১৮

বলা নেই কওয়া নেই, কোথা থেকে ঝপাস করে এক মগ পানি এসে অরণ্যর মাথার উপর এসে পড়ল।

"আরে? এটা কি হলো?" অরণ্য বারান্দার এক কোনায় লম্বা কাঠের বেঞ্চের উপর বসে একটা পিচ্চি ছেলের সাথে কথা বলছিল। হঠাত মাথায় জোরে পানি পড়াতে ও প্রায় লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল।

পুরো ঘটনাটা দেখে পিচ্চিটা তার সবগুলো দাঁত বের করে হা হা করে হাসতে লাগল। অরণ্যর এরকম কাকভেজা চেহারা তাকে দারুন আনন্দ দিচ্ছিল।

"কি? " নিঝুমের ভিতরটা রাগে জ্বলে যাচ্ছে। অসভ্য, শয়তান একটা লোক। ছি.. ছি... কেউ নিজের বিয়ে করা বউয়ের সাথে এরকম বাজে ধরনের রসিকতা করে?

"তুমি আমার গায়ে পানি ঢাললে কেন? " অরণ্য অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল নিঝুমকে। ঝুমের মাথা কি খারাপ হয়ে গেল নাকি?

"আরে অয়ন একটু আগেই আপনার গায়ে পানি ঢালতে বলল যে, " নিঝুম চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বলল। পাঁজি লোক একটা... কি সুন্দর একটা ভোলাভালা চেহারা করে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হবে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেনা। অথচ... নিঝুম কিছুক্ষণ আগের কথা মনে করে কেঁপে উঠল। ও ভাল করে খেয়াল না করলে কি হতো?

"মানে? আরে.. " অরণ্য মহা বিরক্ত।

"কি মানে আরে? অয়ন বলল, এক মগ পানি নিয়ে ওই শয়তান ছেলেটার মাথায় ঢেলে দাও।তো আমি তাই করেছি।"

"অয়ন বলল মানে? আর পানি ঢালতো ঢালো, ওর বিছানায় ঢালো.. আমার মাথায় কেন ঢাললে ঝুম? "

রাজ্যের বিরক্তি নিয়েই উত্তর দিল অরন্য, কিন্তু বলেই চোখ বন্ধ করে ফেলল। এহ... সর্বনাশ করে ফেলল। এখন কি হবে?

"আমার মাথায় কেন ঢাললে ঝুম? আ..আপনি একটা মানুষ? মানুষ এত খারাপ হয়? মানুষের শয়তানি করার একটা মাত্র থাকে,আর আপনি, " নিঝুমের কাঁদো কাঁদো গলা শুনে অরণ্য এবার সত্যি ঘাবড়ে গেল। কি হলো? ঝুম কাঁদছে কেন? কোনো গড়বড় হয়েছে কি ? অয়ন কি কোনো ভাবে ওকে হার্ট করেছে? বকেছে ওর ঝুমকে ? কিন্তু তা তো হবার কথা না। কিন্তু প্যাচতো কোথাও একটা লেগেছে। কিন্তু এখন জিজ্ঞেস করারই তো সাহস হচ্ছে না অরণ্যর। ঝুমের চোখ অলরেডি বলে দিচ্ছে যে শ্রাবণের বারিধারা অঝোর ধারায় ঝরার অপেক্ষায় আছে।

"ঝুম শোনো....আরে," তাড়াতাড়ি নিঝুমের পাশে এসে দাঁড়াল অরণ্য। "আচ্ছা হয়েছেটা কি সেটাতো বলবে।"

"আমার কোনো কথা নাই আপনার সাথে," বলেই নিঝুম ভিতরে চলে যাচ্ছিল। অরণ্য প্রায় দৌড়ে গিয়ে নিঝুমকে থামাল। আবার আপনি বলছে মেয়েটা। কত কষ্ট করে লাইনে এনেছিল, গেল সব ভেস্তে। অরণ্য তোর কপালে ব্যাপক দুর্ভোগ আছে ছোকরা।

"আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে আর কখনো এমন কাজ করব না। এখন কি হয়েছে একটু ঝেড়ে কাশতো দেখি বউ.."

