১৬
নিঝুম আর আশু এর আগে কোনোদিন লঞ্চে উঠেনি। শুধু বইয়ে পড়েছে। আজ লঞ্চে উঠে ওদের আনন্দ দেখে মনে হচ্ছিল বিশ্বজয় করে ফেলেছে ওরা। অরণ্য খুব মজা পাচ্ছে নিঝুমের খুশিতে ঝলমল মুখটি দেখে। শুধু লঞ্চে উঠেই এত আনন্দ পাবে ঝুম... জানলে আরও আগেই ব্যাপারটা আয়োজন করার চেষ্টা করত ও।
"অরণ্য... এত বড়ো লঞ্চটায় তো অনেক লোক আছে নিশ্চই তাই না? " নিঝুমের চোখে আনন্দের ছটা।
"হ্যাঁ.. অনেক লোক," অরণ্য একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে বলে। ঝুমকে এত সুন্দর কেন লাগছে? শাড়ি পড়লে মাথা খাড়াপ করার মতো সুন্দর লাগে ওকে। এই মুহুর্তে ঝুমের নাকের উপর এক ফোটা ঘাম জ্বল জ্বল করছে। অরণ্য বহুকষ্টে নিজেকে সামলে নেয়। ওর ইচ্ছে হচ্ছে ঝুমের নাকটাই পুরো হাপিশ করে দিতে, কিন্তু সম্ভব না। গাড়িতে বসে ওর ইচ্ছে হচ্ছিল ঝুমকে বুকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু মুরুব্বিদের সামনে আর সেটা কিভাবে হয়? নইলে অয়ন আর আশু দুজনেই এখন ওদের গোপন বিয়ের খবরটা জানে। ঝুম আশুকে সবটা বলে দিয়েছে। তাই অরণ্যও, অয়নকে সব জানিয়েছে।
সব শুনে অয়ন বলেছে, "তোর শত্রু তোর বন্ধুর কাজটা করে দিয়েছে রে ভাইয়া, না হলে দেখা যেত আমার ভাস্তে - ভাস্তিরা সব বিনা দাওয়াতে বাবা-মায়ের বিয়েতে এসে হাজির।"
.....................
"কিন্তু আমি এত লোকজন কাউকে দেখতে পাচ্ছি না কেন? "
ঝুমের আদুরে গলার স্বরে আবার অস্থিরতা বাড়ে অরণ্যর। পারলে দুকান চেপে ধরত ও কিন্তু তাও তো আবার সহ্য হবেনা। খানিক পর পর ওই গলা না শুনলে মন ভিজেনা ওর, শক্ত কাঠ হয়ে যায়।
"কারন তুমি একটা কেবিনের মালিক," অরণ্য হেসে ফেলল। নিঝুমের লঞ্চ সমন্ধে কোন ধারনা নেই জানে ও।
"তারমানে?"
"তারমানে অনেক লোক দেখতে হলে তোমাকে থার্ড ক্লাসে নিয়ে যেতে হবে। ওখানে স্রেফ চাদর বিছিয়ে তাস পেটায় লোকে। যাবে? "
"ও বাবা না।"
"আচ্ছা আমরা আগে খাওয়া শেষ করি এরপর আমি তোমাকে লঞ্চের ছাদে নিয়ে যাব, ঠিক আছে?"
