১৫
"নিঝু আমি কিছু বলছি? ওরকম মুখ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? "
কথাটা শুনে অরণ্যর হার্টবিট একটা মিস গেল। এটা তো ঝুমের আম্মুর গলা। কোনো কারনে উনি যদি ভিতরে আসেন। নো ওয়ে...৷ ঝুম কোনোভাবে ঠেকাও প্লিজ।
"কিরে ওরকম করে তাকিয়ে আছিস কেন? শরীর খারাপ নাকি?" রুমানা নিঝুমের মুখের দিকে তাকিয়ে একটু ভয় পেলেন। মেয়েটার চেহারা এরকম ফ্যাকাসে লাগছে কেন?
"শরীর... নাতো। আম্মু তুমি চা হাতে এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? কার চা এটা?"
নিঝুমের মাথা কাজ করছেনা। কি করবে ও এখন ? আম্মু যদি শেভিং লোশনের গন্ধ খুঁজতে যেয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে।
"আরে তোর বাবা চা খেতে চাইল, তাই নিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু তুই এত জোরে চিৎকার করলি কেন ?"
বাতাসে আবার নাক শুঁকলেন রুমানা। ঘরটায় কেমন একটা গন্ধ.. অপরিচিত। নিঝু ছোট থাকতে ওর রুমে ঢুকলে সব সময়ই কেমন একটা চকলেটের গন্ধ পেতেন রুমানা । নিঝুমের স্বভাব ছিল সব চকলেট পড়ার টেবিলের ড্রয়ারের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখা। কিন্তু সময়ের সাথে সব কেমন পাল্টে যাচ্ছে।
"আমি... চিৎকার করছিলাম কেন? আসলে না আম্মু বাথরুমে এত্তবড় একটা তেলাপোকা ছিল। ওটা গা বেয়ে উপরে উঠে আসছিল, কেমন কাঁটা কাঁটা হাত পা। তাই ভয়ে ওরকম জোরে চিৎকার দিয়েছি।"
নিঝুম খাবি খেতে খেতে উত্তর দিল। ওর চোখ দুটো তখন অরণ্যর ইউনিফর্মের দিকে। আল্লাহ প্লিজ আম্মুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দাও। অরণ্য এই ঘরের মধ্যে আছে জানলে কোন দিনও আশুর ঘর থেকে ফিরে এসে দরজা খোলা রেখে দিত না ও।
কিন্তু এখন কি হবে? আম্মু যদি দেখে ফেলে? অরণ্য ধরা পড়লে ওদের জীবনটা একদম হালুয়া করে ফেলবে বড় ফুপি। ওনার বড়ো বড়ো চোখের দিকে তাকালে নিঝুমের এমনিতেই প্যালপিটিশন শুরু হয়ে যায়। আর অরণ্য এভাবে ওর রুমে ধরা খেলে তো ছি ছি কার শুরু হয়ে যাবে। আত্মীয় স্বজনরা যে যেভাবে পারবে কথা শোনাবে ওদের চরিত্র নিয়ে। আর সেটা ঠেকাতে যেয়ে যদি ওদের বিয়ের কথাটা একবার কারও কানে যায়, তাহলে তো সব শেষ। ফুপিদের কথার চোটে আব্বু সবার আগে হার্টফেইল করবে। না না সেটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।
"আম্মু তুমি কই?" আশুর ডাকে দরজার দিকে মনযোগ দিলেন রুমানা। আবার কি হলো?
"নিঝুর ঘরে। কেন, কি হয়েছে?"
