১৩
( অপ্রাপ্ত বয়স্কদের না পড়ার অনুরোধ রইল)
"অরু... তোর আর কত সময় লাগবে?"
"এই তো বের হচ্ছি মা। "
"ওরা তো এসে গেছে।"
"এসে গেছে!"
"হ্যাঁ...। "
"অয়ন আসছে?"
"না... তোরা দুটোই এক রকম। এখন ওকে আর কি বলব, তোর শ্বশুরবাড়ি তোরই খোঁজ নাই, ওর তো পিঠের আত্মীয়। তাছাড়া অয়নের আজ দেরি হবে বাড়ি ফিরতে... পাঁচটার আগে অফিস থেকে বের হতে পারবেনা আগেই বলে দিয়েছে।"
"আম্মু আমি আসছি, গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরছি না। সরকারি চাকরিতে শ্বশুরবাড়ির লোক আসা উপলক্ষে কোন বিশেষ দিবস বা ভাতার ব্যবস্থার নিয়ম নাই। বসের কাছ থেকে ছুটি ম্যানেজ করতে হয়। "
"সে তুমি আমাকে বোঝাতে এসো না। তোমার বাপও সারাজীবন সরকারি চাকরি ই করেছে। আমাকে ওই বিষয়ে একদম জ্ঞান দিতে আসবি না তোরা কেউ। আর তিন পাতিল দই আন আসার সময়, টক মিষ্টি যেটা ওটা আনবি।"
"আচ্ছা। আর কিছু? "
"না কিন্তু তুই তাড়াতাড়ি আয়। নিঝুমকে অনেক সুন্দর লাগছে শাড়িতে.. লাল একটা জামদানী। একদম বাড়ির বউয়ের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে আজকেই রেখে দেই," আসমা তৃপ্তি সহকারে কথাগুলো বললেন।
মার কথা শুনে হেসে ফেলল অরণ্য। ঝুম বোধহয় ওই শাড়িটাই পরেছে। শেষ পর্যন্ত ওটাই বিয়ের শাড়ি হয়ে গেল ঝুমের, একেই বলে ভাগ্য।
"তা বউ যখন বাড়ও এসেই গেছে, রেখে দিলেই হয় একেবারে... এক খরচেই হয়ে যেত," আসমাকে কথাটা বলেই ফোন কাটল অরণ্য... না হলে মায়ের ডাবল ডোজের ঝাড়ি হজম করতে হবে এখন ওকে।
আসলে ঝুমকে দেখতে প্রথম দফাতেই অরণ্য গেলে আর কোন সমস্যাই থাকত না। ওই দিনে সব ঠিক হলে ছেলে পক্ষের একটা বাড়তি জোর থাকত। বিয়ের তারিখ দেরিতে ফেলার ব্যাপারে দিলারা ফুপু তখন আর এত মোচড়া মোচড়ি করতে পারতেন না। কিন্তু সেই জিনিসই ওরা দ্বিতীয় দফায় যেয়ে ঠিক করেছে। এখন তো মেয়ে পক্ষের ওজর ইতিমধ্যে আকাশে উঠে গেছে। কিন্তু ছেলের যে এখন এই মেয়েই চাই। তো বাধ্য হয়েই নিঝুমের অভিভাবকরা যে তারিখ বলছে তাতেই রাজি হতে হচ্ছে ওদের। সব দোষ তোর অরণ্য... সেদিন একটু কম বুঝলে আজ তোর এই দিন দেখতে হতো না।
দই কিনে বাসায় ঢুকতে ঢুকতে একটু দেরিই হলো অরণ্যর। এক গ্রুপকে ততক্ষণে খেতে বসিয়ে দিয়েছেন আসমা বেগম। বেশ অনেক গেস্টই এসেছে নিঝুমদের সাথে। অবস্থা দেখে রুমানা নিজেও আসমার সাথে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করছেন।
অরণ্য বাসায় ঢুকতেই নিঝুমের মুখটায় স্মিত হাসি দেখলেন আসমা। মেয়েটা এতক্ষণ কেমন মুখ শুকনো করে ঘুরছিল অসহায়ের মতো। অরণ্যকে দেখে যেন হালে পানি পেল বেচারি। ভাল খাতির হয়েছে দুটোর। অরণ্য ইদানিং প্রায়ই রাত করে বাসায় ফেরে, মনে হয় আসার পথে নিঝুমের সাথে দেখা করে আসে। অরণ্যর রাতের খাবার প্রায়দিনই সকালে ওভাবেই টেবিলে পড়ে থাকতে দেখেন আসমা, নিজের হাতেই সেগুলো তোলেন তিনি। মনে মনে এ দুটোর বিয়ে খুব শীঘ্রই দিতে হবে ভাবলেন তিনি।