"ছাদে!আচ্ছা। কিন্তু ওখানে আমাদের যেতে দিবে? "
"নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে। " অরণ্য হাসল।
লঞ্চটা ছেড়ে দেবার এক ঘন্টা পরে, আসমা সবাইকে খেতে ডাকলেন। খাবার গুলো খেতে যে কি ভাল লাগছিল নিঝুমের। ওর মনে হচ্ছে এটা একটা পিকনিক। আশুও খুব মজা পাচ্ছে। অয়ন খেয়েই আবার কানে হেডফোন গুঁজল। নিঝুম লক্ষ্য করেছে অয়ন এমনিতে একটু কম কথা বলে। আর সুযোগ পেলেই খালি কানে ওই হেডফোন গুঁজে রাখে। অবশ্য কথাই বা বলবে কার সাথে বেচারা।
খাওয়া হয়ে যেতেই সবাই লঞ্চের বাইরের টানা বারান্দায় এসে বসল। লঞ্চ থেকে রাতের নদীর দৃশ্য যে এতটা মনোমুগ্ধকর হতে পারে নিঝুমের জানা ছিল না। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে নিঝুম প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকে।
নদীর বুক চিরে লঞ্চটা একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। কেমন সব অদ্ভুত অনুভূতির আনাগোনা হয় ভাবুক মনে। দূরে নদীর মাঝে হঠাত হঠাত তীব্র আলোর মুখ দেখা যায়, তারপর আবার সেই নিকশ কালো অন্ধকার ফুঁড়ে ছুটে চলা। নিঝুম অজান্তেই অরণ্যর পাশ ঘেষে দাঁড়ায়। কিছু সৌন্দর্য মানুষ একা উপভোগ করতে পারে না। কিছু অপার্থিব সৌন্দর্য মানুষকে উদার হতে শেখায়, ভাগ করে নিতে শেখায়। নিঝুমারণ্য সেই অকৃত্রিম সৌন্দর্যে প্লাবিত হতে থাকে।
আসমা, রুমানাকে নিয়ে বড়ো কেবিনটা দখল করেছেন। আশুও তাদের পিছে পিছে পাশের কেবিনে গিয়ে ঢুকে পড়ে। আপু আর জিজু শান্তি করে গল্প করুক। আসলে নিঝুম আর অরণ্যর লুকোচুরি বিয়ের খবর ওর জানা হয়ে গিয়েছে। সেদিন আপুর রুমে জিজুর ইউনিফর্ম দেখেই ওর সন্দেহ হয়েছিল যে জিজু বোধহয় রাতে এই রুমে ছিল আর শুধু ওই দিন না, অন্যদিনও থাকে। কিন্তু এই অন্যায় কাজটা কেন আপু করছে সেটার কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছিল না আশু। নিজের বোনকে চেনে ও। আপু এতদূর নোংরামো করতে পারে সেটা ওর বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু জিজু যে ওই মুহূর্তে আপুর বাথরুমে এটাও ও নিশ্চিত ছিল আর তার কাপড়চোপড় সব বাইরে। তারমানে আপু আর জিজুর সম্পর্কটা একটা বিশেষ পর্যায়ে তো গিয়েছে। কিন্তু আপুকে খারাপ ভাবতেও আজব লাগছিল আশুর। ওর মাথায় আসছিল না আপুর মতো এরকম নরম মেয়ে কি করে এত ফাস্ট ফরোয়ার্ড হয়ে গেল? আর অরণ্য জিজুর সাথে বিয়ে তো ঠিক হয়েই আছে, পরিবার থেকেই দিচ্ছে। তাহলে এত হাইড এন্ড সিক গেম খেলছে কেন এরা? আপু অবশ্য সেদিনই ওকে ডেকে ওদের বিয়ের কথাটা জানায়, সাথে কারনটাও। সব শুনে আশু পুরো ব্যাপারটা আব্বু-আম্মুর কাছে গোপন রাখতে রাজি হয়েছে। কি একটা বিশ্রী পরিস্থিতি হয়েছিল সেদিন... পাঁজি লোকগুলো ওদের মেরেও ফেলতে পারত।
সবাই কেবিনে চলে গেলে অরণ্য নিঝুমকে নিয়ে লঞ্চের ছাদে উঠে আসল। নিঝুমের মনে হচ্ছিল খুশিতে ও লাফ দেয়। কি সুন্দর খোলা আকাশ। তাতে অসংখ্য তারার মেলা। চাঁদটাকে মনে হচ্ছে বিশাল একটা রূপোর থালা। ঢাকায় থেকে এরকম আকাশ ওর দেখা হয়ই না বললে চলে। আর রাস্তায় বেরুলেও বা যা দেখা যায়, অসংখ্য উঁচু উঁচু ভবন আর রাশি রাশি তার দিয়ে সেই পথটাও তো প্রায় বন্ধ।
"কি ম্যাডাম...খুশি? "
অরণ্য নিঝুমকে নিজের কাছে টানে।
"অনেক... থ্যাংকিউ।"
নিঝুমের সত্যিই অসম্ভব ভালো লাগছে এমন পরিবেশে। প্রকৃতিকে এভাবে বিভোর হয়ে দেখার চেয়ে প্রিয় অনুভূতি বুঝি আর নেই। ওর ইচ্ছে হচ্ছে তারাদের দলে যোগ দিতে। মাঝে মাঝে চাঁদের দেশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ হয়ে উড়ে যেতে।
"উহ্ এত সুন্দর একটা জিনিস দেখালাম, আমি তো মনে করলাম তুমি খুশির চোটে পাগল হয়ে আমার গলা ধরে একটা লং কিস দিবা। "
"ছি... এত সুন্দর একটা পরিবেশ আর আপনার মনে শুধু বাজে মতলব ঘুরে ।"
"বাজে মতলব মানে?"
