৩২

"নিঝুম, এখান সিগনেচারটা কর মা," শাহেদ, নিঝুমকে কাগজের ফাঁকা জায়গাটা দেখিয়ে দিলেন।

নিঝুম বাবার দিকে খুব খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

" ওমা এই একই কাগজে কয়বার করে সিগনেচার করব বলতো বাবা?"

"এই শেষবার কর মা , এর পর আর করা লাগবে না। "

"সত্যি বাবা?"

"একদম সত্যি।"

নিঝুম অধৈর্য ভঙ্গিতে দস্তখত করতে গিয়ে থমকে গেল,"কিন্তু বাবা, এখানে অরণ্যর নাম কই? এটা তো অয়নের নাম লেখা। বাবা এখানে অয়নের নাম কেন লেখা? তোমাদের কী মাথা খারাপ, আমি অয়নকে কেন বিয়ে করব ? "

নিঝুম উত্তজিতভাবে কাগজটা নিয়ে প্রায় দুটুকরো করতে যাচ্ছিল, কিন্তু রুমানার এক  চিৎকারে ও  ওখানেই থেমে যেতে বাধ্য হলো।

"তুই কী চাস বলতো? তোর বাচ্চাটা একটা অনাথের জীবন কাটাক? আর তুই যদি বলিস যে তুই একাই ওকে পালবি, তাহলে আমি সেটা কখনই হতে দিব না। তুই অরণ্যর সাথে একদিনও সংসার করিস নি, সামাজিক ভাবে বিয়েও হয়নি।তাহলে এই বাচ্চার বাবার নাম কী করে বলবি তুই মানুষের সামনে? আর আমরা বাবা- মা হয়েই বা সেটা কী করে মেনে নিব। হয় তুই অয়নকে এক্ষুনি বিয়ে করবি, আর তা না হলে এই বাচ্চার মুখ তুই কোনদিনও দেখবি না।"

"আহ্ রুমানা থাম না, আমি বোঝাচ্ছি ওকে," শাহেদ, রুমানাকে বাধা দিলেন।

"আর কত বোঝাব বলতো? কী কুক্ষনে যে ওই বিয়ের প্রস্তাবটা বাসায় এসেছিল," রুমানা রাগে বিরবির করতে করতে লাগলেন, তার সব রাগ গিয়ে  নিঝুমের বড়ো ফুপু দিলারার উপর পড়ল। উনার কথাতেই আজ এই অবস্থা নিঝুমের।

"কিন্তু বাবা.... "

"নিঝুম... মা, আমার কথাটা ভাল করে শোন। দেখ অয়নকে বিয়ে করলে তোর বাচ্চাটা ওই বাড়ির নামের সাথে সাথে ওর দাদা দাদীর পর্যাপ্ত ভালোবাসাও পাবে, আর অরণ্য নেই এই সত্যটা আজ অথবা কাল তোকে মেনে নিতেই হবে। এখন তুই একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ, অয়নের চেয়ে ভাল বাবা তুই তোর বাচ্চার জন্য কোথায় পাবি? আর সময় চলে গেলে অয়ন যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেয়, তখন তোর হাতে কিছুই থাকবে না। আর তোর মার সাথে এইবার আমি কোন বিরোধিতা করব না, কারন এবার তোর মা শুধু তোর একার না, পরিবারের সবার কথা চিন্তা করেও কথাটা বলেছে। এখন তুই যদি অয়নকে বিয়ে না করে ফাহিমের প্রতি আগ্রহী হোস তাহলে অবশ্য ব্যাপরটা ভিন্ন আর তাতেও আমাদের কোন আপত্তি নেই কিন্ত হয় অয়ন নইলে ফাহিম, যে কোন একজনকে তোমার বেছে নিতে হবে আর সেটা এক্ষুনি।"

বাবার কথায় নিঝুম পুরো ভেঙ্গে পড়ল।
ওর জন্য কী তাহলে সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে? অরণ্য সারাজীবন ওর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এভাবে পথের মাঝে ফেলে গেল কেন ওকে? কেন...........?

