১০

"ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায়
আমার ইচ্ছে করে
আমি মন ভেজাবো ঢেউয়ের মেলায়
তোমার হাতটি ধরে।।"

নিঝুম লাল টিপটা দুই ভ্রুর মাঝখানে বসিয়ে দিয়ে গুন গুন করে প্রিয় গানের কলিটা গাচ্ছিল আর নিজেই নিজেকে দেখে লজ্জা পেয়ে হাসছিল। অরণ্যর দেওয়া লাল জামদানীটা পরেছে আজ ও। মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই পরেছে। রুমানা অবশ্য আর কাউকে বলতে নিষেধ করেছেন। শুধু আশু জানে।

নিঝুম দুই চোখে সুন্দর করে কাজল টানল। এরপর পছন্দের লিপস্টিকটা ঠোঁটে বুলাল।
এরপর দরজায় ভাল করে তাকিয়ে কেউ আছে কিনা দেখল।  না কেউ নেই। নিশ্চিন্ত হবার পর  চুপিচুপি টুপ করে শাড়ির আঁচলটা একবার মাথায় দিয়ে দেখল, বউ সাজলে কেমন দেখাবে। শাড়িটা খুব পছন্দ হয়েছে ওর, রংটা একেবারে রক্ত জমাট।  নিজেকে আয়নায় দেখে কেমন অদ্ভুত লাগছে নিঝুমের।। গত বছরও এই দিনে ও ছিল একদম মুক্ত বিহঙ্গের মতো বাঁধন হারা আর এখন কথায় কথায় শর্ত জুড়ে দেওয়ার এক লোক হয়েছে ওর। কিছু হলেই বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফোলায়। দুদিন আগের কথা মনে হতেই হেসে ফেলল নিঝুম।

কি অদ্ভুত দাবী অরণ্যর। জন্মদিনের উপহার চাই তার, তখনই।  নিঝুম এত করে বলল যে, ওদের দুই ভাইকেই শার্ট কিনে দিবে ও কিন্তু না... সাহেবের  তাতে হবে না। তার নগদ চাই। শেষে নিঝুম যেয়ে এক বাটি পায়েশ এনে অরণ্যর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু অরণ্য সেটা ছোঁবেও না, মহা ত্যাদর।

শেষে চট জলদি নিঝুমকেই খাইয়ে দিতে হয়েছে পায়েশটা। তারপরও পাজিটা বলে কি," আমি তো তোমার হাতে খেতে চেয়েছিলাম, এখন তো চামচ দিয়ে খাওয়ালে। "


"তো আর কি চাই গিফট? " নিঝুম বেশ রাগ  হয়েই জিজ্ঞেস করেছিল। ব্যাটা খালি প্যাচাচ্ছে।

"আমার সাথে সুন্দর করে সেজেগুজে বাইরে খেতে যেতে হবে। "

অরণ্যর আবদার শুনে নিঝুম পুরো হা। বলে কি এই লোক!

"মানে? ওই দিনই না গেলাম আপনার সাথে খেতে!"

"তো কি? ওই দিন তো ওই দিনই চলে গেছে। আর ওই দিন তুমি আমার মন খারাপ করে দিয়েছিলে। এবার সেরকম  কিছু হওয়া যাবে না, " অরণ্য মুখ বেঁকিয়ে বলেছিল। কি অন্যায় আবদার।  বিয়ের আগে এভাবে ঘন ঘন বাইরে যাওয়া কি ঠিক?

"দেখুন আমাদের তো আর প্রেমের বিয়ে হচ্ছে না, আমরা এত বার করে বিয়ের আগে দেখা করলে লোক কি মনে করবে?" নিঝুম মনের কথাটা চাপিয়ে রাখতে পারেনি।

"ওহ... তারমানে আগে থেকে প্রেম করলে এখন আমার সাথে যেতে?" অরণ্যও দমে যাওয়ার পাত্র নয়।

"আশ্চর্য.... এ কথা আমি কখন বললাম?"