ভাগ্যিস পুতুলের সাথে অরণ্যর বিয়েটা ঠিক হয়নি। তাহলে বড়ো ছেলের এই চুরি চুরি প্রেম করাটা বোধহয় আসমার আর দেখা হতোনা। মুচকি হাসলেন আসমা। বাচ্চারা বড়ো হতে থাকলে সব বয়সেই কিছু কিছু মজার স্মৃতি তৈরি করে নিজেদের অজান্তেই, বাবা-মা হিসেবে সেটা উপভোগ করা একটা সৌভাগ্যের বিষয়। সকলের ভাগ্যে সেটা জোটেনা।
অরণ্য বাঁধ না সাধলে অবশ্য পুতুলের বাবা-মায়ের প্রস্তাবটা আসমার ভালই লেগেছিল। তবে অরণ্যর মতো ওর বাবারও ওই প্রস্তাব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। দিলারা আপা বেশ অনেকদিন ধরেই নিঝুমের কথা অরণ্যর বাবাকে বলছিলেন। কিন্তু অরণ্য তখন কোনভাবেই বিয়েতে রাজি ছিল না, তাই রায়হান সাহেবও আর অত গরজ দেখাননি। তবে এবার আসমা নিজেই আগ্রহী হয়ে মেয়ে খুঁজছিলেন৷
আসলে আসমার মনে হয় অয়ন কারো সাথে প্রেম করে। কিন্তু আসমা জিজ্ঞেস করলে ছেলে কিছুই বলে না। আসমা আকারে ইঙ্গিতেও জানতে চেয়েছেন। কিন্তু অয়ন তার ধারকাছ দিয়েও যায় না। অরণ্যর তুলনায় অয়নটা একটু চাপা। অরণ্যর বিয়েটা তাই তাড়াতাড়ি দিতে চান আসমা। বড়োটার বিয়ে হলেই উনি অয়নের বিয়ের তোরজোর শুরু করবেন। অরণ্যর সাথে এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু কথা বলতে চান তিনি। অয়নের পছন্দের মেয়েটা কে জানতে হবে আর এটা অয়নের পেট থেকে একমাত্র অরণ্যই বের করতে পারে।
তবে পুতুল মেয়েটা একেবারে আহ্লাদী ধরনের। খুব সুন্দর আর টিপটপ, চেহারায় কোথাও কোন খুত পাওয়াও মুশকিল কিন্তু তারপরও সব সৌন্দর্য ছাপিয়ে তার আচার আচরনে বড়োলোকের আদুরে বাচ্চার ছাপ বেশি। বড়ো হলে মানুষের চরিত্রে গভীরতা বলে একটা ব্যাপার থাকে, সেটা খুবই কম। আসমা বুঝতে পেরেছেন পুতুল অরণ্যকে পছন্দ করলেও ওর মনের গলির রাস্তা চেনে না।
নিঝুম আবার সেই দিক থেকে পটু বলতেই হবে। অল্প কিছুদিনেই সে কানাগলিতে যাবার পথ খুঁজে নিয়েছে, যে কেউ মনে করবে অরণ্যর সাথে বুঝি সে একশ জনম ধরে সংসার করছে। সামনে অরণ্যর সাথে তেমন একটা কথা বলে না কিন্তু ওদের বোঝাপড়াটা ভাল। আসমা খেয়াল করেছেন। এখন অয়নটার জন্য এমন একটা মেয়ে পেলে বেশ হত, তাহলে তার চিন্তাটা মোটামুটি শেষ হতো।
অরণ্য নিজের ঘরে ঢুকেই একটানে আগে গায়ের শার্টটা খুলল। কি প্রচন্ড গরম। ঘামে পুরো শরীর একদম জবজব করছে। আলমারি খুলে নীল রঙের একটি পাঞ্জাবি বের করল ও। পরতে যাবে তখনই মনে হলো লালচে মেরুন রঙের একটা পাঞ্জাবি আছে ওর। কিন্তু খুঁজতে গিয়ে কোথাও পেল না অরণ্য ওটাকে। অয়ন নিল কি? মাঝে মাঝে ও নিয়ে অবশ্য পরে।
অয়নকে ফোন দিতেই বলল, " সরি ভাইয়া, ওটা আমার আলমারিতে আছে। নিয়েছিলাম কিন্তু পরা হয়নি, ইস্ত্রী করাই আছে। "