"কিছু হয়নি। তবে হলে আপনি বোধহয় খুব খুশি হতেন।"

"কি হলে খুশি হতাম? "

" আপনি একটা... ছি আরেকটু হলেই আমি অয়নকে চুমো দিতে যাচ্ছিলাম, ভাগ্যিস দেই নি।"

নিঝুমের কথায় অরণ্যর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। সর্বনাশ! বউ ওকে নিজে থেকে একটা চুমো দিতে যাচ্ছিল, আর সেটাও ওই ফাজিলটার ভাগ্যে গিয়ে জুটছিল? মেরে একদম তক্তা বানাত যদি ওর আদরটা অয়নের ভাগ্যে জুটত। কিন্তু কি এমন হলো যে নিশ্চিত ভাবে হওয়া ছক্কাটা হতে হতে হলোনা? হু চেঞ্জ দা গেম?

"তা কি জন্য থামলে? "

"তার মানে? "

"না মানে দুর্ঘটনাটা থামল কি ভাবে? "

অরণ্যর প্রশ্নে নিঝুম এবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। কি বেশরম দেখো। নিঝুম মনে করল কথাটা শোনার পর অরণ্য নিশ্চই খুব লজ্জিত হবে নিজের অপকর্মের জন্য অথচ এই লোক তো এখন চুমু রহস্য উদ্ধার করতে ব্যাস্ত। কি অসম্ভব খারাপ মানুষ।

"সমস্যাটা কি হয়েছে বলো, অয়ন কিছু বলেছে?"

"হ্যাঁ "

অরণ্যর এবার সত্যি সিরিয়াস হলো।
জমজ হওয়াতে মানুষ প্রায়ই ওদের উল্টোপাল্টা করে ফেলে। এই সুযোগ নিয়ে স্কুল, কলেজে অনেক দুষ্টামি করত ওরা দুভাই। স্যাররা তো বেশির ভাগ সময়ই বুঝতেই পারতনা কোনটা কে? এখন এটা এমনই সাধারন ঘটনা ওদের সাথে যে, কেউ ভুল করলে ওরা সেটা হেসেই উড়িয়ে দেয়। তাহলে অয়ন ঝুমকে বকল কেন? ঝুমতো জেনে বুঝে করেনি।

"কী বলেছে অয়ন?"

"আই লাভ ইয়্যু অনা "

"কী... অনা মানে?"

"তা আমি কি করে বলব? পুলিশ আপনি, আমি না।"

কথাটা বলেই হাটতে শুরু করল নিঝুম। ভাগ্যিস চুমুটা ও দিতে দিতে দেয়নি অয়নকে। কিন্তু দিয়ে দিল কি হত? কেলেংকারীর এক শেষ, নিঝুম তো আর কোনদিন মুখই দেখাতে পারতনা অয়নের সামনে লজ্জায়।

"ঝুম প্লিজ, আই অ্যাম সরি। আর কক্ষনো এমন হবে না। এখন বলতো অনাটা কে?"

" বলছি না আমি জানি না। আমি তো কাছে গিয়ে বসতেই আই লাভ ইয়্যু শুনে খুশি ভীষন হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর শুনলাম অনার নামে বৃষ্টির মতো ভালোবাসা বিলান হচ্ছে। আমি মনে করলাম এও বুঝি সুজির মতো কেউ, আমাকে যন্ত্রনা দেওয়ার জন্য বলছ। তাই নিচু হয়ে চুমু খেতে যাচ্ছিলাম।

"তারপর?" অরণ্য শুকনো ঢোক গিলল। সর্বনাশ মানে সর্বনাশ। এরকম হতে থাকলে তো শেষকালে ওকে মাথার চুল ফেলে বেলু বাবা হয়ে থাকতে হবে। না হলে তো বাসায় প্রতিনিয়ত ঝুম এরকম উল্টোপাল্টা করতে থাকবে। না.. না... এতো কোনো ভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। আর অনা নামে কাউকে ও চেনেই না, আই লাভ ইয়্যু তো দূরের কথা। আর এসব প্রশ্ন এখন অবান্তর।

হঠাৎ ঝুমকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হলো খুব অরণ্যর। কিন্তু ওর গায়ের কাপড়চোপড় সব ভিজিয়ে দিয়েছে পাগলিটা। উহ... এখন আবার সব পাল্টাতে হবে।