নিঝুমের পাগল হবার দশা। নিঝুম বেশ বুঝতে পারছিল, এই লোক ওকে পাগল বানিয়ে তবে ঠান্ডা হবে। শুধু এক প্রসঙ্গ থেকে আরেক প্রসঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যায়।

"মাত্রই তো বললে। একটু আগেই তুমি বললে যে আমাদের বিয়েটা প্রেমের না। এরমানে কি? আগে থেকে প্রেম করলে তুমি বিশ্বাস করে আমার সাথে যেতে আর যেহেতু তোমার সাথে আমার সম্মন্ধ করে বিয়ে হচ্ছে তাই আমার প্রতি তোমার সেই আস্থা নেই, তাইত? " অরণ্যর মুখটা তখন দেখার মতোই হয়েছিল, রেগে একদম মোরগের ঝুটির মতো লাল। 

"আহ্ আপনি কোন কথা কোথায় নিচ্ছেন।  আমি তো বলিনি যে প্রেম করলেই যেতাম। এটা একটা কথার কথা বলেছি, আপনি শুধু শুধু রাগ হচ্ছেন, " নিঝুম অরণ্যকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা.. পুরো চেষ্টাটাই বৃথা নিঝুমের।

"তুমি যা বললে ঝুম তাতে সেটাই দাঁড়ায়। কিন্তু তোমার কথায় আজ আমি সত্যি খুব দুঃখ পেলাম। আমি পাগলের মতো তোমাকে  বিয়ে করতে চাচ্ছি  আর তোমার সেটা বাদ দিয়ে প্রেম করার শখ বেশি। তারমানে তোমার কাছে স্বামীর চেয়ে প্রেমিকের মূল্য বেশি।  ঠিকআছে... সকালে উঠেই বিয়ে তিন বছরের জন্য পিছিয়ে দিব। দেখি কত প্রেম করতে পারো।"

অরণ্যর কথায় নিঝুম ভাষা হারিয়ে ফেলল। এই লোক এত দুর্বোধ্য কেন? আর মেজাজ তো একেবারে পাল তোলা নৌকার মতো। মর্জি মতো না চললেই বিপদ... স্রোতের টানে উল্টোদিকেও চলতে শুরু করে মাঝেমাঝে।

"আপনি কি বলছেন এসব পাগলের মতো?"

অরণ্য সামান্য এই ব্যাপারটা নিয়ে এত খেপবে নিঝুম বুঝতেই পারেনি। " বিয়ে কেন পেছাবেন আর বিয়ের ডেট তো এখনো ফাইনালই  হয়নি?"

"ঝুম প্লিজ একদিন আমার সাথে ঘুরলে কি হয়? আমি তো তোমাকে খেয়ে ফেলব না।" অরণ্যর কথায় এবার হেসে ফেলল নিঝুম। এখন আবার গলায় মন খানেক মধু ঢেলেছে ওই লোক। আল্লাহ নিঝুম পাগল হয়ে যাবে ঠিক একদিন।

" ঠিক তো, কথার কোনো নড়েচড় হবে না তো?" নিঝুম সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়।

"একদম না, এই তোমাকে ছুঁয়ে কথা দিলাম। কথার কোনো নড়চড় করব না। একেবারে লক্ষী ছেলে হয়ে বসে থাকব। " অরণ্য নিঝুমের  হাতটা ছুঁয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এই ছোঁয়াছুঁয়িতেই বড়ো ভয় নিঝুমের।

"আকাশ থেকে ফেলবে ছায়া
মেঘের ভেসে যাওয়া
শুনবো দুজন কি বলে যায়
উদাস দখিন হাওয়া
দূরের ঐ গাংচিলেরা নামবে জলের পরে।।"

নিঝুম বড়ো করে একটা শ্বাস নিল। অরণ্য যেন আকাশের সুতো কাটা ঘুড়ি। ওর সাথে তাল সামলানো বড্ড কঠিন। কিন্তু পারতে তো নিঝুমকে হবেই। তাই দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে বলেছিল,"ঠিক আছে। এরপর যেন আর বলবেন না যে, জন্মদিনে কোনো উপহার দেই নি। কাল  আমাদের কখন বের হতে হবে?"