অরণ্য গায়ে তোয়াল চাপিয়েই অয়নের রুমে ঢুকল। ওদের দুভাইয়ের রুম পাশাপাশি আর রুমের পিছনে একটা কমন বারান্দা। ওরা যাতায়াতের জন্য এই পথটাই বেশি ব্যবহার করে। অয়নের আলমারির সব তাক খোঁজ করেও যখন নিজের পাঞ্জাবির সন্ধান মিলল না অরণ্য তখন রীতিমতো বিরক্ত।
অয়ন আজকাল বড় কেয়ারলেস হয়ে যাচ্ছে। কোনো কিছুরই যত্ন করে না। ঝুমের শাড়ির রঙের সাথে ম্যাচ করে পাঞ্জাবিটা পরতে চাইল অরণ্য আর কি একটা অবস্থা ... ধুর।
পাঞ্জাবি না পেয়ে রেগে আলমারি লক করতে গিয়ে পায়ের কাছে ঝপ করে এত্তগুলো কাগজ এসে পড়ল আলমারি থেকে। উঠিয়ে আবার জায়গামত রাখতে গিয়ে একটা বাঁশপাতা রঙের খাম চোখে পড়ল অরণ্যর। উপরে লিখা ভেরি আই.এন.পি। ওটা খুললে একটা সাদা কাগজ বেরিয়ে এল। কারও একজনের বায়োডাটা। কোনায় পাসপোর্ট সাইজের একটা মেয়ের ছবি। নাম অহনা ইসলাম। অরণ্য একটা মুচকি হাসি দিয়ে কাগজটা আবার জায়গামত রেখে দিল। অয়ন আজকাল ভেরী ইনপরটেন্টদের চাকরি দিয়ে বেড়ায় মনে হচ্ছে। জিজ্ঞেস করতে হবে তো... তলে তলে ভাই আমার কি গুল খিলাচ্ছে আল্লাহই জানে।
ঘরে এসে নীল পাঞ্জাবিটা গায়ে চাপাতেই খুট করে একটা শব্দ হলো। তাকিয়ে দেখে মহারানীর পদার্পন ঘটেছে ওর রুমে। নিজেকে ধন্য ধন্য মনে হলো অরণ্যর। বউ তার লাল শাড়ি পরে চলে এসেছে একেবারে। সাথে কি সুন্দর করে খোঁপাও করেছে.. ওকে দেখে মুখটা আবার লজ্জায় লালও হচ্ছে।
কিন্তু এই মেয়ে খালি এত লাল হয় কেন কে জানে?
"আন্টি আপনাকে এটা পরতে বলেছে।"
অরণ্য তাকিয়ে দেখল ঝুমের হাতে ওই মেরুন রঙের পাঞ্জাবিটা। তারমানে এটা আম্মুর কাছে ছিল।
"বুঝলাম না কে বলেছে? " অরণ্য ইচ্ছে করে প্রশ্নটা করল।
"আন্টি " নিঝুম খুব নিচু স্বরে বলল। ওর খুব অস্বস্তি হচ্ছে। একেত ও আজ সত্যি আসতে চায়নি। বিয়ের আগে ছেলের বাড়ি দেখতে মেয়ের নিজের আসা কেমন একটা যেন। কিন্তু আন্টি কাল বারবার করে বলেছেন ও যেন অবশ্যই আসে... না হলে নিঝুম সত্যি আসত না।
গতকাল অরণ্যর কথা মতো আসমা আন্টির সাথে জুয়েলার্সে যেয়ে চুড়ির মাপ দিয়ে এসেছে নিঝুম। সাথে ওর জন্য সুন্দর একটা নাকফুল আর সীতাহারও অর্ডার দিয়েছেন আন্টি। নাকফুল নাকি অরণ্য নিজে অর্ডার দিতে বলছে।
নিঝুম শুনে কি লজ্জায় পড়ে গিয়েছিল। আন্টি কি মনে করছেন আল্লাহ জানে। যদি মনে করে দেখ বিয়ে হয় নাই তার আগেই ছেলে বউয়ের পছন্দে চলতে শুরু করছে... উগগ্। এই লোকের নাকে একটা খামচি দিতে পারলে খুব শান্তি লাগত নিঝুমের... একদম অসভ্য একটা।
"কোন আন্টি?" অরণ্য এমন ভাবে প্রশ্ন করল যে বুঝতে পারছেনা নিঝুম কার কথা বলেছে।
" আসমা আন্টি, আপনার আম্মু। "
"আমার আম্মু তোমার আন্টি হয়!" অরণ্য বেশ রহস্য করে বলল।
নিঝুম এবার একটু বিপাকে পড়ল। কি উত্তর দিবে এখন ও অরণ্যকে? যদিও জানে, এতে কেউ কিছু মনে করবে না কারন ওদের বিয়ের কথাটা অরণ্য পাঁচকান হতে দেয়নি। ব্যাপারটা অরণ্য ভাল মতোই ম্যানেজ করে ফেলছে। তবু জানুক আর না জানুক বিয়েতো সত্যি সত্যি হয়ে