চোখে ঝাপসা দেখতে দেখতেই এইটুকু জীবনে দুইবার বিয়ের কাগজে দস্তখত করল নিঝুম।

পাশের রুমে তখন বিষন্ন মনে বসে আছে অয়ন।
নিঝুম কী সিগনেচারটা সত্যি করে দিল? চোখের কোল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে ওর। ছেলেদের কাঁদতে নেই। কিন্তু কেন যেন কোনোভাবেই নিজেকে ঠেকাতে পারছেনা ও। আস্তে করে সবার অগোচেরে সেটা মুছে ফেলল ও। সমস্ত পৃথিবীটা এই মুহূর্তে ভীষন...  ভীষন অসহ্য লাগছে... বাবা বলেছে নাটকের বিয়ে, কিন্তু তারপরেও তো বিয়ে। নিজেকে প্রচন্ডভাবে প্রতারিত মনে হচ্ছে ওর ,কিন্তু এতে নিঝুমের এক ফোঁটা দোষ নেই এটাও ওর চেয়ে ভালো আর কেউ জানেনা।

দুইজন মানুষ সম্পূর্ণ ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই বন্ধনে আবদ্ধ হলো বা হবে। আচ্ছা ওর নিজের কথা থাক, নিঝুম এখন কী করবে? অরণ্যকে এত সহজেই ভুলে যেতে পারবে নিঝুম? অয়ন আর অরণ্য তো এক নয়, চেহারায় ওদের যতই মিল থাক না কেন।

নিজের উপরই এখন মায়া লাগছে ওর। কলের পুতুলের মতো হয়ে গেছে জীবন। নিজের বলে আর কিছুই নেই, সব এখন অন্যের ইচ্ছার অধীন। এক টুকরো শান্তি বাকি ছিল ওর সেটাও আজ থেকে নাই হয়ে গেল। এখন থেকে ওকে ক্রমাগত শুধু ভালো অভিনেতা হওয়ার অভিনয় করে যেতে হবে, কোনভাবে যদি এই ফাঁদ থেকে মুক্তির উপায়টা ওর জানা থাকত।

আজ কান্না হাসি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে, যে মেয়েটাকে কষ্ট দেওয়ার কথা ভাবতেও ওর কষ্ট লাগে তাকে আজ থেকে সীমাহীন কষ্ট দেবে ও,ভাবতেই দমটা বন্ধ হয়ে আসতে চাইল.. অসহ্য।

.................................................

রাতের অনুষ্ঠানের জন্য আইভরি রঙের একটা শাড়ি পরেছে রুমানা। আইভরি জমিনের সাথে রূপালি পাড়ের কম্বিনেশন... বেশ মার্জিত লাগছে তাকে। পুরো শাড়ি জুড়ে ছোট ছোট রুপালি রঙের পুতির কাজ। শাড়ির সাথে ম্যাচ করে একসেট মুক্তোর গয়নাও পড়েছে সে। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে এই মূহুর্তে নিজেকে খুব সুখি একজন মানুষ বলে মনে হচ্ছে ওর...  সত্যিই আজ দারুন খুশি সে।

প্রায় দুই হাজার লোকের খাবারের ব্যাবস্থা করা হয়েছে আজ দুই বাড়ি মিলিয়ে। রুমানার পরিবারেরও সবাই এসেছে, কেবল ফাহিমের মাই আসেনি। কিন্তু রুমানা কী করবে? সে অনেক চেষ্টা করেছে এর মধ্যেই, কিন্তু অরণ্যর মা শেষ পর্যন্ত অয়নকে রাজি করিয়েই ফেলছেন। আর ফাহিম যতই বলুক না কেন, ফাহিমের মা এই বাচ্চা মেনে নিতেন না। রুমানা অনেক সময় প্রয়োজনের তুলনায়  মেয়ের সাথে রূঢ় আচরন করেন, কিন্তু তারমানে এই নন যে তার মেয়ের বাচ্চার প্রতি তার কোনে টান নেই। নিঝুম যদি ফাহিমকে বিয়ে করত তাহলে নিঝুমের বাচ্চাকে তারা নিজেদের কাছে মানুষ করতেন। কিন্তু এখন অয়নের সাথে বিয়ে হলে সে ব্যাপারটা আর রইল না, তবে তার বোন তার উপর নাখোশ হয়ে রইল এই আর কি...

"কী ব্যাপার রুমা, একা একা কি এত বকছ নিজের সাথে," শাহেদের ডাক শুনে একটু হাসলেন রুমানা। শাহেদ ভাল মুডে থাকলে তাকে রুমা ডাকেন।

"আজ অনেকদিন পর মনে হচ্ছে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারব।"

রুমানার কথায় শাহেদও মাথা নাড়ল।

"নিঝুমের বিয়ে এভাবে হবে ভাবিনি কখনো। কত শখ ছিল মেয়ের বিয়ে নিয়ে,কিছুই হলো না," শাহেদের কথায় রুমানার মনটা আবারও বিষন্ন হয়ে গেল।

"আমাদের কপালটাই খারাপ, এখন আশুর বিয়েতে যদি সেই শখটা মিটে তাতেই আমাদের সাত কপালের ভাগ্য বলতে হবে।"

"হ্যাঁ.... তাই। আচ্ছা চল এখন, মেহমান সব চলে এসেছে। আর আশুকে বলো নিঝুমকে পারলে আগে একটু খাইয়ে দিক, ও বাড়িতে গিয়ে কে কখন খাইয়ে দেবে তার তো কোন ঠিক ঠিকানা নাই, তাই না?"