"না না কাল না,পরশু। কাল আমার মিটিং আছে।"

অরণ্য আঁতকে উঠে জানিয়েছিল। পরশু বলায় নিঝুম আবার আবেদন নাকচ না করে দেয়।

"ঠিক আছে কিন্তু এখন যেতে হবে।"

নিঝুম প্রায় দৌড়ে বের হয়ে গিয়েছিল ঘর থেকে।

অরণ্য পিছন থেকে চিৎকার করে বলেছিল,"সুন্দর করে শাড়ি পরে আসবে কিন্তু, তা না হলে কিন্তু সারাক্ষণ জ্বালাবো।"

নিঝুম উত্তর না দিয়ে হাত মুঠি করে কিল দেখিয়ে দৌড়ে নিচে চলে এসেছিল।

আজ তাই বেশ করে সেজেছে নিঝুম। হাতঘড়িটা  উল্টে দেখে ঘন্টার কাটা দশটা ছুঁই ছুঁই করছে। কখন যে আসবে অরণ্য?

ঠিক দশটা দশে হাজির অফিসার সাহেব।

অরণ্য গাড়ি লক করে কলিংবেল টিপতেই রুমানা এসে দরজা খুললেন। সালাম দিয়ে ভেতরে বসতেই আশু এসে হাজির," হ্যালো জিজু।"

"হ্যালো... কি খবর?" অরণ্য বেশ মজা পেল।
আশু পুরো মাথায় কি যেন লাগিয়েছে। কেমন অদ্ভুত একটা রঙ। সেজন্য মাথায় প্লাস্টিকের স্বচ্ছ একটা টুপি পরে ঘুরছে সে। মেয়েটা একেবারে টিংটিঙে। মনে হয় ফু দিলেই বাতাসে উড়ে চলে যাবে।

অরণ্য, আশুর সাথে কথা বলতে বলতেই নিঝুম নিচে নেমে আসল । ওকে দেখে অরণ্যর মাথা ঘুড়ে যাওয়ার জোগাড়। কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে লাল জামদানীতে ঝুমকে, একদম লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের মতো।

"আমার চোখে চোখটি ছুয়ে
বলবে কথা তুমি
পাখি ডানায় বৃষ্টি রেখে শুনবো নীরব আমি।
বুকের সব ইচ্ছে গুলো বাজবে নতুন সুরে।।"


ও সত্যি সত্যিই এতটা আশা করেনি নিঝুমের কাছ থেকে। ধরেই রেখেছিল শাড়ি পরবে না নিঝুম। আর ও সারাদিন সেজন্য ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকবে। কিন্তু ওর ধারনা পাল্টে দিয়ে ঝুম সত্যিই শাড়ি পরবে, তাও আবার ওর উপহার দেওয়া এটা বিশ্বাস করতেও বেশ অনেকটা সময় লেগেছে অরণ্যর।

মনের ভিতরের খুশিটা চেপে রাখতে পারছিল না অরণ্য। ও যে ভীষন খুশি হয়েছে সেটা নিঝুম দরজায় দাঁড়িয়েও বেশ বুঝতে পারছিল।

মাকে দিয়ে আগেই অনুমতি নিয়ে রেখেছিল অরণ্য, হবু শাশুড়িকে তাই আর কিছু খুলে বলতে হয়নি ওর। তবে বেড়িয়ে আসার সময় সন্ধ্যার
আগেই নিঝুমকে বাসায় পৌছে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। অরণ্য রুমানাকে আস্বস্ত করল যে নিঝুমকে ও বিকেল পাঁচটার মধ্যেই বাসায় পৌছে দিবে।

গাড়ি শ্যামলী স্কোয়ার পার হয়ে যেতেই নিঝুম জানতে চাইল, " আমরা কোথায় যাচ্ছি?"