গেছে আর সামনে দাঁড়ান এই পচা লোকটা এখন ওর অনেক কিছু৷ সে জন্যই পরবে না পরবে না করেও শেষে পর্যন্ত আবার এই শাড়িটাই পরে এসেছে নিঝুম৷ জানে এটা দেখলে অরণ্য খুশি হয়ে যাবে। আর অরণ্যর খুশিটা এখন অনেক কিছু নিঝুমের কাছে। কিন্তু তাই বলে এ কথাটা অরণ্যকে ভুলেও বলবে না নিঝুম । না হলে অমনি মাথায় উঠে বসবে এই লোক আর তখন কি রেখে কি আবদার করবে তার কোনো ঠিক ঠিকানা থাকবে না। তাই কপালটা একটু কুঁচকে নিঝুম বলে উঠল,"জানি না। আপনি প্লিজ এটা পরুন, আমি যাচ্ছি।"
নিঝুম হাতের পাঞ্জাবিটা অরণ্যর দিকে এগিয়ে দিল।
"যাবে বলে এসেছিলে? "
অরণ্য গায়ের তোয়ালটা বিছানায় ছুড়ে দিয়ে পাঞ্জাবি নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে পাঞ্জাবির সাথে একটানে নিঝুমকেও বুকের উপর নিয়ে আসল। ঘটনার আকস্মিকতায় নিঝুম এবার একটু ঘাবড়ালো। অরণ্যকে আজকে একটু কেমন অন্যরকম লাগছে, একটু বেসামাল। চোখদুটো কেমন যেন বড্ড সাহসী। নিঝুম ভয় পেল। ও কোন মতে বলল," প্লিজ অরণ্য সবাই আপনাকে খুঁজছে।"
অরণ্য ততক্ষণে নিঝুমকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে। ঝুমের মাথায় একটা ছোট্ট গোলাপ আছে খোঁপার নিচে। ফুটে থাকা ফুল নয় গোলাপের কুড়ি। নাক দিয়ে ওটার ঘ্রাণ নিল অরণ্য, তারপর নিঝুমের গলার ভাঁজে নাক ডুবাল।
"খুঁজলে খুঁজছে... তো আমি কি করব?"
নিঝুমের মনে হলো ওর হৃদপিণ্ডটা এক লাফ দিয়ে বের হয়ে যাবে যে কোন সময় ওর শরীর থেকে। লোকটার কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই! এই রকম খালি গায়ে, নিঝুমের তো গা রীতিমতো ঠকঠক করে কাঁপছে। তার উপর আবার অরণ্য নিজের নাক ওর ঘাড়ের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়েছে। নিঝুমের মনে হলো ও এখন শিওর অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে।
"অরণ্য প্লিজ ছেড়ে দিন। আপনি এরকম করবেন জানলে আমি কক্ষনো এ ঘরে আসতাম না। "
"হু... নিষ্ঠুর একটা বউ। বিয়ে হয়ে গেছে তাও একটুও ভালবাসে না," অরণ্য এবার মুখ ফোলাল।
"হ্যাঁ আমি খারাপই, ওরকম চুরি করে বিয়ে করে আবার বুক ফুলিয়ে বলা হচ্ছে। এত সাহস থাকলে যান... সবার সামনে যেয়ে বিয়ের কথাটা বলে দিন। "
অরণ্য এবার সত্যি সত্যি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ঝুমের কথাটাও সত্যি। কথাটা শ্বশুরের কানের কাছে বলতে পারলে বেশ কাজ হতো, মেয়ে আজই রেখে যেত। ওকেও আর এত কষ্ট করে রোজ রোজ পাইপ বাইতে হত না। এই বউ ওকে মানুষ থেকে একপবারে ওরাংওটাং বানিয়ে ফেলল।
গলায় খানিকটা অভিমান ঢেলে অরণ্য বলে উঠল,"আচ্ছা ধরলাম না যাও।"
সত্যিই এবার নিঝুমকে একটু ঠেলে সরিয়ে দিয়ে পাঞ্জাবিটা নিয়ে গায়ে চড়াল অরণ্য।
নিঝুমের ঠিক কেমন লাগল অরণ্যকে বোঝাতে পারলনা। অরণ্য ওকে জড়িয়ে ধরলে বুকটা কেমন অদ্ভুত ভাবে কাঁপছিল, তানপুরার তারের মতো...