প্রথমবারের মতো রুমানার বুকের কোনে একটা মোচড় লাগল। অরণ্য মারা যাবার সংবাদ শুনে আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল ওদের মাথায়। পরিবারের মানসম্মানের চিন্তাতেই তখন মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল ওদের সবার, এত আদরের মেয়েটা একেবারে জন্য পরের ঘরে চলে যাবে এটা একটুও  বিচলিত করেনি রুমানাকে। কিন্তু এখন শাহেদের কথায় রুমানার দু'চোখ ভিজে এল । সত্যিই তো নিঝুমকে কে খাইয়ে দেবে এত খেয়াল করে, ওতো একা একা কিছু খেতেও চায় না। অরণ্য হলে আলাদা কথা ছিল, কিন্তু অয়ন কেমন ব্যবহার করবে নিঝুমের সাথে সেটা তো ওরাও জানেন না। মেয়ে যে তার কত বড়ো বিপদ ডেকে এনেছে এক লুকোচুরি খেলা খেলতে গিয়ে... বুক ভারী হয়ে আসে রুমানার।

.........................................................

আসমা অপলকভাবে নিঝুমকে দেখছিলেন। তার আজ কেমন লাগছে তিনি বলে বোঝাতে পারছেন না। নিঝুমকে কী অদ্ভূত সুন্দর লাগছে,বিয়ের শাড়িটাতে।

শাড়িটা অরণ্য অনেক পছন্দ করে কিনেছিল। তিনি অয়নকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন শাড়ির বিষয়ে,কিন্তু অয়ন কোনো আগ্রহই প্রকাশ করেনি,"মনমরা হয়ে বলেছে তোমার যা করতে মন চায় কর।"

অয়নের উত্তর শুনে তিনি নতুন করে একটা শাড়ি কিনেছিলেন। কিন্তু নতুন শাড়ি কিনেও, নিঝুমের শাড়ি দেবার সময় শেষ পর্যন্ত আবার এই শাড়িটাই হাতে উঠে এসেছে আসমার। বিয়ের জিনিস পাঠানের সময়ও হাউমাউ করে কেঁদেছেন তিনি, কিন্তু এখন খুব শান্তি লাগছে। নিঝুমের নাকের নথটা দেখে মনে হচ্ছে অরণ্য একবার যদি দেখতে পারতো নিঝুমটাকে, ছেলেটা ওর বৌয়ের এই মুখটা একবার দেখল না... কতটা না পাওয়া নিয়ে ছেলেটা তার ওপারে চলে গেল। আচ্ছা ওপার থেকে কী এপারে ছেড়ে যাওয়া মানুষগুলোকে মনে পড়ে? অরণ্য কী এখন দেখছে নিঝুমকে?

"ও পারে থাকবো আমি
তুমি রইবে এ পারে
শুধু আমার দুচোখ ভরে
দেখবো তোমারে

পরবে যখন মালার চন্দন
ঐ রাঙা চেলী আর ফুল ও রাখী বন্ধন
মিলন রাতের প্রদীপ হয়ে আমি
জ্বলবো বাসরে "

পুরো অনুষ্ঠান শেষ করে বাসায় নিঝুমকে নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে রাত প্রায় এগারোটা বেজে গেল আসমা-রায়হান দম্পতির। পরিবারের মুরুব্বীদের সাথে আলাপ পরিচয় পর্ব শেষে আসমা নিঝুমকে ঘরে চলো বলতেই.... নিঝুম একাই অরণ্যর ঘরে চলে গেল। আসমা পেছন থেকে নিঝুমের এই একা একা যাওয়াটা দেখছিলেন, বুকের ভিতরের উথলে ওঠা কান্নাটা বহু কষ্টে থামালেন তিনি। না আজ তিনি আর কাঁদবেন না, প্রমিস করেছেন তিনি নিজের কাছে। আজ তিনি তার অরণ্যর বউকে নিজের বাসায় নিয়ে আসতে পেরেছেন, আজ তার খুশির দিন।