"তা নয় তো কি? "
"আমি আমার বিয়ে করা বউয়ের কাছ থেকে একটা চুমোও দাবি করতে পারব না? "
অরণ্যর ইচ্ছে হচ্ছিল নিঝুমের চুলগুলো খোঁপা থেকে খুলে ছেড়ে দেয়। কিন্তু বাতাসে বেচারির শাড়ির আঁচল এমনিতেই বেসামাল হয়ে যাচ্ছে, বাতাস পেয়ে ফুলে উঠছে মাঝে মাঝেই। সাথে চুল খুললে একেবারে মাথা খারাপ হয়ে যাবে ঝুমের। আর শাড়ি পরার জিদটা অরণ্যর ছিল, কাজেই ভুল করেও ভুল কাজটা এখন করা যাবে না।
" এলোমেলো বাতাসে
উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল
কখন যেনো মেখে দিয়েছো
এই দু'চোখে,ভালোবাসার কাজল"
"আমি কি তাই বলছি নাকি? কিন্তু এত সুন্দর একটা পরিবেশেতো শুধু প্রকৃতির সাথে প্রেম করা উচিত," নিঝুম আরক্তমুখে উত্তর দেয়। লোকটা পাগল হয়ে গেছে। এটা কি বিদেশ নাকি যে যেখানে সেখানে চুমু খাওয়া যায়। লঞ্চের লোকজন কেউ যদি হঠাৎ তাদের রুম থেকে বের হয়ে আসে?
"হ্যাঁ, তো কর না। আমি কি আটকাচ্ছি নাকি। কিন্তু ফাঁকে আমাকেও একটু সুযোগ দাও," বলেই নিঝুমের কপালে একটা চুমু আঁকে অরণ্য।
নিঝুম হাসে। অরণ্যর বুকের সাথে মিশে অন্ধকারের সৌন্দর্যটাকে নীরবে নিজের ভিতরে অনুভব করার চেষ্টা করে। অসম্ভব সুন্দর একটা মুহূর্ত, কোটি কোটি তারা মাথার উপর আলোর মিছিল করছে। নিঝুম এই মুহূর্তটাকে আজীবন নিজের ভিতরে ধরে রাখতে চায়। এমনকি যখন ওরা একদম বুড়ো হয়ে যাবে তখনও ওর নাতি-নাতনিদের কাছে এই রাতের গল্পটা শোনাতে চায়।
"অরণ্য... আমার না কেমন টাইটানিক সিনেমার মতো ফিল হচ্ছে।"
"তাই? " অরণ্য হাসে। সবাই বোধহয় মনে মনে সুন্দর কিছু মুহূর্তকে আঁকতে ভালোবাসে। সেই মুহূর্তে বাঁচতে ভালোবাসে।
"হুমম... ওই যে জ্যাক আর রোজ ওরা যখন জাহাজের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল, ওই যে কেমন হাত ছড়িয়ে ওরকম।"
"হমম। আমারো একই অনুভূতি হচ্ছে, তবে ওখান থেকে একটু পিছনের দৃশ্যের। "
"মানে... ওই যখন জাহাজ ডুবে যাচ্ছিল?" নিঝুম ভয়ার্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে। ও সাঁতার জানেনা। এই লঞ্চের কিছু হলে একদম ডুবে মরতে হবে ওকে।
"না.. অত পেছনে কেন যাচ্ছ ? আর একটু সামনে আগাও। ওই যে গাড়ির ভিতরে... " অরণ্যর গলা এবার খাদে নামে, চোখেমুখে দুষ্টুমির ছোঁয়া।
ব্যাপরটা ধরতে পেরে নিঝুমের কান ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগল। আচ্ছা অসভ্য লোক তো। এত সুন্দর পরিবেশ, বেশ দুই একটা সুন্দর পংক্তি বলবে তা না, যত নোংরা কথাবার্তা।
"অরণ্য.. আমি নিচে যাব।"
"আর একটু থাকিনা। "
"তাহলে কিন্তু ওসব পচা পচা কথা বলা যাবে না। "
"পচা পচা কথা মানে? পচা কথা কখন বললাম? "
"এই তো একটু আগেই তো বললেন। ওই যে কি গাড়ির ভিতরে কি সব.... "
"আরে ওটা পচা ফিলিংস কেন হবে? আর এটাও কি আল্লাহ দেয়নি? "
"ইশশ আপনি কোন জিনিসে কি টানছেন।"
"আমি কিছুই টানছি না। আমি শুধু অনুভূতির কথা বললাম, চল নিচে যাই।"
অরণ্য নিঝুমকে ছেড়ে দিয়ে ওর হাত ধরল।
"এই যা বাবুর রাগ হয়ে গেল?"