"চুমু খেতে যেয়ে হঠাৎ ওই.... ওই দাগটা নেই দেখে থেমে গেছি ভাগ্যিস। " বলেই মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল নিঝুম। কাল কখন কামড়ে দিয়েছিল জানে না, কিন্তু পরে খেয়াল করেছে অরণ্যর ঘাড়ের কাছে লালচে একটা দাগ হয়ে আছে। গেঞ্জির কলার আর চুলের জন্য খুব ভাল করে খেয়াল না করলে বোঝা যাচ্ছেনা। কিন্তু অয়নের ওখানটা পরিস্কার। নিচু হতে যেয়ে হঠাৎ ওখানে চোখ যাওয়াতে থেমে গেছে নিঝুম। তারপর ভাল করে ওর মুখ দেখে নিঝুমের হাত পা কাঁপছিল। আর অয়নের মাথার কাছের মোবাইলটা দেখে আরও নিশ্চিত হয়েছে। তাড়াতাড়ি দৌড়ে দরজা খুলে বের হয়ে এসেছে ও। ভয়ে নিঝুমের হার্টবিট ডাবল হয়ে যাচ্ছিল প্রায়।

"ওফফ বাঁচাইছে। " অরণ্য নাটুকে ভঙ্গিতে শ্বাস ছাড়ল । " এখন থেকে তাহলে রোজ আমার নাক, মুখ কামড়ে দিবে ওকে, তাহলে আর তোমার ভুল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না।"

"হ্যাঁ, খুব ভাল বুদ্ধি। প্রতিদিন পাঁচ ছয়টা মৌমাছির আদর পেলে আমার আপনাকে চিনতে ডেফিনেটলি কোনো প্রবলেম হবে না, "নিঝুম রাগে দুই হাত বুকের কাছে ভাঁজ করে ধরল। ওর এখন সত্যি ইচ্ছে হচ্ছে লোকটার নাকে জোরসে একটা কামড় বসাতে।

নিঝুমের কথায় অরন্য হেসে ফেলল। বেজায় চটেছে বউটা ওর। অবশ্য রাগ হওয়ার মতোই কাজ করেছে ও । নাহ্ আর কখনো এরকম কাজ করব না।

"হমম.. কিন্তু এই অনাটা কে? গার্লফ্রেন্ড মনে হচ্ছে। "

"জানিনা....আমি কি করে বলব, ওর কোলবালিশের নামও হতে পারে।"

"আচ্ছা এখন এগুলো থাক। চলো তোমাকে শহরটা ঘুড়িয়ে দেখাই। কীর্তনখোলা নদীটা খুব সুন্দর। চলো চলো কাপড়টা পাল্টে নাও।"

"না আমার এখন কোথাও যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।আপনি গেলে যান। "

এবার অরণ্য আর ছাড়ল না। ঝুমের আজকে মুড অফ, আর এটা অরণ্যর একদম সহ্য হবে না। চারদিকে তাকিয়ে একবার দেখে নিল কেউ ওদের লক্ষ্য করছে কিনা। নাহ সবাই এখনও বোধহয় বিশ্রাম নিচ্ছে। গরমের দুপুর আর লম্বা জার্নিতে পরিশ্রান্ত সবাই। ঝট করে নিঝুমকে কোলে তুলে নিয়ে পাশের একটা রুমে ঢুকল অরণ্য।

"আরে এই... এটা কি হচ্ছে? ছাড়ুন বলছি," নিঝুম বিরক্ত কন্ঠে বলে উঠে।

"আগে তুমি করে বলো, তারপর। আপনি আপনি বললে কেমন পর পর লাগে বউ।"

"আমিতো পরই, এজন্যই তো ভাইয়ের রুমে পাঠালেন।"

অরণ্যর এখন সত্যি ফাঁদে আটকে পড়া ইঁদুরের মতো অবস্থা । কি একটা উল্টোপাল্টা বুদ্ধি এল ওর মাথায় আর এখন সেই ভুলের খেসারত দাও।

" আমি সত্যিই দুঃখিত ঝুম। সামান্য একটু মজা করতে যেয়ে যে এত বড়ো একটা গন্ডগোল হতে পারে সেটা আমার মাথাতেই আসেনি।"

"এই ভুল আর কখনো করবেন নাতো?"