"আব্বু তোমাকে সেই কখন থেকে খুঁজছে, কখন থেকে চায়ের জন্য অপেক্ষা করছে।"
আশুর কথায় টনক নড়লো রুমানার, হায় হায় শাহেদ চলে না যায়। রুমানা আসলে চায়ের পানি চুলায় দিয়ে একটু বাটি গুলো গুছাচ্ছিল... তাই সামান্য দেরী হয়েছে। লোকটা এত অস্থির যে কেন।
" দাঁড়া আসছি, সবগুলো অস্থির। আমি তো তোর বাবাকে চা টা দেব বলেই উঠে আসছিলাম, কিন্তু সিড়ির কাছে এই শয়তান মেয়ের চিৎকার শুনেই না তাড়াতাড়ি এ ঘরে এসে ঢুকলাম। আশ্চর্য তেলাপোকা দেখে বলে কেউ এমন করে চিৎকার করে? আরেকটু হলে আমার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিচে পড়ে ভেঙ্গে যেত," রুমানা বিরক্তির সাথে বলে উঠল। মেয়ের ঘরে কি একটা যেন তাকে বারবার অস্বস্তির মধ্যে ফেলছে কিন্তু জানালা,পর্দা সব ভালো করে লক্ষ্য করেও কোন ধুলাবালি রুমানার চোখে পড়ল না।
" আম্মু তুমি এক্ষুনি চল.. আব্বু বেরুবে। "
আশু রুমানার হাত ধরে প্রায় টেনে হিচড়ে রুম থেকে বের করে নিয়ে গেল। বের হবার সময় রুমানার চোখ এড়িয়ে নিঝুমকে চোখের ইশারায় অরণ্যর ইউনিফর্মটা দেখালো ও। নিঝুম লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিতে বাধ্য হলো। আশুর সামনে এরপর মুখ দেখাবে কি করে ও? আচ্ছা আশু ওকে ভুল বুঝবে না তো? আশু তো ওদের বিয়ের কথাটা জানে না।
এতক্ষন বাথরুমের দরজায় কান পেতে সব শুনছিল অরণ্য। আশুটা সময় মতো এসে বাঁচিয়ে দিল মনে হচ্ছে। মনে মনে আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করল অরণ্য। আজকে কোনো ভাবে ধরা খেলে ওর ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যেত। বলা যায়না স্বাভাবিকভাবে বিয়ে ক্যান্সেলও হয়ে যেতে পারত। ঝুম আজকে সব লেজে গবরে করে ফেলেছে... দরজা খোলা রেখেছে ও কোন আক্কেলে। বিয়ের তারিখ তাড়াতাড়ি ফেলার জন্য একটু কায়দা করতে হবে অরণ্যকে,তা না হলে এভাবে আর চলছে না।
নিঝুমের মনে হলো হার্ট অ্যাটাক হতে হতে ও বেঁচে গেল। আশুটা আজকে অনেক বড়ো বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিল ওদের।
আম্মু বের হয়ে যেতেই দৌড়ে আগে দরজা লক করল নিঝুম। কি বাঁচা বেঁচেছে... উফফফ। যত দোষ ওই.. ওই পচা লোকটার। এসেছিস তো আমাকে জানাবিনা। তেলাপোকার মত ঘুপটি মেরে যেয়ে বাথরুমে বসে আছে। আম্মু যদি একবার খালি বাথরুমে যেত... মনে হতেই আবার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল ওর। তার উপর মহারাজা আবার কাপড় চোপর খুলে নাঙ্গু পুঙ্গু হয়ে বসে আছে। মার সামনে এমন অবস্থায়... না না। হাত দিয়ে নিজের মুখটা চেপে ধরল নিঝুম।
"আল্লাহ তুমি মহান... তা না হলে আশুর মতো ভাল বোন আমার হলো কি করে? আশুবুড়ি আজকে তোকে জমান টাকা দিয়ে একটা ভাল কোনো গিফট কিনে দিবোই দিবো, প্রমিজ।"
নিজেই নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করল নিঝুম।
"ও বউ কি এত চিন্তা করো?" অরণ্য পেছন থেকে এসে হঠাত জড়িয়ে ধরতেই নিঝুমের ঘাড়টা শেভিং ফোমে একদম মাখামাখি হয়ে গেল। জামার গলাটা কেমন ভিজে ভিজে হয়ে গেল সাথে সাথে।
"অ্যা.. এগুলো কি? সাবান সাবান? ছো... পচা লোক একটা, দিল আমার জামাটা নষ্ট করে," নিঝুম মুখটা কান্না কান্না করে ঘাড় মুছতে লাগল। " ইশশ.. মাগো কেমন চট চট করছে ।"
"বেশ করেছি আরো দেব। " অরণ্য আস্তে করে নিঝুমের কান কামড়ে ধরতেই, হাত মুঠি করে ফেলল নিঝুম। উহ কেমন ঝিম ঝিম করছে মাথা।এই লোক ওকে এই করে করেই মারবে। শয়তান লোক একটা। বিয়ে করে যন্ত্রনা শুরু করেছে। এত শখ তো নিয়ে যা বাবা মাকে বলে। না এখানে রেখে রোজ ওকে কষ্ট দেবে, আবার ভালোবাসা দেখাতে আসছে।
"আরে ধুর, খালি ট্রেনের মতে নড়তে থাকে। এত নড়লে আদর করব কি করে?" অরণ্য এবার দুহাত দিয়ে বেশ শক্ত করে আকড়ে ধরে নিঝুমকে। " তোমার চেয়ে সুজিকে আদর করা ভাল,কি সুন্দর নরম তুলতুলে।"
"সুজি! সুজি কে?"