"নির্দিষ্ট করে কিছু ঠিক করিনি। তোমার কোনো পছন্দের জায়গা থাকলে বলো, কিন্তু মানুষের বাসা এড়িয়ে। বিয়ের আগেই ওই প্যারা নিতে চাই না আমি," সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে এয়ারপোর্টের দিকে গাড়ি ঘোরাল অরন্য।

অরণ্যর কথায় নিঝুম নিজেও হেসে ফেলল," না আমারও আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়ানোর আপাতত কোনো শখ নেই আর আপনাকে নিয়ে তো নয়ই।"

"মানে তুমি আমাকে তোমার আত্মীয়দের বাসায় নিতে চাওনা... কেন কোনো বিশেষ সমস্যা আছে নাকি?"

"হ্যাঁ, অনেক বড়ো সমস্যা আছে। ওখানে গেলে আপনি আমার সব পুরানো প্রেমিকদের খোঁজ পেয়ে যাবেন,আপনাকে ওখানে আমি ভুল করেও নিয়ে যাব না। "

অরণ্য ঘ্যাচ করে গাড়িটা থামাল রাস্তার একপাশে। " তোমার প্রাক্তন প্রেমিকরা কি সব তোমার আত্মীয়-স্বজনরাই ছিল? খুব দুঃখের বিষয় তো। আমি কোথায় মনে করলাম বাইরের কেউ এসে আমাকে চ্যালেঞ্জ করবে আর আমি নায়কের মতো ওদের সামনে দিয়ে দাঁত কেলিয়ে তোমাকে আমার বউ বানাব। তা না কি সব ফেল্টু মার্কা প্রেমিক তোমার, আগেই সারেন্ডার করে বসে আছে। "

অরণ্যর মুখ দেখে হাসি ঠেকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে গেল নিঝুমের জন্য। শেষ পর্যন্ত খিলখিল করে হেসেই ফেলল ও। ওর এই রিনরিন হাসির শব্দটা পাহাড়ের দেয়ালে দেয়ালে ঠোকর খেলে কেমন লাগবে ভাবতেই কেমন মাতাল মাতাল লাগল অরণ্যর। এই মেয়ে পাশে থাকলে ওর মাতাল হতে কিছু লাগবে না। শুধু নিঝুমের হাত দুটোই যথেষ্ট। ওকে শুধু দুহাত দিয়ে জড়িয়ে রাখলেই হবে।

গাড়িতে বসে নিঝুম যেসব প্রেমিকের নাম বলল, শুনেই যুদ্ধ করার ইচ্ছা ঘুচে গেল অরণ্যর। কি সব নানু, দাদু... ধুর। এই বুড়োগুলোর সাথে কি যুদ্ধ করবে ও ? ওগুলো উল্টো ওর ঘাড়ে বসে খাবে আর ওর বউয়ের হাড় জ্বালাবে। তবে যাই করুক আর তাই করুক ওর বউয়ের শাড়ির আঁচল এখন অরণ্যর ব্যাক্তিগত সম্পত্তি। এটা ও কাউকে ভাগ দিবে না। আর ওই বুড়ো দুটো বলে ঝুম যখন ছোট তখন থেকে খেয়ে দেয়ে হাত ধুয়ে ওর ওড়নায় হাত মুছে। কত্ত বড় সাহস!

"শোনো তোমার ওই হাকিম নানু আর ওই পটল না কি পল্টু দাদু, এ দুটোকে বলে দিবে তোমার ওই চা আর মুড়িমাখা পর্যন্তই এখন থেকে তাদের ভাগে জুটবে। এরচেয়ে বেশি চাইলে আমি কিন্তু সত্যি সত্যি যুদ্ধ শুরু করব। তোমার শাড়ির আঁচলে ওই বুড়ো দুটোর হাত মোছার দিন শেষ।"