"কক্ষনও না... ওয়াদা করলাম। এবার রাগ করাটা একটু বন্ধ কর না, তোমার মুখে আপনি শুনলে খুব দুঃখ হচ্ছে।"

"কিন্তু তুমি বলা অভ্যাস করলে শেষে আম্মুদের সামনেও যদি তুমি বলে ফেলি? খুব খারাপ হবে ব্যাপরটা তাহলে।"

বলেই ঠোঁট উল্টাল নিঝুম। এই এক মুস্কিল, নিঝুমকে ঠোঁট উল্টাতে দেখলেই অরণ্যর অন্যরকম একটা তেষ্টা পায়। ঝুমকে ঘরের মাঝখানে নামিয়ে দিয়েই ওর থুতনিটা দু'হাতে উঁচু করে তুলে ধরল অরণ্য। এরপর আস্তে আস্তে নিঝুমের মুখটা আদরে আদরে ভাসিয়ে দিল। নিঝুম প্রথমে কিছুক্ষণ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু খুব বেশিক্ষন এই লোকের সাথে রাগ করে থাকা বোধহয় ওর পক্ষে সম্ভব না। একটু পরেই অভিমানগুলো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে লাগল বসন্তের ঝরা পাতার মতো। গুনগুনিয়ে উঠলো মনের কুঠিতে জমিয়ে ইচ্ছেগুলো। আলতো করে অরণ্য ওর নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরতেই সাপের মতো অরণ্যর গলাটা পেচিয়ে ধরল নিঝুম।

"ও বউ " নিঝুমের ঠোঁটের কোনাটা তখনও অরণ্যর দখলে।

"উমম"

"সরি... আর কখনও এমন হবে না। আমি আসলে অত তলিয়ে দেখিনি। "

"মনে থাকে যেন। আর কখনও এরকম হলে আমি আপনার সামনে আর কোনোদিন আসব না।"

অরণ্য নিঝুমকে বুকের মধ্য জোরে আকড়ে ধরলো," এই কথা আর কোনদিনও বলবে না। ওরকম কাজ আমি আর কোনোদিন করবই না। "

"কথা দিলে "

" হমম "

"মনে না থাকলে?" নিঝুম জিজ্ঞেস করল।

"তোমায় তিন বাচ্চার মা বানিয়ে দিব। কনফার্ম।",

"ছি.... কি পচা কথা। "

"ছি কেন? মা হতে চাও না? "

"চাই, তাই বলে এখনই তিন বাচ্চা। "

"এখনই বলিনি তো, ধীরে ধীরে একটা করে পুচকু বড়ো হবে আর একটা করে বাড়বে। "

"অসভ্য..। "

"আশ্চর্য ফ্যামিলি প্ল্যানিং করছি এর মধ্যে অসভ্যতামীর কি হলো? "

"জানিনা, আপনি যান কাপড় পাল্টে নিন , সব ভিজে গেছে। "

"কে ভিজিয়েছে?"

"জানিনা, "নিঝুম মাথা নিচু করে হাসতে লাগল। বেশ করেছে পানি ঢেলেছে, আরও দুই মগ বেশি ঢালা উচিত ছিল।"

"ওকে আমিই বলছি। "

নিঝুম কিছু বোঝার আগেই অরণ্য ওকে বাথরুমে নিয়ে ফুল ফোর্সে শাওয়ার ছেড়ে দিল।

"এখন কি হবে? আমার কাপড় তো সব ভিজে গেল।" নিঝুম কপট রাগ দেখাল...  আচ্ছা ফাজিল একটা ছেলে।

"কি আর হবে?" অরণ্য দাঁত বের করে হাসতে লাগল।

নিঝুমের নিজের উপরই ভীষন রাগ হতে লাগল , এতো বেহায়া আর অসভ্য ওর এই মনটা..  এই দাঁত কেলান হাসি দেখেও ওটা একেবারে গলে লেই... এমন হলে সংসার জীবণে নিঝুম, অরণ্যকে   কন্ট্রোল দূরে থাক.. নিজেই অরণ্যর ইশারায় নাচতে থাকবে।

"আমি এখন কি পরে বের হব এখান থেকে, কাপড়তো সব স্যুটকেসে ?"

নিঝুমের এবার কান্না আসতে লাগল। এটা ওর বাবার বাড়ি না যে ইচ্ছে হলেই ভেজা কাপড়ে ও যত্রতত্র ঘুড়ে বেড়াবে।

" আমার সাথে টক্কর দিলে তো ম্যাম এরকম একটু আধটু হবেই," অরণ্য হালকা স্বরে বলল। বউটা ওর একটা ভীতুর হাড্ডি।

"পচা লোক একটা।"

"হু অনেক। বলেই বাথরুমের দরজাটা ভিতর থেকে আটকে দিল অরণ্য।"

"দরজা কেন আটকালেন? "

"এমনি "

"অরণ্য প্লিজ...বিয়ের আগে এসব আর না।

নিঝুমের কথায় থমকে গেল অরণ্য। নিঝুম কি ওকে অবিশ্বাস করে? এই মুহূর্তে ও একটু আদর করত নিঝুমকে, কিন্তু থাক। ঝুম না চাইলে কখনই ওকে জোর করবেনা অরণ্য, প্রশ্নই আসে না। কিন্তু নিঝুমের কথায় ও কনফিউজড। কালকের ব্যাপারটা কি তাহলে ঝুমের ইচ্ছার একদম বিরুদ্ধে হলো?