"তোমার ওনলি ওয়ান সতীন । সুজি না একদম দারুন সফট আর কিউট। গলার কাছে আদর দিলেই গলা বাড়িয়ে আদর পাওয়ার জন্য রেডি হয়ে যায়, তোমার মতো এরকম খরগোশের বাচ্চার মতো লাফালাফি করতে থাকে না।"
কি বলছে অরণ্য এগুলো?
নিঝুম অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অরণ্যর দিকে। তারমানে কি? অরণ্যর কি তাহলে আরো একটা বউ আছে সুজি নামে? তার গলাতেও এরকম করে আদর করে? এ.. এই লোক তো দেখি একদম লম্পট টাইপের?
"কি হলো? ওরকম স্ট্যাচু হয়ে গেলে কেন? সতীনের নামটা হেভি পছন্দ হলো বুঝি?" অরণ্য ততক্ষনে নিঝুমের গালে চুমু খেতে শুরু করেছে। আচমকা নিঝুমের হাতের ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়া থেকে কোনমতে নিজেকে সামলালো অরণ্য। আরেকটু হলে সত্যিই বিছানার উপর পড়ে যেত ও।
"কি ব্যাপার! আর একটু হলেই তো একদম পড়ে যেতাম।" অরণ্য হাসল। নিঝুমের মুখটা অন্ধকার হয়ে এসেছে। সত্যি রাগ হয়ে গেল নাকি? গাধী একটা।
"বেশ হতো। একেবারে সুজির কাছেই চলে যান, আমার কাছে কি জন্য এসেছেন? এক্ষুনি যেয়ে ওই সুজির হালুয়াকেই ভালো বাসুন... আমার কাছে আর খবরদার কোনোদিন আসবেন না," এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে হাফাতে লাগল নিঝুম। লোকটা কি বেহায়া তাও হেসেই যাচ্ছে। এখনও সংসারই করল না ওর সাথে, তার আগেই বলে ওর সতীন আছ একটা। তাকেও বোধহয় এভাবেই চুরি করেই বিয়ে করে বাবার বাসায় রেখে দিয়েছে। নিঝুম এখন কি করবে? সতীনের ঘর ও করতে পারবেনা।
"কি হিংসুটি মেয়েরে বাবা! আমি মনে করলাম এত সুন্দর শান্ত শিষ্ট মেয়ে, নিশ্চই আমার সুজির সাথে মিলেমিশে সংসার করবে। কিন্তু এত দেখছি একদম দুই সতীনের সংসার সিনেমার কুটনি বউটার মতো শুরু করছে। বড় বউটাকে মোটে সংসার করতেই দিবে না। সো স্যাড, ঝুম। তোমার কাছ থেকে আমি এরকম আচরন একদমই আশা করিনি। সুজি তোমার আগে আমার লাইফে এসেছে। ওকে অসম্মান করা তোমার একদমই উচিৎ হবে না। "
নিঝুমের মাথা কেমন বো বো করে ঘুরছে। কি বলছে এসব অরণ্য... ও হিংসুটি?
