিল কিন্তু গলার কাছে সুরসুরি লাগায় চোখ খুলে দেখে ফাজিল লোকটা ওর গলার কাছে নাক ঘষছে হুলো বেড়ালের মতো।
"তুমি এতো বেহায়া কেন বলতো? বার বার বালিশ টেনে ফেলে দিচ্ছি তাও তুমি আবার আসছো।"
"তো আমার নতুন বউ নিয়ে হানিমুনে আসছি, বউয়ের কাছে যাবো নাতো কই যাবো?"
দূরে সরার কোন লক্ষন অরণ্যর মধ্যে দেখা গেল না।
"এক সেকেন্ড... কার সাথে কই আসছ তুমি!"
"আরে তুমি না বললা অয়ন তুমি রুমে যাওতো। কিন্তু গতরাত থেকে তো বউয়ের সাথে আমি রিলেশন করে ফেলসি ফিজিক্যালি, তো অন্যরুমে শোব কেন বলো?" অরণ্য মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। এইবার ঝুম আরও ক্ষেপবে।
নিঝুমের মনে হলো শয়তান ব্যাটার চুলগুলা সব পট পট করে ছিড়ে টাকলা বানিয় দেয় ও। অসভ্য, ভাওতাবাজ, বেঈমান। ওর হানিমুন করা দূরে থাক পুরা মাথাটাই যেন একটা মুন হয়ে যায়। ওর সাথে মামাদোবাজি করতে এসেছে.... কত বড়ো সাহস।
"তুমি এক্ষুনি বিছানা থেকে নামবা না আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাব?" নিঝুমের এবার রাগে গা হাত পা ঝনঝন করছে। মনে হচ্ছে ঘন্টা হয়ে ঢংঢং করে বেজে উঠে... অসহ্য, একদম অসহ্য এই লোকটা।
"বাসা থেকে তোমাকে বের হতে দিবেটা কে শুনি? " অরণ্য ফ্যাসফ্যাসে স্বরে বলে উঠল। ওর এখন নিঝুমকে লাল টমেটোর মতো খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে.. শরীর কথা বলতে শুরু করেছে।
"সে আমি বুঝব। বেশি তেরিবেরি করলে ওই ফ্যানে ঝুল খাবো আর ডাইরেক্ট উপরে ফ্লাইট নিব।"
নিঝুম কথার পিঠে কথাটা বলল। কিন্তু তার প্রভাব এতো ভয়ঙ্কর হবে নিঝুম ভাবেনি।
"নিঝুম" অরণ্য এবার সত্যি একরকম গর্জন করেই উঠল।
ভয়ে থতমত খেয়ে চুপ হয়ে গেল নিঝুম। অরণ্য এত জোরে আগে কোনদিন ওকে ধমক দেয়নি, কী রকম রাগ হয়ে গিয়েছে বাবা!
"যা খুশি করো... যেখানে খুশি ঝোল,"
বালিশটা টেনে নিয়ে খালি কার্পেটের উপর পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল অরণ্য।
কিন্তু ধমক খেয়ে নিঝুম কেমন বিমূঢ় হয়ে বসে রইল। এতো আজব ব্যাপার... ও অরণ্যকে ধমক দিবে কী উল্টো অরণ্য ওকে ঝাড়ছে। আবার রাগ দেখিয়ে সাহেব খালি কার্পেটে গিয়ে শুয়েও পড়েছে।
শুকগে আমার কী? যেমন কর্ম তেমন ফল তো হবেই। কিন্তু লাইট অফ করার পরও স্বস্তি পেল না নিঝুম। একদম একটা চাদর ছাড়া নিচে শুল অরণ্য, যদি গা চুলকায় কার্পেটে। আর যদি গায়ের উপর দিয়ে তেলাপোকা, ইঁদুর এগুলো দৌড়াদৌড়ি করে? হায় হায় অরণ্যর নাকে, মুখে যদি হঠাৎ কামড় দেয় ওগুলো? ধড়মড় করে উঠে বসল নিঝুম, লাইটটা জ্বালিয়ে দেখল অরণ্য ওই খসখসে কার্পেটের উপরই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।
কেন যেন খুব কান্না পাচ্ছে নিঝুমের। এত্ত এত্ত রাগ হচ্ছে লোকটার উপর কিন্তু আবার খুব মায়াও হচ্ছে। নিঝুম ঠিক কী করবে বুঝে উঠতে পারলনা। ও ভাবতেই পারছেনা ওর হারিয়ে যাওয়া মানুষটা সত্যি সত্যি ওর কাছে ফিরে এসেছে। ও ইচ্ছে হলেই এই মুহূর্তে অরণ্যর নাক,মুখ, চুল সব... সব স্পর্শ করতে পারে। এই অনুভূতি ও প্রকাশ করতে চাইছে, চিৎকার করে আনন্দে উল্লাসে বাঁধন হারা হতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু পারছেনা। কিন্তু কেন যে পারছেনা...........