"আরে আমি স্রেফ কাপড় চেঞ্জ করব... মাথাতো পুরোই ভিজিয়ে দিয়েছো।"

নিজের টি শার্টটা খুলে ফেলল অরণ্য। এরপর শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে ভালো করে গোসল করে টাওয়েল পরে বের হয়ে গেল। নিঝুম এতক্ষণ একপাশে চুপ করে দাঁড়িয়েই ছিল ভেজা কাপড়ে। কথাটা বলে ও নিজেও খানিকটা সংশয়ে ছিল। অরণ্যকে অপমান করা হয়ে গেল নাতো? আসলে কালকে রাতে যা হয়েছে তার পুরোটাতো আর অরণ্যর একার ইচ্ছাতে হয়নি। ও অরণ্যর কেবিনে না আসলে এসব হতে না।

"ঝুম তোমার কি হয়েছে?" অরণ্যর ডাকে সচকিত হলো নিঝুম। ও একভাবে সাওয়ারের নিচে দাড়িয়েই ছিল।

"হ্যা বেরুচ্ছি, কিন্তু আমার কাপড়?"

আমি দরজাটা টেনে দিয়ে বাইরে যাচ্ছি, বিছানায় একটা থ্রীপিস আছে ওটা দিয়ে আপাতত কাজ চালিয়ে নাও। পরে রুমে যেয়ে পাল্টে নিও।

"কিন্তু আমার " নিঝুম থেমে গেল। পুরোটাই তো ভিজে গেছে... এখন কি করবে ও?

"বিছানার পাশে একটা ছোট ট্রলি ব্যাগ আছে, ওতে সব আছে। দেখে নিজে বের করে নাও। আমি দরজা লক দিয়ে বের হচ্ছি," বলেই বের হয়ে গেল অরণ্য।

নিঝুম বের হয়ে বিছানা থেকে থ্রীপিসটা হাতে নিল। হালকা গোলাপি রঙের কামিজের সাথে নেভী ব্লু সালোয়ার। ওড়নাটাও খুব সুন্দর। থ্রীপিসটা হাতে নিয়েই মনটা ভাল হয়ে গেল ওর।

কিন্তু ছোট ট্রলিটা খুলে হা হয়ে গেল নিঝুমের মুখ। ওতে ইনার গার্মেন্টেস ছাড়াও দুই ডজন চুড়ি, একটা সুন্দর শাড়ি,ব্লাউজ, পেটিকোট, চুলের ব্রাশ, লিপস্টিক, নেইলপলিস, কাজল,একটা মেকাপ বক্স ছাড়াও আরও টুকটাক কিছু সাজার জিনিস রয়েছে। নিঝুম বুঝতে পারছিলনা এগুলো কে কিনেছে? অরন্য? কিন্তু কেন?

নিঝুম কাপড় পরে বাইরে এসে দেখে অরন্য কার সাথে যেন ফোনে আলাপ করছে। ওকে দেখে তাড়াতাড়ি কথা শেষ করল অরন্য।

"কি যাবে নদীর পাড়ে বেড়াতে?"

মাথা নেড়ে সায় জানাল এবার নিঝুম। মনটা এখন ফুরফুরে হয়ে এসেছে। সাথে সুন্দর কামিজটাও কেন যেন ওর মনটাকে ভাল করে দিয়েছে। এটার সাথে একটা ছোট মুক্তোর মালা পরতে পারলে বেশ হতো। ওর খুব জানতে ইচ্ছে করছিল ট্রলির জিনিসপত্র গুলো অরন্য কেন কিনেছে? কিন্তু এখন জিজ্ঞেস করলে অরন্য যদি মাইন্ড করে। তখন ওয়াশরুমে নিঝুমের কথার পর আর তেমন কথা বলছে না অরন্য। কেমন যেন জোর করে করে কথা বলছে মনে হচ্ছে। নিঝুম কি কোনো ভুল করল?