ছেড়ে দিলে আবার ঠিক একই রকম কষ্ট হতে লাগল। নিঝুম বুঝতে পারছেনা কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক। ওর সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে, সাথে কান্নাও পাচ্ছে। অরণ্য কি ওর কথায় সত্যি রাগ করল?
"আরে আরে... একি আমার পাটরানীর চোখে জল কেন? " অরণ্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জানতে চাইল।
"মোটেও না... আমার চোখে কোন জল নেই।
আর পাটরানী মানে? আরও বিয়ে করবেন না কি?" নিঝুম অভিমানে মুখটা অন্যদিকে ঘোরাল।
"পানি নেই কিন্তু আসি আসি করছে। "
"একটুও না।"
"বউ আমি কিন্তু পুলিশ। চোরের স্বীকার আগেই চেহারা দেখে ধরে ফেলি। "
"আ...মি... আমি চোর!"
"তা আর বলতে। সাথে ডাকিনী, যোগিনী, মায়াবিনী আরো কত কিছু। একবার হাত খামচে ধরেই এই রকম একটা লোককে বশ করে ফেলেছ। অথচ পুতুল দুই বছর ধরে চেষ্টা করেও পারলনা। তোমার এই বিদ্যা আমাকেও একটু শিখাও দেখি। আমিও তোমার উপর একটু প্রয়োগ করি।" অরণ্য হাসল।
কিন্তু পুতুলের নাম উচ্চারন করার সাথে সাথেই নিঝুমের মনযোগ পুরো ওই দিকে চলে গেছে। মনে হলো খচ করে একটা কাচ ওর বুকের মধ্যে ফুটল। সত্যি কাচ ফুটলেও বুঝি এত যন্ত্রনা হতো না। ও বুঝতে পারছে অরণ্য পুতুলকে ফিরিয়ে দিয়ে ওকে বিয়ে করেছে। কিন্তু তারপরেও অরণ্য ওই পুতুলের নাম নিলেই ওর রাগে পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলে যায়। ওই মেয়ে অরণ্যকে পছন্দই বা কেন করবে? অরণ্য ওর। কেউ অরণ্যর চিন্তা করলেও নিঝুমের সেটা সহ্য হবেনা... আর সেটা মনে মনে চিন্তা হলেও হবেনা।
তুড়ি বাজানোর শব্দে অরণ্যর দিকে আবার ফিরে তাকাল নিঝুম। অরণ্য তখন গভীর মনোযোগ দিয়ে ওকে দেখছে।
"কি হলো? ম্যাডামের মুড এমন ফিফটি থেকে হানড্রেড হলো কেন হঠাৎ?"
"কিছু না। আপনি আসুন, আমি যাচ্ছি।"
"ওয়েট... " কাছে এসে অরণ্য নিঝুমের মুখটা এবার উঁচু করে ধরল।" অনেক সুন্দর লাগছে আমার বউকে। এই শাড়িটা পরে আসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। "
নিঝুমের আগুনের মতো তেতে উঠা বুকটা আবার ঝড়ের ঠান্ডা বাতাসের মতোই ঠান্ডা হয়ে গেল এক লহমাতেই। একটু আগের রাগটা গলে পানি হয়ে গেল। নিজের অনুভূতি গুলোর এরকম অদ্ভুত অদ্ভুত পরিবর্তনে নিঝুমের বেসামাল অবস্থা।কোন অনুভূতিটা সত্যি... আগেরটা না পরেরটা। অরণ্য ছুঁয়ে দিলেও রাগ হয়, সরে গেলেও কান্না পায়। এ কেমন বিপদ হলো ওর?
"সত্যি সুন্দর লাগছে? ওই পুতুলের থেকেও বেশি?"
নিঝুমকে আজ ঠিক ভূতে ধরেছে।
অরণ্য এবার চুপ করে গেল। এখন আপাতত পুতুলকে আলমারিতে তুলে রাখা দরকার। ঝুম বেশি হাইপার হয়ে যাচ্ছে। ঝুম পুতুলকে হিংসা করছে? পাগল মেয়ে কোথাকার। তবে ওর জন্য ঝুমের এই পজেসিভনেসটা দারুন উপভোগ্য।
কিন্তু অযথা ঝগড়া করে এই সুন্দর সময় গুলো নষ্ট করার কোন মানে আছে? নিঝুমের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত অরণ্যর জন্য দুর্লভ। এগুলো ও যত্ন করে রেখে দিতে চায় আজীবন।
কিন্তু এই যা... ঝুমের পাহাড় পছন্দ না সমুদ্র? এখনও তো জিজ্ঞেস করা হয়নি।
......................................................................