.................................................
ঘনকালো অন্ধকার তার মধ্যে কিছু একটা খুব ধীরে ধীরে অরণ্যর গালটা ছুঁয়ে গেল। জিনিসটার গা খুব রোমশ, হাত দিয়ে দেখার আগেই আবার চট করে সেটা সরে গেল পাথরের আড়ালে। অরণ্যর মনে হলো ও এই গুহার ভিতরে বেশ অনেকটা সময় আগে ঢুকেছে। ও যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে ওর কোমর অব্দি পানি। গুহার ভিতর দিয়ে একটা ঠান্ডা পানির ধারা কূল কূল বইছে যেটা উপরের কোন ঝর্ণা থেকে আসছে। কিন্তু এই অন্ধকারে গুহার ভিতরেো ও একা, না ওর সাথে আরও কেউ আছে বুঝতে পারছেনা অরণ্য। কিন্তু ওর অস্বস্তি হচ্ছে.. মনে হচ্ছে কেউ একজন ওত পেতে বসে আছে ওর আশেপাশেই শিকার ধরবে বলে।
নিজের অজান্তেই অরণ্য ওর পিস্তলটা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালো কিন্তু ওর পকেটটা এমন অদ্ভুত আকৃতির কী করে হলো ওর মাথায় আসলো না। অরণ্য যতই হাতরাচ্ছে নরম মাংসল কিছু একটা ওর হাতে লাগছে। জিনিসটা কী অক্টোপাস ধরনের কিছু অথবা জোঁক? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে অরণ্য। কিন্তু ও তো আর সমুদ্রের নিচে নামেনি... আর জোঁক এত বড়ো হয়না। কিন্তু এই গুহা, এটাই বা কোথায়? গুহায় ঢোকার আগে অবশ্যই ওর একটা ছুরি নিয়ে ঢোকা উচিত ছিল মনে হতেই ভীষন আফসোস হলো অরণ্যর।
নরম জিনিসটা ওর গায়ের একদম উপরে উঠে আসার আগেই শক্ত হাতে ওটাকে চেপে ধরতে গেল অরণ্য.. কিন্তু তাতে হাতে ভীষন জোরে একটা কামড় খেল ও।
পরের মুহূর্তে তীব্র এক ব্যাথা নিয়ে লাফিয়ে উঠে বসল অরণ্য। কোথায় গুহা, কোথায় পানি? সামনে নিঝুম বড়ো বড়ো চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
"সরি.. সরি।। বেশি জোরে লেগেছে?"
নিঝুম কন্ঠে উৎকন্ঠা... ও আসলে অরণ্যকে ঠেকাতে না পেরে কামড় দিয়ে দিয়েছে হাতে।
"জোরে লেগেছে মানে! মাংস তো মনে হয় ছটাক খানিক খেয়ে ফেলেছ এক কামড়ে। তুমি মানুষ না বাঘ.. বাপরে?"
"আরে আমি তো চুপ করে ঘুমাচ্ছিলাম। তুমি তো আমার ম্যাক্সির ভিতরে হাত ঢুকিয়ে কী সব খুঁজে বেড়াচ্ছিলে। আমি যত জিজ্ঞেস করছি তুমি কী খুঁজছো তুমি খালি চেপে ধরছ। আমি ব্যাথা পাচ্ছিলাম, ভয়ে আমার দম আটকে আসছিল যে তুমি যদি হঠাৎ আমাকে ঘুষি দিয়ে বস পেটে তখন বাবু তো ওখানেই মারা যাবে। তাই আমি তোমাকে ঠেকাতে না পেরে হাতে কামড় দিয়ে দিয়েছি। "
"তাই বলে এতো জোরে, আমার তো আরেকটু হলে হার্ট অ্যাটাক হতো।"
"অ্যাই বাজে কথা বলবা না.. আমার এমনি ভয় করছে।"
"ভয় কেন? " অরণ্য সাথে সাথে ওর বালিশের নিচ থেকে সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু পিস্তলটা বের করল। এবার ঠিক মনে পড়েছে, শোয়ার সময় বালিশের নিচে রেখেছিল পিস্তলটা।
" কোন অদ্ভুত শব্দ হচ্ছিল ঝুম ? কোনো হাটাহাটির আওয়াজ?"