অরণ্য বেশ মজা পাচ্ছে নিঝুমের শক্ত কাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে। ঝুমকে নরম আর ঠান্ডা ধরনের মেয়ে মনে করেছিল অরণ্য কিন্তু এটা তো সুজির মা বেরুচ্ছে। আচড়ে কামড়ে ওকে সাইজ করে দেবে বেশ বুঝতে পারছে অরণ্য।
"কি হলো, মুখ এমন কুমড়ো পটাশের মত করে আছো কেন? " অরণ্যর কথায় এবার চোখদুটো ভীষন ভাবে পাকাল নিঝুম। ওর মাথার তালু পর্যন্ত জ্বলে যাচ্ছে এখন। এই লোক ওকে ঠকিয়েছে। আগে বউ থাকতে আবার চুরি করে ওকে বিয়ে করেছে। এই লোকের নামে ও যদি কেস না করেছে তে ওর নাম নিঝুম না।
"একদম হাসবেন না... ওই সুজি, ফুজি ওকে কবে বিয়ে করেছেন? আর আমার কাবিনের কাগজ কই? আমি... আমি করব না আপনার সংসার। আপনি ভাবলেন কি করে যে আমি সতীন নিয়ে সংসার করব? আর আপনি এই কথা সবার সামনে কেন লুকালেন? এই লুকোচুরির কি মানে? "
নিঝুমের গলায় কান্না এসে আটকে যাচ্ছে। কি করল এটা অরণ্য ওর সাথে?
"ওয়েট ওয়েট, আগে তোমার সতীনকে তো দেখো। ও কিন্তু আবার আমার বুকের পাশে ছাড়া ঘুমায় না। বুকের কাছে চেপে ধরলেই এমন কামড় দেয় যে দাঁত বসে যায় আর অয়নের কাছে দিয়ে আসলেও আবার আমার ঘরে চলে আসে।"
নিঝুম বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে। ও মাই গুডনেস! অরণ্য নিজের বউকে অয়নের কাছে দিয়ে আসে? এসব কি হেয়ালী ধরনের কথাবার্তা। অরণ্যকে দেখে তো পুুরো সুস্থই মনে হয়। নাকি ও মানসিক ভাবে সিক? নিঝুমের হাত পা ঘামতে থাকে।
"দেখতো তোমার সতীন কেমন? সংসার করতে পারবে?" অরণ্য নিজের মোবাইলটা নিঝুমের সামনে এনে ধরল।
"ওমা এটাতো একটা বিড়াল!"
"হ্যাঁ তো। ওকে আদর করলে কি সুন্দর গরগর করে শব্দ করে। আর তুমি তো খালি ট্রেনের বগির মত নড়তে থাকো। "
"তো আমি কি বিড়াল নাকি যে আদর করলে গরগর করব। অসহ্য! আর কত বড়ো বাজে কথা বললেন আপনি। আমি আন্টিকে বলে দিব। ওই সুজির সাথেই যেন আপনার ঘটা করে বিয়ে দেয়। "
"আচ্ছা দুষ্টামি বন্ধ। এবার ভাল করে একটা আদর দাও প্লিজ, কালকে থেকে একদম খালি পেটে আছি। "
অরণ্য যথাসম্ভব করুন গলায় আবদারটা করল।
"আপনি গোসল করলে গোসল করে কাপড় পাল্টান। আর আর আজ আপনার অফিস নেই? আপনি এত বেলা পর্যন্ত এখানে আছেন, এখন তো এখান দিয়ে নামতে গেলে যে কেউ দেখে ফেলবে।" নিঝুম আদর দেওয়া দূর... ওসব বোঝার ধার কাছ দিয়ে গেল না। অরণ্য ভাবে কি নিজেকে? আর নিঝুমকে নিয়ে খালি মজা করবে? ওর ফিলিংস নিয়ে খেলতে খুব মজা লাগে... না? প্রথমদিন নিজে না এসে অয়নকে পাঠিয়েছে। আবার আজকে বলে ওর সতীন আছে। সবকিছুর একটা লিমিট থাকা উচিত।
"ফেললে ফেলবে, কি আর করা... লোকের এত দেখার শখ হলে আমি কি করে ঠেকাব। আরও ভাল হতো যদি এখনই শাশুড়ি আম্মা দেখে ফেলত। তাহলে এখনই একটা সালিশ বসত আর সেইদিনের মতো বিয়ে দিয়ে দিত। আমি এতক্ষনে বউ নিয়ে বাড়ি চলে যেতে পারতাম। এই আশুটাই হলো যত নষ্টের গোড়া... কেন যে ওনাকে সরিয়ে নিয়ে গেল।" অরণ্য আফসোস করতে করতে বিছানায় বসে পড়ল। আজ অফিসে যাবে না ও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। সন্ধ্যার পর একটা কাজ আছে ওর কেরানীগঞ্জে, তার আগ পর্যন্ত আজ নিঝুমকে সঙ্গ দিবে ও।
"কি! আম্মু দেখে ফেললে ভাল হতো? আপনার মাথা ঠিক আছে?" নিঝুম চোখ বড়ো বড়ো করে জানতে চাইল। ওর বর কি পাগল হয়ে গেল?