খাওয়া শেষে আসমা দুই দিনের জন্য সবাই মিলে অরণ্যর নানুবাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসার প্রস্তাব দিলেন নিঝুমের পরিবারকে, আর তা এই সপ্তাহেই।
রুমানা আর শাহেদ ব্যাপারটা শুনে একটু হকচকিয়ে গেলেন। হুট করে এভাবে ছুটি ম্যানেজ করা তো কঠিন। শেষে ঠিক হলো রুমানা যাবে দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে। শাহেদ দুইদিন পরে আসবে। তারপর আরও একদিন কাটিয়ে ওরা সবাই ঢাকা ব্যাক করবে। অরণ্য হিসেব করল সেক্ষেত্রে ছুটিটা তিনদিনের নিতে হবে ওকে।
নিঝুমদের বিদায় দিয়ে আসমা সাথে সাথেই মাকে ফোন দিল। ছোট ভাই নূর মায়ের কাছেই থাকে। ওকেই সমস্ত দায়িত্ব দিল আসমা। যেচে পড়ে বেয়াই নিয়ে যাচ্ছে, সবকিছুর দিকে খুব খেয়াল করতে হবে তাকে এখন।
অরণ্য নিঝুমদের বিদায় দিয়ে ঘরে এসে শুয়ে পড়ল। আজ ওর খুব পরিশ্রম হয়েছে। ও আর পার্থ মিলে একটা প্ল্যান করছে। একটা খসড়ার মত হয়েছে, কিন্তু ব্যাপারটায় সফলতা কতখানি আসবে এক্ষুনি তা বোঝা যাচ্ছে না। রাইসুল খুব গভীর জলের মাছ। ওর সাথে পারতে গেলে অরণ্যকেও অনেক সতর্ক হয়ে খেলতে হবে।
বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ল অরণ্য।
নিঝুম কলের পর কল দিচ্ছে অরণ্যকে অথচ তার কোন সাড়া শব্দ নাই।
একটু পরে সত্যি সত্যিই রাগ হতে লাগল নিঝুমের কিন্তু তার চেয়েপ বেশি হতে লাগল দুশ্চিন্তা । অথচ বাসায় পৌছেই ওকে ফোন দিতে বলেছিল অরণ্য আর এখন তার নিজেরই কোন খোঁজ নেই।
অবশেষে দেড় ঘন্টা পর ফোন আসল অরণ্যর ফোন থেকে।
"হ্যালো"
"সরি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম,টের পাইনি।"
"ওহ.. আচ্ছা তাহলে ঘুমান। "
"না উঠে গেছি, বল।"
"কিছু না। বাসায় পৌছে ফোন দিতে বলেছিলেন।"
"হুমম। এই কথা পছন্দ হয়েছে তাহলে? আমি তো আরও অনেক কিছু বলি,সেগুলো কেউ কান দিয়েও তোলে না। "
"মানে?"
"মানে কিছু না, একটু রাখবে এক ফ্রেন্ডের সাথে আলাপ আছে একটু। "
অরণ্যর গলায় কি একটু বিরক্তির সুর? ওর ফোন পেয়ে খুশি না হয়ে বিরক্ত হলো? থাক তাহলে, কোনো দরকার নেই কথা বলার। খুব ভুল হয়েছে ফোন করে। আর করবেনা, আর কোনোদিনও করবে না নিঝুম অরণ্যকে ফোন।
অরণ্যকে বাড়তি আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে, ফোনটা কেটে দিল নিঝুম। ও মোটেই কাঁদতে চাচ্ছেনা ওই হার্টলেস মানুষটার জন্য। কি রকম ভাবে বলল যে রাখো।এই কথাটাই ভাল ভাবে বলা যেতনা বুঝি? কি রকম বসের মতো করে বলল।
ফোনটা রাগে বিছানায় ছুড়ে মারল নিঝুম। ছি... এই লোকের জন্য ও আবার শাড়ি পরে গিয়েছিল। একদম একটা বেহায়া। আর একবারের জন্যও যদি কথা বলে নিঝুম ওই লোকের সাথে তাহলে নিজের কাটবে ও... প্রমিস।
রাত আটটা পর্যন্ত আশুর সাথে অযথা এটা ওটা নিয়ে তর্ক করল নিঝুম। এরমধ্যে অরণ্য একটা বারের জন্যও ওকে ফোন দিল না। মানুষটাকি সত্যিই এত পাষান? নিঝুম কি তাহলে ওর মনে একটু জায়গাও করতে পারেনি? থেকে থেকে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো নিঝুমের। মনে মনে নিজের কাছে ওয়াদা করল যে, অরণ্য যদি নিজে থেকে ওকে ফোন না দেয় তাহলে নিঝুম নিজেও আর অরণ্যকে ফোন দিবে না আর এটা সত্যি কথা।