"আরে না, এই কার্পেট এমন খসখসে যে ভীষন পিঠ চুলকাচ্ছিল আমার।"
এতক্ষণে অরণ্যর খেয়াল হলো যে,ওরা দুজনেই নিচে কার্পেটের উপর শুয়ে আছে। কিন্তু মহারানী হঠাত বিছানা ছেড়ে নিচে কেন?
"কী ব্যাপার ঝুম তুমি বিছানা রেখে এখানে কেন? নিচে এই ভারী শরীর নিয়ে শুতে তোমাকে কে বলেছে? " রাগী স্বরে জানতে চায় অরণ্য। ওর আসলেও রাগ হচ্ছে এখন, মেয়েটা একদম ইচ্ছেমতো চলে কোন বারনই শোনেনা। বিয়ের আগের নিঝুম আর এখনকার নিঝুমের মধ্যে এত পার্থক্য হলো কী করে?
অরণ্যর ভারী কন্ঠ শুনে ঘাবড়ে গেলো নিঝুম। অত বকাবকি করছে কেন লোকটা ওকে একটু পর পর। পচা একটা লোক। এতোদিন ওকে কত্ত কষ্ট দিল,তারপর এখনও কী তার ব্যবহারের ছিরি...তারপর আবার চুন থেকে পান খসলে কথায় কথায় ওকে ধমক দিচ্ছে।
"নিষ্ঠুর...পচা একটা লোক," মুখ ভেঙচে উঠে নিঝুম।
"আর তুমি সেই পচা লোকের জন্য রাস্তার পাগল হচ্ছিলে।"
"জীবনেও না। জোর করে ওই ব্যাটারা বিয়ে না দিলে তোমার সাথে আমার বিয়ে জন্মেও হতো কিনা সন্দেহ।"
"ঠিক আছে তাহলে ঢাকায় যাই চলো, তুমি তোমার ওই কাজিন কী যেন নাম ফাহমিদ না কি একটা ওকে নিয়ে সংসার কর আর আমি দেখি.."
"দেখি মানে! তুমি কী দেখবা আবার? আর আমার কাজিনের নাম ফাহিম।"
"বাহ্ তুমি বিয়ে করবা তো আমি কি বসে বসে আঙ্গুল চুষব, আমার সংসারের দরকার নাই?"
"তারমানে তুমি আরেকটা বিয়ে করবা! তুমি এত বড় কথা আমার সামনে বলতে পারলা? "
"তো কী করব, তুমি তো আমাকে জন্মেও বিয়ে করতানা নিজেই বললা।"
"তো বলছি তো বলছি, বললেই সব কথা এতো ধরতে হবে নাকি।"
" তো কী করব... তুমি তো সব কথাই ধর আমার। সব কিছুতেই আমার দোষ। সেদিন মলে তোমার জন্য অতক্ষণ ওয়েট করতে না হলে অয়ন হয়তো সেদিন গুলিটা খেতই না।"
"ওহ, তারমানে এখন সব দোষ আমার। তাই তো? ভাল, খুব ভাল। যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর, আমি বুঝতেছিনা ঝুম কোনটা আমার হলুদের আর কোনটা বিয়ের পাঞ্জাবি," নিঝুম অরণ্যর সেদিনের কথাগুলোকেই অনুকরণ করে বলল।
নিঝুমের কথাটা একদম খাটি সত্যি, নাকের মাথা চুলকাতে চুলকাতে এর কী জবাব দেয়া যায় এবার ভাবছিল অরণ্য, কিন্তু নিঝুম নিজেই রনে ভঙ্গ দিল।
"অরণ্য... "
অরণ্য উত্তর দিল না। আজকাল নিজেকে সত্যি আাসামী মনে হয় ওর। ওর ভুলের জন্যই সবটা হয়েছে। ও সবার আসামী.. মায়ের কাছেও, বউয়ের কাছেও।
কিন্তু নিঝুমের গলা হঠাৎ এমন লাগছে কেন, কেমন দুর্বল। এই তো বেশ ওর সাথে ঝগড়া করছিল। তাহলে?
" ঝুম তোমার কী অসুস্থ লাগছে? "
"না... কিন্তু তোমার ভাষ্যমতে তাহলে তুমি সত্যি অহনাকে ভালোবাস না?"