নিঝুম অরণ্যর ঘরে পা দিয়েই চমকে গেল। খুব সুন্দর করে পুরো ঘরটা সাজান। অসংখ্য রঙ বেরঙের বেলুন দিয়ে এক পাশের দেয়ালে 'ওয়েল কাম ঝুম ' লিখা। বিছানায় ছোট বড়ো অনেক গুলো টেডি বিয়ার, টেবিলের পাশে একগুচ্ছ লাল গোলাপ শোভা পাচ্ছে। একরাশ ভাললাগা হঠাত করে ছুঁয়ে গেল নিঝুমকে। পায়ে পায়ে ও এগিয়ে গেল দেয়ালের দিকে। কতদিন কেউ ওকে ঝুম বলে ডাকে না, অরণ্য ওকে ভুলেই গেছে বোধহয়।

আসমা অরণ্যর ঘরটা আজ সুন্দর করে সাজানোর চেষ্টা করেছেন। তার অরণ্য বেঁচে থাকলে আজ নিশ্চই অনেক সারপ্রাইজ রাখত ওর ঝুমের জন্য। তার পক্ষে তো সবটা করা সম্ভব নয় তবে নিঝুমকে তিনি সত্যিই বড়ো ভালোবেসে ফেলেছেন। মেয়েটা শেষ পর্যন্ত যখন তার বাড়ির বউয়ের মর্যাদা পেয়েছে তখন তিনি ওর কোন রকম অযত্ন হতে দিবেন না। নিঝুম তার কাছে অরণ্যর আমানত, ওর কোনো অমর্যাদা তিনি বেঁচে থাকতে হতে দিবেন না।

"অয়ন "

দরজা ঠেলে অয়নের ঘরে ঢুকলেন আসমা।

"আম্মু কিছু বলবে?"

"হমম"

"বলো?"

"তুই কী আমার উপর খুব বেশি অসন্তুষ্ট বাবা? "

"এ কথা কেন? তুমি তো আমাকে জোর করনি আম্মু।"

"বাবারে তুই যত রাগ আমার উপর কর, কিন্তু নিঝুমকে কোনোদিন কষ্ট দিস না, এটা তোর কাছে আমার অনুরোধ," মায়ের কথায় এবার কম্পিউটার থেকে ঘাড় ঘোরাতে বাধ্য হলো অয়ন।

"আম্মু আমাকে কী তোমার এতই নিচু মনের আর দায়িত্ব জ্ঞানহীন মনে হয়?" প্রশ্নটা সরাসরি আসমার দিকে ছুড়ে দিল অয়ন। মায়ের কথায়  ও এখন হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছেনা।

" সবার সামনে নিঝুমের দায়িত্ব একবার যখন নিয়েছি তখন মরার আগ পর্যন্ত সেটা পালন করব। কিভাবে সেটা আমি জানিনা তবে করব এটা নিশ্চিত থাক।"

অয়নের কথায় এত দুঃখের মধ্যেও আনন্দ হলো আসমার। অনেক বড়ো মুখ করে সকলের সামনে  নিঝুমকে বাড়ির বউ করে নিয়ে এসেছেন তিনি। অয়নের কথা ভেবে মনে মনে খুব শংকিত ছিলেন এতক্ষন কিন্তু অয়নের উত্তর তার সব দুশ্চিন্তা যেন এক নিমেষে ধুয়ে দিল।

নিঝুম চুপ করে খাটে উঠে বসে আছে। আজ প্রথম বারের মতো অরণ্যর ঘরে রাত কাটাবে ও।  অথচ পঁচা লোকটার এখনও কোন খবর নাই। অরণ্য নিজে এক লেট লতিফ, আর নিঝুমকেও তাই মনে করে। মুখেই কেবল বলে, আমার ঘরটা তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে ঝুম, আর এখন বেলুন লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ? মিথ্যুক কোথাকার। আজ আসলে আচ্ছা করে ঝগড়া করবে ও অরণ্যর  সাথে। কেন নিজের নাম না দিয়ে বিয়ের কাগজে অয়নের নাম দিয়েছে ও? কত্তবড় সাহস। আসুক আজকে ঘরে সে... কত ধানে কত চাল বোঝাবে আজ নিঝুম ওকে।

সবাই নিঝুমকে পাগল মনে করে জানে নিঝুম, কিন্তু তাই বলে ওকি সত্যি সত্যি পাগল?

"মন্ত্রে যখন এক হবে দুটি মন
এক শুভ দৃষ্টিতে মিলে যাবে দু’নয়ন
ভালো লাগার আবেশ হয়ে আমি
থাকবো অন্তরে

ফুটবে যখন চৈত্র দিনের ফুল
আর সোহাগের নদী ভেঙে যাবে তার কূল
তখন আমি গানের পাখী হবো
দূর আকাশ পাড়ে "

                        গীতিকার - পুলক ব্যানার্জী।

চলবে.......

Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top