অরণ্যর গোমড়া মুখটা দেখতে বেশ।

নিঝুমের খুব কষ্ট হলো হাসি ঠেকিয়ে রাখতে। ভাল এক লোক জুটেছে ওর কপালে। গাড়ি নিয়ে ঠিক কোথায় যে যাচ্ছে ওরা বুঝতে পারছেনা নিঝুম। অরণ্য মহামারী আকারের পাগল লোক বোঝা যাচ্ছে। কোন ফাঁকে ওর শাড়ির আঁচলের কোনটা নিয়ে ঠিক নিজের হাতের আঙ্গুলে প্যাচিয়ে নিয়েছে... নিঝুম আঁচল ঠিক করতে গিয়ে টের পেল।

অরণ্য গাড়িটা ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে থামাতেই নিঝুম হেসে ফেলল, " এই বাচ্চাকাচ্চাদের পার্ক আপনার পছন্দ? "

"তা একটু। এখন তোমার মতো বিরাশি বছরের বুড়ি সাথে থাকলে সব মানুষেরই একটু বাচ্চা হতে ইচ্ছে করবে।বাবারে বাবা, বউ নিয়ে ঘুরতে এসেছি না মেয়ের জন্য জামাই দেখতে এসেছি বুঝতে পারছিনা?"

একবারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া যে, নিঝুম তুমি একেবারে রসকষহীন। কিন্তু অরণ্যর কথা গা জ্বলে যাবার মতো হলেও আজ রাগ করবেনা নিঝুম। বাসা থেকে আগেই নিজেকে নিজে ওয়াদা করেছে ও। বেচারার জন্মদিনের উপহার। টিকেট কিনে ভিতরে ঢুকতেই দেখে, ভিতরে প্রচুর লোকের আনাগোনা।

নিঝুমের সাগরের পাড়ে বসে থাকতে খুব ভাল লাগে। নিরিবিলি যেখানে শুধু একভাবে সাগরের গর্জন আর বাতাসের আর্তনাদ শোনা যায়। এই ভীড় ভাট্টা, চিৎকার চেঁচামেচি ওর খুব অসহ্য লাগে। কিন্তুু কি আর করা। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। দু'একটা রাইডে চড়ার পরে নিঝুম একটা জায়গায় বসে পড়ল।

"তোমার কি খুব বিরক্ত লাগছে?" অরণ্য, নিঝুুমের হাতে একটা কাপ আইসক্রিম ধরিয়ে দিল।

"না তো। কেন?"

"মুখ দেখে বুঝতে পারছি কিন্তু এখানে আসার আমার কিন্তু একটা উদ্দেশ্য আছে। "

"সেটা কেমন? "

"এটা কিন্তু আমাদের জন্য খুব ভাল জায়গা। যেহেতু আমরা বিবাহিত না, তাই উন্মুক্ত জায়গায় আমার কাছ থেকে তোমার বিপদ ঘটার কোনো সম্ভাবনাও নেই। নিরিবিলিতে গেল আমারও ভাল লাগত, কিন্তু এই তুমিই তখন আমাকে চিরত্রহীন মনে করতে।"

অরণ্যর কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু অরণ্য যেটা মিন করে বলল তাতে নাক মুখ লাল হয়ে গেল নিঝুমের।

"আপনি তো খুব খারাপ। কি নোংরা কথা চিন্তায় আসে আপনার, " নিঝুম কপট রাগ দেখাল।

"এখন তোমার এরকমই মনে হবে। কিন্তু  বিয়ের পরে হাজার বার করে মনে পড়বে যে আমি তোমার কাছ থেকে কোনো অন্যায় সুযোগ নেইনি। তখন আমার প্রতি অজান্তেই তোমার সম্মান বাড়বে," অরণ্য দূরে কি একটা মনযোগ দিয়ে দেখতে দেখতে বলল।

"আমি আপনাকে এমনিই সম্মান করি। "

"তা আর বলতে, তুমি তো সম্মানের চোটে আমাকে তুমিই বল না। এখনও আপনিতেই আটকে আছো।"

"আপনি কি তাতে অসন্তুষ্ট? "