"ঝুম সত্যি কী আর মিথ্যা কী আমি কোনভাবেই তোমাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে এখনো ভালবাসিনা। এর বাইরে আপাতত আর কিছু জানিনা, তাই আর কিছু বলবোও না," অরণ্য দৃঢ় কন্ঠে জবাব দিল।
"হমম" বহুদিনের আটকে থাকা একটা দীর্ঘনিশ্বাস যেন নিঝুমের বুক চিরে বের হয়ে আসে।অরণ্যর কথাগুলো ওর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে, মনে হচ্ছে অরণ্যর কথাগুলো বোধহয় সত্যি।
"ঝুম আমি এই মেয়েটাকে অনেক আগে থেকে চিনি, কলেজ থেকে।"
অরণ্য শান্ত স্বরে বলে উঠল।
"মানে? কী বলছো? "
নিঝুম অবাক, বলে কী অরণ্য। কলেজ থেকে চেনে? তাহলে তো পুরানো প্রেম।
"ওর আসল নাম অহনা নয়। ওর নাম রাস্না। ও আর আমি একসাথে প্রাইভেট পড়তাম শফিক স্যারের কাছে। অয়ন, ওকে চিনতে পারেনি কারন ও আলাদা শিফটে পড়তো। আমি সকালে করতাম কারন আমার ক্রিকেটের নেশা ছিল। তাই বিকেলে পড়তে বিরক্ত লাগত। আর অয়ন সকালে লেটে ঘুম থেকে উঠতো। তাই ও বিকেলের শিফটে করতো। রাস্না মানে অহনা ও তখনও আমার পিছনে একবার লেগেছিল। আমার জাস্ট বিরক্ত লাগত ওকে, একদম গায়েপড়া ভাব । ওর নামে আমি একবার সোজা স্যারের কাছে কমপ্লেন করেছিলাম। পরে স্যার আমাকে বুঝিয়ে বিকেলে অয়নের সাথে আসতে বলে দিলেন। এই মেয়ের ফ্যামিলি ভাল না,ক্ষমতাওয়ালা পরিবারের উচ্ছন্নে যাওয়া সন্তান। ওর সাথে তখনো অনেক টাকা থাকত, নেশা ফেশাও করতো কিনা জানিনা। "
"তারপর?" উত্তজনায় গলা কাঁপছে নিঝুমের। এ আবার কেমন বিপদের কথা বলছে অরণ্য।
"তারপর আর জানিনা, অনেক বছর পরে টিএসসির সামনে দেখেছিলাম দুই তিনটা ছেলের সাথে একবার। নিজেই এগিয়ে এসে কথা বলেছিল আমার সাথে। আমি তখন বাসায় ফিরছি, দু একটা কথা বলেই চলে এসেছিলাম।"
"তখন তোমার সাথে অয়ন ছিল না? "
"না, আসলে আমরা দুইভাই বাসায় যতটা ক্লোজ ছিলাম, বাইরে আমাদের সার্কেল কিন্তু একেবারে আলাদা ছিল বলা যায়। আমাদের কমন ফ্রেন্ড খুব হাতে গোনা কয়েকজন।"
" কিন্তু ওই মেয়েকে অয়ন কলেজে থাকতে দেখেনি? চিনতনা ওকে?"
" জানিনা... আমি আসলে ওদের কিভাবে ঘনিষ্ঠতা হয়েছে সেটা জানিনা কিন্তু আমি কখনও অয়নকে বলিনি যে এই মেয়ে আমার পিছনে লেগেছিল। আর এখন যখন ওর সব জানতে পেরেছি তখন দেখি বিরাট ইতিহাস। ঝুম ওই মেয়ে অনেক বিপদজনক। ও বড় মাপের চর রাইসুলের আর বিশ্বস্তও। মেয়েটা সাথে আর্মস রাখে। আমরা ধারনা করছি ও রাইসুলের পরিবারের কেউ হতে পারে। রাইসুলের ভাইয়ের সাথে রিলেটেড কিছু।" অরণ্যর কথায় এবার নিঝুমের ভয় করতে লাগলো। অরণ্য সাধারনত এ ধরনের কথা ওকে বলে না।
"অরণ্য আমার খুব ভয় করছে," নিঝুম প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে অরণ্যর বুকের সাথে মিশে গেল। যা একটু শান্তি ছিল তাও গেল। ওই মেয়ের কাছ থেকে অরণ্যকে ও এখন বাঁচাবে কী করে?