"না রাগ হয়নি। কিন্তু এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়ানও উচিৎ হবে না। অনেক বাতাস। ঠান্ডা লেগে যাবে, চলো।"
"তাহলে চলেন," নিঝুম শাড়ির আঁচলটাকে ভালোভাবে কোমড়ে গুঁজে নেয়।
ওরা নিচে নেমেে এসে দেখে ওদের বসার জায়গাটা অন্য এক গ্রুপ দখল করে নিয়ে নিয়েছে। সেটা দেখে অরণ্যই বলে উঠে, "এক কাজ কর, অনেকক্ষণ হয়েছে এখন যেয়ে শুয়ে পড়। আমিও একটু বিশ্রাম নেই।"
নিঝুম বুঝতে পারলনা, অরণ্য কি ওর কথায় রাগ হলো? কিন্তু ওর চোখ মুখে রাগের কোনো আভাস নেই। কিন্তু তাহলে নিচে আসতেই ঠেলে ওকে কেবিনে পাঠাচ্ছে কেন? কিন্তু আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না নিঝুমের। যদি ভিতরে ভিতরে রাগ হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন করলে আরও রাগ হবে অরণ্য।
নিঝুম কেবিনে ঢুকতেই দেখে আশু শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ছে। একবার ভাবল শাড়ি খুলে কামিজ পরে কিন্তু পরে মনে হলো থাক। অরণ্যর জেদের কারনে ও শাড়ি পরেছিল। সকালে তাই অরণ্যর নানুবাড়ি গিয়েই তারপর নিঝুম শাড়ি পাল্টাবে।
দশ মিনিট এদিক ওদিক করেও ঘুম আসেনা অরণ্যর। অয়নটাকে খুঁজতে যেয়ে দেখে দিব্বি আম্মুর কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে বুড়ো খোকা। ওদিকে মা আর শাশুড়ি রাজ্যের বিষয় নিয়ে গল্প করে বেড়াচ্ছে। অরণ্য কিছু করার না পেয়ে একা একা বাইরের চেয়ারে বসে থাকে অনেকটা সময়, তারপর উঠে এসে কেবিনের দরজা দেয়।
হালকা ঝিমুনি ধরে আসছিল অরণ্যর তখনি দরজায় দুম দাম শব্দ... মেজাজ গরম হয় অরণ্যর। অয়নটা একদম একটা বাঁদর, যত ভাবে পারে ওকে জ্বালাবে শুধু। বিরক্ত হয়ে অরণ্য বলে উঠে,"কি হলো দরজা ধাকাচ্ছিস কেন?"
"আরে আমার হেডফোনটা নিব, ব্যাগের সাইড পকেটে আছে। ওটা দাও।"
"তুই ভিতরে ঢুকে নিয়ে যা।"
"আরে আমি ভিতরে ঢুকব কিভাবে?"
"তার মানে? "
"মানে আমি ঢুকলে ঝুমঝুমি লজ্জা পাবে। সেটা দেখে আবার আমিও লজ্জা পেতে পারি।"
অরণ্য ধাক্কা দিয়ে দরজার পাল্লা দুটো খুলে দিল।
"তোর ঝুমঝুমির এত সাহস নেই যে অরণ্যর সাথে রাত কাটায়। এখন ভিতরে ঢোক আমি দরজা দিব।"
"ভাইয়া রেগে বোম্ব হয়ে আছিস মনে হচ্ছে। একটু আগে তো বেশ টোনাটুনির প্রেম চলছিল দুজনের মধ্যে। হ্যাগো, নাগো আরো কি কি যেন? তা এইটুকু সময়ের মধ্যেই আবার কি হলো? "
"এই তুই ঢুকবি না দরজা দিব।"
অয়ন মুখটা বেঁকিয়ে ঘরে ঢুকল, এরপর ওর পিঠের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে সোজা বের হয়ে গেল।
অরণ্যর এমনি বিরক্ত লাগছিল তার উপর অয়ন চলে যাওয়াতে আরও বিরক্ত হলো।
একটু পরে আবার ঠকঠক। অরণ্য মনে করলো যদি অয়ন হয় তাহলে রাম ধমক দিবে একটা। কিন্তু দরজা খুলে বড়ো রকমের ধাক্কা খেল ও। দরজার সামনে নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে, সাথে আশুও।
"কি হয়েছে?"