"না ঠিক নেই। এত কষ্ট করে আসার পর বউ দূর ছাই দূর ছাই করলে মাথা ঠিক থাকে কি করে?"
"ইহ বললেই হলো। আমি মোটেই আপনাকে দূর ছাই বলিনি। বরং আপনি উল্টো আমাকে কষ্ট দেন সব সময়।"
নিঝুমের এবার একটু হাসি পাচ্ছিল। বুড়ো খোকা কেমন আহ্লাদ করছে দেখ। পাঁজি একটা লোক... ওর শান্তি নষ্ট করে এখন সাধু সাজছে।
"কি আশ্চর্য আপনি এখন শুচ্ছেন কেন? অফিসে যাবেন না।"
"না, আজ সারাদিন ঘুমাব।"
"কি? "
"কি.... কী? যাবনা আজ তোমার রুম থেকে, দেখি কি করো।"
"সত্যি " নিঝুম অবাক হয়, সারাদিন ওর সাথে থাকবে অরণ্য!
"হুমম। কিন্তু আমার আদর চাই। "
"আমি, আমি আপনার নাস্তা নিয়ে আসি। "
" আদর "
"অরণ্য.. "
" ঝুম "
"এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে "
"আচ্ছা থাক তাহলে, আমি বাসায় যাই।"
"এই না প্লিজ, আমি দৌড়ে গিয়ে নাস্তা নিয়ে আসছি।"
"আগে আদর করো"
"ঘোড়ার ডিমের আদর... ওই এক জিনিস ছাড়া আপনার মাথায় আর কিছু অসে না? কালকে থেকে ওই এক পচা জিনিস নিয়ে ঝগড়া করছে। " নিঝুম মুখ ভেংচি দিয়ে অরণ্যর পাশে গিয়ে বসল। " জ্বালিয়ে শেষ করল।"
"তো কি করব? নিজেও দিবে না, অন্য কারে কাছে যেতে চাইলে অনুমতি মিলবে না... এটা কিন্তু ঠিক না বউ।"
কথাটা বলে হেচকা টানে নিঝুমকে বুকের উপর নিয়ে আসল অরন্য। এরপর আস্তে করে ওর দুচোখের পাতার উপর চুমো খেল। এরপর নিঝুমকে জোরে বুকের সাথে চেপে ধরল। " আচ্ছা থাক লাগবেনা। তোমার যখন দিতে মন চায় তখনই দিয়ো। এখন এখানে চুপটি করে একটু শুয়ে থাকো। একটুও তিড়িং বিড়িং করতে পারবে না। "
"না প্লিজ। এখন আগে নাস্তা নিয়ে আসি। না হলে আম্মু আবার চলে আসবে।"
"ঝুম প্লিজ একটু বুকের মধ্যে থাক না। একটুক্ষন, আমি ইদানীং খুব যন্ত্রনার মধ্যে সময় কাটাই। তুমি কাছে আসলে এক ধরনের যন্ত্রনা হয়, দূরে গেলে আরও বেশি যন্ত্রনা হয়। "
অরণ্যর কথায় কেমন যেন হু হু করে উঠে নিঝুমের বুক। উত্তর দেবার কোনো ভাষা খুঁজে পায় না ও। লোকটা হাসতে হাসতে হঠাৎ এমন করে কথা বলে কেন? কি উত্তর দিবে এখন নিঝুম।
"ঝুম একটা কথা বলি? "
নিঝুম উত্তর দেয় না। ওর মন খারাপ হচ্ছে।
"আচ্ছা আমি যদি কখনও কাজে বের হয়ে তোমার কাছে আর কনোদিন ফিরে না আসি, তুমি কি আমাকে একদম ভুলে যাবে?"