"আশুকে সাথে নিব?" আর কিছু খুঁজে না পেয়ে নিঝুম এটা জিজ্ঞেস করাই উপযুক্ত মনে করল।

"ও যেতে চাইলে তো অবশ্যই। সাথে অয়নকেও বল।" অরন্য বলল।

"অয়নকে তুমি বলো প্লিজ , আমি পারব না। " বলেই নিঝুম আশুকে ডাকতে ছুটল। নিঝুমের কথায় হাসি পেল অরণ্যর। তারমানে ঝুমের মেজাজ খারাপের সাথে আপনি, তুমি আপ-ডাউন হতে থাকবে আর এখন ম্যাডামের মেজাজ ঠিক আছে।

অয়নকে ডাকতে এসে অরণ্য দেখল, ভাইটা ওর তখনও বালিশে মুখ গুঁজে ঘুমাচ্ছে। নিঝুম চুমোটা আজ অয়নকে দিলে কি অবস্থা হতো মনে হতেই আবার নিজেকে থাপ্পর লাগাতে ইচ্ছে হলো ওর। তবে অয়ন একটা দারুন জিনিস মিস করেছে আজ। জেগে থাকলে জনমভর ওর মাথায় নিঝুমের পানি ঢালার গল্প শোনাত অয়ন। ওর বাচ্চারাও হয়তো সেটা জেনে যেত। ভাল হয়েছে ঘুমিয়েছিল। কিন্তু এই অনাটা কে? সেদিনও আলমারিতে... ভাল করে জিজ্ঞেস করতে হবে অয়নকে। সত্যি যদি এই নামে কাউকে পছন্দ করে অয়ন তাহলে আম্মুর সাথে পরিচয় করানে দরকার।

নদীর পাড়ে বেড়াতে এসে নিঝুমের এত ভালো লাগল যে দুপুরের মন খারাপ করা ভাবটা ও পুরো নদীর পানিতেই ফেলে দিল। না অরণ্য একটার পর একটা সারপ্রাইজ ওকে দিয়েই যাচ্ছে আজকে। এখন বরং একটু মন খারাপও হচ্ছে। কথাটা ঠিক ওভাবে না বলে আরও ভালো করে বুঝিয়ে বলা যেত অরণ্যকে। প্রকাশ না করলেও একটু মন খারাপ বোধহয় হয়েছে অরণ্যর। নিঝুম মনে মনে ঠিক করল এখান থেকে ফিরে যেয়ে মাফ চেয়ে নিবে ও অরণ্যর কাছে। মুখে যতই পটর পটর করুক না কেন , অরণ্য ওর স্বামী এটাতো এখন সত্যি। আর কেউ জানুক না জানুক নিঝুম নিজে তো জানে, আর কেউ না মানলেও ওর তো মানতেই হবে। আর.. আর রাগ হলে নিঝুমের কেন যে শুধু এই কথাটাই অরণ্যকে বলতে ইচ্ছে হয় কে জানে।

ওরা সবাই হাটতে হাটতে একটা ফাঁকা বেঞ্চে পেয়ে বসে পড়ল, সূর্য তখন প্রায় ডোবে ডোবে। কিন্তু জায়গাটায় এখন অনেক লোক। পাকা সুন্দর একটা রাস্তা নদীর কোল ঘেষে চলে গিয়েছে।

নিঝুম আর আশু যা দেখছে সেটাই ওদের ভালো লাগছে। অরণ্যও ওদের উচ্ছ্বাস দেখে আনন্দ পাচ্ছিল । হঠাৎ অয়ন কোথা থেকে এক পিচ্চি বাদামওয়ালাকে ডেকে আনল। পিচ্চির কাছ থেকে এত্তগুলো বাদাম কিনে অয়ন নিঝুমের কোলের মধ্যে সব বাদাম ঢেলে দিল।

" ঝুমঝুমি এখন টিফিন টাইম, নাও চল তাড়াতাড়ি নাস্তা খাই। "

চলবে.........

(গল্পটি বর্তমানে এডিট করে দেয়া হচ্ছে...  এ কারনে যারা নতুন পড়ছেন তারা একটু ধৈর্য ধরবেন, কারন পুরোনো গল্প পড়ে পড়ে ভুলগুলো যথাসম্ভব  শুধরে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ কারনেই একবারে পুরোটা পাবলিশ সম্ভব হচ্ছে না, অনাকাঙ্ক্ষিত এই দেরীর জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। )

Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top