ঘড়িতে রাত তখন দশটা।
নিঝুম এবার শাড়ি খুলতে উঠল। অরণ্য মানা করেছিল খুলতে তাই এতক্ষণ পরে থাকা কিন্তু এখন আর পরে থাকার কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছে না ও। বাসার সবাই আড়ে আড়ে ওকে দেখছেও, আসা অবধি ওই শাড়িতেই এখনও আছে নিঝুম।
অরণ্য হয়ত সেই ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছে যে, পুতুলই আসলে বেস্ট। তাই আর ওকে কল করেনি। ভালই হয়েছে। অনেক্ষন যাবত কান্না ঠেকিয়ে রেখেছিল, এখন আর পারলনা। কি কষ্ট হচ্ছে... বুকটায় থেকে থেকে টন টন করে উঠছে।
কাঁদতে কাঁদতেই দরজা বন্ধ করল নিঝুম। কাপড় পাল্টাতে যাবে,অমনি জানালায় শব্দ শুনে থমকে গেল ও। তাকিয়ে দেখে আসামী হাজির। নিঝুম হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারলনা। কি ভয়ংকর.... এই লোক এক সেকেন্ডের মধ্যে ওর পৃথিবীটা লন্ডভন্ড করে দিতে পারে। প্রায় উড়ে গিয়ে জানালাটা খুলল নিঝুম।
" কি ব্যাপার শাড়ি চেঞ্জ হচ্ছে কেন? এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না। "
"এতদেরি করলে কি করব? আর এটা পরে তো শোওয়া যাবে না,"নিঝুম কথা ঘোরাল।
"না না আমার দেখা এখনও শেষ হয়নি, আমি আগে দেখব। তারপর..."
রাজা হুকুম চালালেন। নিঝুমের মুখ দিয়ে বলার মতো কোন শব্দই বের হলো না। আনন্দের আতিশয্যে ওর বুকের মধ্যে এখন হাজারটা আতশবাজি ফুটছে, কখন কার উপর এতক্ষণ রাগ হয়েছিল সেটা এখন দূর অতীত।
"নাও আগে এটা ধর।"
নিঝুমের হাতে একটা কাগজে মোড়ান প্যকেট ধরিয়ে দিল অরণ্য।
"কি এটা? "
"দেখতে পেলে শুনতে চায় কে?"
নিঝুম খুলে দেখে দুই ডজন রেশমী চুড়ি। লাল আর সবুজ।
" এটা কোথ থেকে আনলেন?"
"পুতুলের কাছ থেকে।"
"মানে? "নিঝুমের মুখটা কালো হয়ে গেল সাথে সাথে।
"মানে তোমার মাথা থেকে এত সহজে পুতুলের টপিকটা বের হবার কথা না, তাই ওটাই বললাম।
বোকার মত প্রশ্ন কর কেন? চুড়িওয়ালার কাছ থেকে কিনলাম। পার্থও কিনল ওর ছোট বোনের জন্য। আমার তো আর বোন নেই, তো কি আর করা, আপাতত একখানা বউ আছে তার জন্যই কিনলাম।"
অরণ্য ইচ্ছা করেই নিঝুমকে খেপাচ্ছে, খেপাতে ভাল লাগছে। এই চুড়ি কেনার জন্য ও দশ মিনিটের পথ অতিরিক্ত হেটেছে। পার্থ আর ও সিভিল ড্রেসেই আজ একটা কাজ করেছে। বিকেল থেকে সেজন্য খুবই ব্যাস্ত ছিল। নিঝুমকে ওই টুকু রুড গলায় না বললে ও ঠিক দশ মিনিট পর আবার ফোন দিত। নিঝুম বুঝতে পারছেনা কিন্তু ওর ভেতরে অনেক পরিবর্তন এসে গেছে এই কদিনেই।
বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত যে মেয়ে একটা ফোন দিত না ওকে সহজে, আজকে সে সকাল থেকে অন্তত ছয়বার ফোন দিয়েছে অরণ্যকে। কাজে থাকলে তখন ফোন রিসিভ করার কন্ডিশনে থাকে না অরণ্য আর সঙ্গে অস্ত্র থাকলে, পুরো দুনিয়া তখন তুচ্ছ লাগে।
নিঝুম চুড়িগুলো হাতে নিয়ে দেখে, ওর চোখে মুখে কেমন একটা প্রশান্তি খেলা করছে।
"আমি কি পরব চুড়িগুলো? "
"তোমার কি মনে হচ্ছে? আমি এগুলো ব্যবসা করার জন্য এনেছি?" অরণ্য কন্ঠে একটু বিরক্তি ফুটিয়ে বলল।
"আমি কি তাই বলেছি।"
লাল চুড়িগুলো খুব বেশি পছন্দ হয়েছে নিঝুমের। ওগুলো সব পরে ফেলল ও এক এক করে। তারপর অরণ্যর সামনে হাতটা ঘুড়িয়ে বলল, "কেমন লাগছে?"