"মোটেই না, তোমার মুখে আপনি শুনলে কেমন যেন নানী দাদীর মতো একটা ফ্লেভার লাগে। এটা কোনো সমস্যা না, ভালই লাগে।  কিন্তু তুমি আমার সাথে সহজ না হলে তো বউ আমার প্রেম করে পোষাবে না। সবসময় আমার কাছ থেকে পাঁচশ মাইল দূরে দূরে থাকো। তিন বছর এভাবে থাকা তো খুব কঠিন," অরণ্য খুব হতাশার সাথে কথা গুলো বলল।

"তিন বছর মানে? আপনি বলার পরে তো আমি এসেছি আপনার সাথে, তারপরও তিন বছর কেনো? " নিঝুমের মুখ দেখে এবার অরণ্যর হাসি পেল।

"কেন, তুমিই তো প্রেম করতে চাইলে। "

নিঝুমের চোখ কোটর থেকে ছিটকে বের হয়ে আসার জোগাড় অরণ্যর কথায়। কি ভয়ংকর মিথ্যুক এই লোক।

"একদম মিথ্যে বলবেন না। "

"তাহলে কি প্রেম পর্ব বাদ। একেবারে বিয়ে করতে চাও?" মুখ টিপে হাসছে অরণ্য।

অরণ্যর শয়তানি এবার বেশ ধরে ফেলল নিঝুম। "ইতরামি হচ্ছে না? কিচ্ছু করা লাগবে না। আমি একা একাই বেশ আছি। কাউকে লাগবে না আমার। "

"ওহো... এরকম ফায়ার বিগ্রেড হয়ে যাচ্ছ কেন ঝুমঝুম? এরকম হলে আমি বাঁচব কি করে? আমার তো বউ  আর্জেন্ট দরকার। নইলে বিরহের আগুনে পুড়তে পুড়তে ঠিক মরে যাব।"

সানগ্লাসটা পাঞ্জাবির পকেট থেকে বের করে চোখে পরে নিল অরণ্য। সূর্য আস্তে আস্তে বেশ মাথার উপর চলে এসেছে।

নিঝুম একবার দেখেই চোখ সরাল। ওর খুব রাগ হচ্ছে আর খুব লোভও। অরণ্যকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে এই মুহুর্তে। সবসময়েই লাগে তবে একদম ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি ওর সৌন্দর্যকে যেন আরও  কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু অরণ্যর সামনে নিঝুম মোটেই সেটা স্বীকার করবে না, তাই ঠোঁটটা  উল্টে বলল,"না, আমার মত বউ তো আপনার দরকার নেই।"

"ঠিক আছে, তাহলে পুতুলকেই বিয়ে করে ফেলি। ও খালি আমাকে বিয়ে করতে চায়।"

"পুতুল! পুতুল কে?"

"আমার জুনিয়র একটা মেয়ে। বাবা-মাকে নিয়ে হাজির হয়েছিল একদিন বাসায়। আমি না ঠেকালে সেই সময়ই বিয়ে হয়ে যায় আরকি। আম্মুর খুব পছন্দ হয়েছিল, একদম পুতুলের মতোই দেখতে, " অরণ্য বেশ রসিয়ে রসিয়ে পুরো ঘটনাটা নিঝুমকে বললো।

নিঝুমের এইবার খুব লাগল," তো করলেন না কেন? "

"বললাম না একদম পুতুলের মতো দেখতে। "

"তো সমস্যাটা কোথায়? একেবারে পুতুলের মতো মেয়ে পাওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়। আপনার তো সোনার কপাল।"

নিঝুমের বুকটা দুঃখে ফেটে যাচ্ছিল, প্রচন্ড হিংসায় বুকটা জ্বলে যাচ্ছিল। অরণ্য কেন ওই মেয়েকে পুতুলের মতো বলবে। বহু কষ্টে চোখের পানি আটকালো ও।

"শুধু পুতুলের মতো দেখতে হলে তো কোনো সমস্যা ছিল  না, কিন্তু ওর আচরনও পুতুলের মতো। ওর কথা শুনলে আমার মনে হয় ও ক্লাস ওয়ানের বাচ্চা। এমন ভাবে আন্টি আন্টি করে। অবশ্য তুমি রাজি না হলে হয়ত শেষ পর্যন্ত ওকেই বিয়ে করতাম... পুতুল আসলে আমাকে অনেক পছন্দ করে।"