"কিছু না, আশু তুই রুমে ঢুকে ভালো করে দরজা আটকে দে। "
আশু আস্তে করে অরণ্যকে হাত দিয়ে বিদায় জানিয়ে ওর কেবিনে ঢুকে দরজা দিল।
"দেখি ঢুকতে দিন," নিঝুম একপাশের পাল্লা খুলে ভিতরে ঢুকল।
"ব্যাপারটা কিছুই বুঝলাম না? তুমি এই কেবিনে কেন ? "
"কিছু না, আপনি রাগে অয়নের সাথে চিল্লাচ্ছিলেন কেন? "
"মানে? "
"মানে আবার কি? আমার কথায় রাগ হয়ে অয়নকে বকছিলেন কেন? "
"মোটেও না। আমি তোমার উপর রাগ হবো কেন? "
"সেটা তো আপনার জানার কথা আর আপনার ভাইয়ের।"
অরণ্য উত্তর না দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। ঝুমের কথার মাথামুন্ড ও কিছুই বুঝতে পারছেনা। ও অয়নকে কি বলেছে?
" অয়ন যেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল কি নিয়ে আপনি রাগ হয়েছেন? আমি বললাম আমি কিছু জানিনা। অয়ন তখন জিজ্ঞাসা করল ছাদে গিয়েছিলাম যখন তখন কিছু নিয়ে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়েছিল কিনা। আমি না বলেছি। অয়ন তখন বলল, এক কাজ করো ঝুমঝুমি আমি আম্মুদের ঘরে শুচ্ছি, তুমি আশুকে বলে নিয়ে ভাইয়ার কাছে যাও। নাহলে ভাইয়ার রাগ যদি রাগ থেকে অভিমান হয় তখন কিন্তু দশটা নিঝুম গিয়েও সেই বরফ গলাতে পারবে না। বরকে সময় থাকতে সামলাও। নাহলে পরে কিচ্ছুটি করেই কোনো লাভ হবে না। "
"মহা ফাজিল তো এই ছেলেটা। আর তার কথায় ধরা খেয়ে তুমি আমার রুমে চলে এলে?" অরণ্য হো হো করে হাসতে লাগল।
"তাহলে কি আমি চলে যাব? " নিঝুম রাগ হয়ে বলল।
নিষ্ঠুর একটা লোক।
"আরে আমি তাই বললাম নাকি? কিন্তু ওই বাঁদরটা থেকে সাবধান। ও কিন্তু একদম কঠিন মুখ করে মিথ্যা বলে, মাও ধরা খেয়ে যায় মাঝেমাঝে। "
"তারমানে আপনি রাগ করেন নি? "
"না সেটা বলছি না। কিন্তু আমাকে সামলাতে দশটা না একজন নিঝুমই যথেষ্ট। তার চোখের পানি দেখলে আমি এমনি গলে পানি হয়ে যাব। বরফ থাকা তো দূরের কথা।"
অরণ্যের অকপট স্বীকারোক্তি হোক বা অন্যকিছু নিঝুমের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। ওর কি যেন হচ্ছে... প্রতিদিন একটু একটু করে অরণ্যর জন্য একধাপ করে ভিতরে ভিতরে এগুচ্ছে ও। অরণ্যর সব কথা কেন যেন অকাট্য সত্য বলে মনে হয় আজকাল নিঝুমের, গোটা পৃথিবীটাই কেমন অরণ্যময় ওর। অরণ্যর হাত ধরে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে চলে যেতে পারে এখন নিঝুম, এই বিশ্বাসটুকু যে কখন জন্মাল অরণ্যর প্রতি জানেনা নিঝুম।
"কি এখনও থাকবে আমার কাছে না ওই কেবিনে নিয়ে দিয়ে আসব?"