কথাগুলো দিয়ে অরণ্য বোধহয় ওকে কিছু বোঝাতে চাইছে কিন্তু তার আগেই নিঝুমের বুকের
ভেতরে অদ্ভুত এক কষ্টেরা দানা বাঁধে।
নিঝুমের মনে হয় ওর শ্বাসটা বন্ধ হয়ে আসছে।
তাড়াতাড়ি অরণ্যর বুকে মুখ লুকায় নিঝুম। ইদানীং কথায় কথায় চোখে পানি চলে আসে ওর অজানা সব অনুভূতিরা হয়ে উঠছে তার সঙ্গী।
.......................................
আজ সকাল থেকে আসমা এত ব্যাস্ত যে কারও সাথেই ঠিক করে কথা পর্যন্ত বলতে পারছে না। রাতের লঞ্চে সবাইকে নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে চান। কেবিন বুক করা হয়ে গিয়েছে, অয়নকে ফোন দিয়ে তাই তাড়াতাড়ি বাসায় আসার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন আসমা।
মুশকিল হলো আগে অরণ্য দেরী করত কিন্তু নিঝুমের পাল্লায় পড়ে সে এখন খানিকটা সাইজ হয়ে এসেছে। কিন্তু অয়নটা খালি তাল বাহানা করে। অফিস থেকে বের হয়ে দুটো ছেলেই যার যার মনের মানুষের কাছে ছোটে। মেয়ে না থাকার দুঃখ একটু হলেও এখন বোধ করছেন আসমা।
রুমানাকে ফোন দিয়ে টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার ভরে ফেলল আসমা। যা নিয়েছেন তাতে সবার রাতের খাবার ভাল মতো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। এখন শুধু আল্লাহ আল্লাহ করে ঠিকমতো লঞ্চে উঠতে পারলে হয়, ঢাকা শহরের এই জ্যামটাকেই বড়ো ভয় পান তিনি।
"নিঝুম তাড়াতাড়ি কর। আসমা আপা ফোন দিয়েছিলেন। ওনারা কলেজগেট পার হয়ে গিয়েছে।"
রুমানা শাড়ির আঁচলটা পিনআপ করতে করতে বললেন। নিঝুমটা একদম ঢিলেমার্কা হচ্ছে। আজকাল বেশিরভাগ সময় রুমের মধ্যে বসে বসে কি করে কে জানে?
"আম্মু আমি রেডি।"
আশু একদম কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাজির।
"তুই তো রেডি, কিন্তু যার শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি তিনি কই?"
"আপু কাজল দিচ্ছে।"
"তাড়াতাড়ি করতে বলো তোমার বোনকে।"
নিঝুম তাড়াহুড়োতে চুল কোনোমতে হাত খোঁপা করে নিল। এদিকে মা চিল্লাচ্ছে, আরেকদিকে ওই অসভ্য লোক একটার পর একটা বাহানা করে যাচ্ছে। ঝুম শাড়ি পর প্লিজ। সাথে হাত ভর্তি করে চুড়ি পরবা কিন্তু। কোনোরকম লিপস্টিক দিবা না কিন্তু খবরদার।
"অসভ্য লোক একটা, খালি নিজের ফায়দা বোঝে।"
সাথে তার পুরো শেভিং কিটটাই এখানে। ওগুলো ভরতে ভরতে নিঝুমের দেরী হয়ে গেল আর মা একভাবে ওকে বকেই যাচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত নিঝুমরা যখন গাড়িতে বসল তখন চারদিকটা অন্ধকার হয়ে গেছে। অয়ন ভাড়া করা মাইক্রোর সামনে বসেছে। আসমা আর রুমানা মাঝের সীটে। নিঝুম, আশু আর অরণ্য পিছনে বসল। গাড়ি ছাড়তেই আশু কানে হেডফোন দিয়ে চোখ বুঁজে গান শুনতে লাগল।
নিঝুম বার বার চেষ্টা করেও অরণ্যর হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না। যতই নিঝুম ওর হাত ঠেলে দূরে সরাচ্ছে ততই ওর খোলা পেটে হাত বুলাচ্ছে অসভ্য লোকটা। নিঝুম না পেরে শেষে হাল ছেড়ে দিল।
"যা করেন বুঝে শুনে করেন, সামনে কিন্তু মা আর শাশুড়ি দুজনেই আছেন।"
নিঝুমের কথা রাখতেই যেন অন্ধকারের মধ্যে ওর গালে একটা চুমু খেয়ে নিল অরণ্য।
চলবে........
Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top