অরণ্য বেশ বুঝতে পারছে, নিঝুম রাগ হচ্ছে। নাকের মাথা কেমন লাল হয়ে গেছে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেওয়ার সাথে বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কিছু একটা লুকোতে চাইছে ওর কাছ থেকে প্রচন্ড ভাবে। আর সেটা যে ঈর্ষা সেটা কোন একটা পাগলেও বুঝবে।

অরণ্য জানে, নিঝুম ওকে ভালো না বাসলে আজ ওর দেওয়া এই শাড়ি পরত না। অয়ন কথা না বলায় ওকে অরণ্য ভেবে কষ্টও পেত না। কিন্তু সবসময় মুখে কুলুপ এটে থাকবে। একটু তো বলা উচিত.. তাই না? বললে কি হয় যে অরণ্য তোমাকে ভালবাসি। আদ্যি কালের বদ্যি বুড়ি কোথাকার। জন্মেও লাভ স্টোরি পড়ে নাই বোধহয়। এখন একটু হাসিখুশি থাকবে, তা না ওকে দিয়ে যত আজেবাজে বকাচ্ছে।

কিন্তু বউটাকে খেপাতে অরণ্যর বেশ লাগছে। তা না হলে ওই পুতুলের নাম ওর মাথাতেই থাকে না। ওকে দেখলেই অরণ্যর অসহ্য লাগে। কেমন প্লাস্টিকের মতো লাগে পুতুলকে, ওর ফর্সা রংটা কেমন যেন, মনে হয় ওতে কোনো প্রানের  ছোঁয়া নেই।

মন খারাপের রেশটা  শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকত কে জানে, কিন্তু অরণ্যর কাছে আসা একটা ফোন কল নিঝুমের মনের কোনে নীরবে বাড়তে থাকা অভিমানের হাওয়াই জাহাজটার গতি রোধ করে দিল।

"ঝুম একটু সমস্যা হলো যে," অরণ্যর এমন কথায় নিঝুম একটু হকচকাল। জরুরী কিছু নিশ্চই। না হলে হঠাৎ এমন চিন্তিত সুরে কথা বলাটা বোধহয় এই লোকের স্বভাবজাত না।

"কোনো সমস্যা?"

"একটু। আমার এক সোর্স ফোন করেছিল। গুলশানে একটা জায়গায় একটু যেতে হবে। জরুরি একটা তথ্য নিতে হবে ওর কাছ থেকে। যাবো? ব্যাপারটা খুব জরুরী বউ।"

নিঝুম আর কথা বাড়াল না," চলুন। আর আমাকে বউ বললে সাবধানে বলবেন। আপনার পুতুল শুনলে মন খারাপ করতে পারে।"

এই রে, কাজ সেরেছে। খাল কেটে কুমির এনেছ অরণ্য... এ জ্বালা এখন তুমি সহ্য করতে পারলে হয়।

"তোমার বোধহয় মন খারাপ হচ্ছে ঝুম। থাক খবরটা পরে নিয়ে নিব। আমাদের জীবনটাই আসলে বাজে। জেনেশুনে কেউ এজন্য বিয়ে করতে চায় না। পরিবারকে চাইলেও সময় দেয়া যায়না। অয়নই ভালো কাজ করেছে। বিদেশে চলে যাবে ভালো থাকবে।"

"কেন আপনার পুতুল আছে না?  আর আমার মন খারাপ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না," নিঝুম আর কথা না বাড়িয়ে হাতের পার্সটা নিয়ে হাটতে
শুরু করল।

আজকের দিনটাও কি আগের দিনের মতো মন খারাপ দিয়ে শেষ হবে? অবশ্য ওইদিন পাইপ বেয়ে উঠার পর নিঝুম যখন কাঁদছিল ওকে ধরে তখন কি অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। আশু না থাকলে বোধহয় আবেগের ঠ্যালায় একটা চুমু  অরণ্য খেয়েই ফেলত ঝুমকে। আজ খেপলে কি আছে কপালে কে জানে। গাড়িতে আর তেমন কথা হলো না ওদের। এর মাঝেই প্রায় দশবার কল আসল অরণ্যর কাছে। ওরা যখন ওদের গন্তব্যে পৌছে গেল তখন পেটে ইঁদুর নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে।