নিঝুম কোনো কথা বলল না। তারপর আচমকা অরণ্যকে জড়িয়ে ধরল, " আপনি আমাকে একটুও চিনেন না, বোঝেনও না। "
নিঝুমের এরকম আচরনে অবাক হয় অরণ্য।
"ওমা এটা আবার কেমন কথা? "
নিঝুমের মুখটা উঁচু করে ধরতেই অরণ্য নিঝুমের জলে ভরা চোখ দুটি দেখতে পায়।
"এটাই সত্যি কথা।"
"একটুও না.. আমার ঝুমকে আমি সবটা না হলেও অনেকখানি বুঝি।"
নিঝুমের চোখদুটিতে খুব নিবিড়ভাবে চুমু খায় অরণ্য।
" উমম.. তোমার চোখের পানি তো নোনটা।"
"তো চোখের পানি কি মিষ্টি হবে? মিষ্টি হলে তো সব পিপড়ারা এসে চোখের মধ্যে বাসা করত। "
"হুমম... কিন্তু আমি এখন এই মিষ্টি খাব। আমার যে ওখানে বাসা করতে ইচ্ছে হচ্ছে।"
অরণ্য নিঝুমের ঠোঁটের কোনটা টেনে ধরল আলতো করে।
"খেতে ইচ্ছে হলে খান। "
"ঠিক তো?"
"আশ্চর্য তো, আমি আপনাকে আটকিয়েছি"
"তুমি এত রেগে যাচ্ছ কেন? আমার তো এখন উল্টো সন্দেহ হচ্ছে যে, আমি না তুমি আমার উপর রেগে ছিলে।"
"তো হব না? "
"কি! কেন? "
"কি... হ্যা? হ্যা? ... সারাক্ষণ কি.. কি করতে থাকে। ফালতু একটা ছেলে, এতদিন আমার রুমে এসে শুয়েছে তখন কোনো সমস্যা হয় নাই আর যেই আজকে নিজের পরিবার সাথে আছে অমনি আমাকে নিজের রুমে আসতেও বলল না। সাধু সাজতেছে, থাকব না আমি। দরজা খুলে দেন, আমি চলে যাব। আর আর বিয়ের পরেও আপনার বাসায় যাব না। "
অরণ্য চোখ গোল গোল করে নিঝুমের কথাগুলো শুনছিল। এটা কি ওর ঝুম না আগুনের গোলা? ঝুম তো আজকে পাগল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। ঝড় তো দেখি উল্টোমুখি বইছে। তাড়াতাড়ি দুহাতে পাগল ঠেকাল অরণ্য।
"ছাড়েন... "
"উহু.."
"আমি চিৎকার করে কাঁদব...আমার মেজাজ গরম হচ্ছে খুব। "
অরণ্য নিঝুমকে আরো জোরে চেপে ধরে বুকের সাথে, " আমি ঠান্ডা করে দেই এসো।"
"অরণ্য আমার কিন্তু খুব রাগ হচ্ছে। "
"আর আমার খুব আদর পেতে ইচ্ছে হচ্ছে, প্লিজ বউ আমাকে আজ একটু আদর করনা।"
"না.. আপনি আপনি একটা খারাপ লোক, আমাকে শুধু কষ্ট দেন। "
"আচ্ছা আর কষ্ট দিব না.. এবার তো একটু আদর দাও। "
"না, আপনি একটা খারাপ... না খুব খারাপ লোক। পচা.... শুধু নিজের কথা চিন্তা কর। "
"তাই! আচ্ছা আজ তাহলে আমি একটু খারাপ হই, কেমন। "
"অরণ্য.. না.. "
"ঝুম প্লিজ... "
"অরণ্য ভাল হবে না কিন্তু ..." কিন্তু কে শোনে কার কথা। অরণ্য ততক্ষণে নিঝুমকে পাঁজাকোলে করে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে।
"অর..." নিঝুম কেবল ওর গা বেয়ে শাড়ির খসে পড়াটা টের পেল।
ধীরে ধীরে কারো প্রবল অধিকারের কাছে পরাভূত হতে লাগল ওর সকল প্রতিরোধ। স্বামীর সবল অধিকার নিয়ে আক্রমন করে বসা লোকটা নিঝুমের এতদিনের লালিত সম্পদকে একটু একটু করে উন্মুক্ত করতে লাগল।
সব বেড়াজাল গুলো সরে গিয়ে নিঝুমের উন্মুক্ত
সৌন্দর্যের আহ্বান পাগল করে দিল অরণ্যকে।
চলবে.......
Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top