"ভাল। আচ্ছা বউগুলো এত হিংসুটি হয় কেন বলো দেখি? গার্লফ্রেন্ড গুলাই ভালো। তাই বোধহয় সবাই আটটা দশটা গার্লফ্রেন্ড পালতে পারে। ভালো খাওয়া আর গিফট পেলেই ওরা খুশি কিন্তু বউগুলোর সব হাড়ির নাড়ির খবর জানা লাগে। "
"কি বললেন আপনি?"
"কি বললাম?"
"এই মাত্রই তো বললেন বউরা খারাপ?"
"খারাপ কখন বললাম? বলেছি বেশি খবর রাখে।"
"ওহ... আচ্ছা আর রাখব না।"
"আশ্চর্য তুমি খেপছ কেন? তুমি তো আর আমার বউ না। আমাদের তো এখনো বিয়েই হয় নাই তোমার হিসেব অনুযায়ী।"
অরণ্য ইচ্ছে করে খোঁচাটা মারল।
"বিয়ে হয়নি মানে? আপনি আমার সাথে ফাজলামো করছেন? অতগুলো লোকের সামনে কবুল বললাম অথচ বলছেন বিয়ে হয়নি।"
অরণ্য হেসে ফেলল। নিঝুম পুরো আউলে গিয়েছে। তাকে বউ বললে সে বলে বিয়ে হয়নি আর বিয়ে হয়নি বললে খেপে আগুন হয়।
"আমি ফাজলামো করছি না। তোমাকে বাস্তবটা বোঝাচ্ছি। যেটা তোমার সামনেই আছে, তুমিও সেটা দেখছ কিন্তু মানতে চাচ্ছ না। "
নিঝুম দুই ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে রইল। অরণ্য কি বলছে তার মাথামুণ্ডু কিছুই ওর বোধগম্য হচ্ছে না।
"এখনও বোঝনি?"
"এত আকারি কথা আমি বুঝি না।"
অরণ্য ওর দিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুসময়। এরপর আচমকাই নিঝুমের ঠোঁট দুটোকে আক্রমন করে বসল। নিঝুম প্রথম কিছুক্ষণ যুঝল, তারপর হাল ছেড়ে দিল।
নিঝুমের মনে হচ্ছিল ওর চোখমুখ অরণ্যর নিঃশ্বাসের তাপে ঝলসে যাচ্ছে। কিন্তু পুড়তে ভালও লাগছিল। অনুভূতি গুলো এতো গোলমেলে কেন? আসলে বিয়ের পর থেকে ওর ভিতরে ভিতরে কিছু একটা ভাঙচুর চলছে। ওই লোককে খুব তীব্র ভাবে কোনো কিছুতে ও বাঁধা দিতে চাইলে ওর মন সায় দিচ্ছে না। আবার কাছে এলে অস্বস্তি হচ্ছে। আর অরণ্য দূরে গেলে মনে হচ্ছে দমবন্ধ হয়ে ও মরে যাচ্ছে। সম্পর্ক গুলো এমন জালের মতো জড়ান কেন? ছিড়তে গেলেই কোনো না কোনো সুতোয় টান লাগে আর তাতে ছেড়ার বদলে আরও বেশি করে জড়িয়ে যায়।
......................................….............
"অনা..."
"হুম... "
"মা বোধহয় কিছু সন্দেহ করেছে তোমার আমার ব্যাপারে।"
"ও রিয়েলি!"
"হমম, আমি আমার ফ্যামিলির সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। মা বার বার করে জিজ্ঞেস করছে। আমার আর মার সাথে লুকোচুরি খেলতে ভালো লাগছে না।"
"অয়ন... লক্ষীটি, আমাকে আর কয়টা দিন সময় দাও। বাপি আসলে অনুমতি নিয়ে একেবারে দেখা করি।"
"আঙ্কেল কবে আসবে?"
"এই মাসেই।"
"ডেট দেয়নি কোন? "
"না, তবে এ মাসেই আসবে। তুমি চিন্তা করোনা আর ডেটটা আমাদের জন্য খুব স্পেশাল হবে দেখো।"
চলবে...
Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top