"না, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তোমার অরণ্য তোমার আর বেবির কিচ্ছু হতে দিবেনা, একবার অসর্তক ছিলাম বলে বার বার সেই সুযোগ তো ওদের আমি দিবনা। আমার প্রফেশনাল ব্যাপারকে ওরা ব্যাক্তিগত বানিয়েছে, এবার ওরা আমার পিছু নিবেনা ঝুম, এবার আমি ওদের পিছু নিব। আমার সব প্ল্যান রেডী, শুধু তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা ঝুম।"
অরণ্যর কথায় স্বস্তির বদলে দুশ্চিন্তা আরও বেশি করে আকড়ে ধরল নিঝুমকে। অরণ্যর শার্টের কলার আরও জোরে মুঠির মধ্যে আকড়ে ধরল ও। অরণ্য আবারও শয়তানগুলোর পিছু নিবে, আবারও সেই হারিয়ে ফেলার ভয়... উহহ।
"আরে এই বোকা মেয়ে, আরে ..... আমি তো মনে করলাম আমার মৃত্যু সংবাদের ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে যে মেয়ে সে এখন অনেক শক্ত কিন্তু এতো দেখছি ফ্যাত ফ্যাত করে খালি কাঁদে। "
"অরণ্য আমাকে খুব শক্ত করে তোমার বুকে আঁকড়ে ধরবা প্লিজ। "
নিঝুমের কথায় অরণ্যর মন খারাপ হলো। নিঝুম সত্যিই ভয় পেয়েছে। ভয়ে কুঁকড়ে আসছে সে ওর বুকের মধ্যে। পরিবেশটা হালকা করার জন্যই অরণ্য বলে উঠল," আমি যা শুনছি সব ঠিক শুনছি তো ? আমার কিন্তু বউয়ের বিছানায় বসাও নিষেধ। কারফিউ জারি হয়েছে আমার উপর।"
অরণ্যর বিশ্বাস ছিল যতই রাগ করুক ঝুম ওকে ছেড়ে বেশিক্ষণ দূরে থাকতে পারবেনা। কিন্তু তাই বলে ও এতো তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবে সেটা অরণ্য একদমই ভাবেনি।
"না কারফিউ উঠিয়ে নিলাম, কিন্তু হরতাল দিয়েছি। "
"মানে?"
"মানে হরতালে চুমু দেওয়া অ্যালাউ না। "
"কি! "
"হমম..."
"এই হরতাল কতদিনের জন্য?"
"যতদিন না আমি ওরকম ঠোঁট চুবিয়ে চুবিয়ে অন্য একটা ছেলেকে তোমার সামনে চুমু খাবো ততদিন। " নিঝুম মিষ্টি করে হেসে উত্তরটা দিল।
"কী? তো... তোমার মাথা খারাপ! তুমি অন্য একটা ছেলেকে চুমু খাবা? ওরকম হলে আমি ওই ছেলেকে জায়গায় মেরে ফেলব।"
"না ওরকম কিছু হলে সারা জীবনের মতো হরতাল ডাকব।"
"ঝুম বি সিরিয়াস,এটা একটা কথা হলো। আরে মানুষ বিয়ের আগে এখন একশটা গার্লফ্রেন্ড বানায়, তাদের সাথে কত কিছু করে, আমি দুধের বাচ্চা একটা ভুল করছি, আমাকে এতবড় শাস্তি কেন দিবা বলো? তাওতো আমি চারমাস ধরে তোমাকে ছুঁইও নাই।"
"সেজন্যও তোমার শাস্তি হওয়া উচিৎ, তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসোনা এটা তার প্রমান।"
"ঝুম আমি কিন্তু প্রতিদিন বিয়ের আগের রাত পর্যন্তও তোমাকে রাতে যেয়ে দেখে আসতাম। যেদিন কেও থাকতনা, জানালা খোলা থাকলে ঢুকতাম, যেদিন পারতাম না, সেদিন জানালা দিয়ে দেখে চলে আসতাম।" অরণ্যর সহজ স্বীকারোক্তি।
"চোর কোথাকার," নিঝুম হেসে ফেলল, বেশ হয়েছে। আরও করো লুকোচুরি। এজন্যই ওর মনে হতো অরণ্য ওর আশেপাশেই আছে। আশ্চর্য... অরণ্য সত্যিই আছে, এই যে ওকে জড়িয়ে ধরে আছে, শক্ত করে, এই যে ওর কপালে আদর দিচ্ছে।
চলবে......
Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top