"ঝুম তুমি গাড়িতে বসে একটু আপেক্ষা কর আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি। তারপর আমরা খাব। "

"আ..আমি একা বসে থাকব?" নিঝুম ভয় পেয়ে গেল। ওদের গাড়ি নেই। এভাবে গাড়িতে থাকতে ওর কেমন যেন লাগে।

"দশটা মিনিট। তুমি ভেতর থেকে ভাল করে লক দিয়ে বস। আমি না আসা পর্যন্ত খুলবে না, ঠিক আছে।"

অরণ্য বেড়িয়ে যেতেই কেমন যেন একটা সুনসান নীরবতা। নিঝুম মোবাইল বের করে অরণ্যর জন্মদিনের ছবিগুলো দেখতে লাগল।

সেদিন আশুকে দায়িত্ব দিয়েছিল নিঝুম ছবি তোলার জন্য। ও তো দৌড়াদৌড়ি করেই সময় পাচ্ছিল না। অনেক ছবিই তোলা হয়েছে পুরো অনুষ্ঠানের। বসে বসে সেগুলোই দেখতে লাগল নিঝুম।

.......................................................................

আস্তে করে ধাক্কা দিতেই দরজাটা হাট করে খুলে গেল বাসাটার। ভিতরে বেশ ঠান্ডা, সেন্ট্রাল এসি চলছে বোধহয়। অরণ্য সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। সাইফুল এখানেই আসতে বলেছে ওকে।

বাসাটা খুব চমৎকার করে গোছান। কিন্তু সাইফুল হঠাৎ এরকম একটা জায়গায় কেন আসতে বলল ওকে বুঝতে পারলনা অরণ্য? কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে ওর। সাধারনত এরকম ফাঁকা জায়গায় ওরা দেখা করে না। ভীড় ভাট্টা হৈ চৈ খুব ভালো ওদের মিটআপের জন্য। তাছাড়া এই রুমের পরিবেশটায় কেমন যেন একটা গন্ডগোল আছে কিন্তু সেটা কি অরণ্য ভালো করে ধরতে পারছে না। কিন্তু সূক্ষ্ম কিছু অদল বদল হচ্ছে ওর স্নায়ুতে, প্রতিটা কোষ একভাবে সতর্ক সঙ্কেত বাজিয়ে যাচ্ছে যেন।

হঠাৎ ছায়ার মতো কিছু একটা কাঁচের জানালার উপর পড়ল তারপর দ্রুত সরে গেল। সাথে সাথে সজাগ হয়ে উঠল অরণ্যর ষষ্ঠ ইন্দ্রীয়। এটা কোনো ফাঁদ নাতো? সাথে সাথে ওর হাত রিভলবারের কাছে চলে গেল। কিন্তু পাঞ্জাবির পকেটে হাত লাগতেই মনে পড়ল আজ ও রিভলবার সঙ্গে আনেনি। সাথে সাথে পুরো শরীর শক্ত হয়ে গেল অরণ্যর। আজ ও ছুটিতে, নিঝুমকে নিয়ে বেরিয়েছে বলে সাথে কিছু রাখেনি।

কিন্তু সাইফুলকে অবিশ্বাস করতে অরণ্যর মন চাচ্ছে না। সাইফুল বেশ নির্ভরযোগ্য সোর্স ওর। অরণ্য নিজে ট্রেইনড করে নিয়েছে ওকে । ছেলেটা এতিম। বিয়েও করেনি। কাজেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওকে দিয়ে কিছু করতে পারার কথা না কারও। কিন্তু এখনকার পরিবেশটা বলে দিচ্ছে কিছু হতে চলেছে যা বিপজ্জনক।

এর পরই জান্তব এক চিৎকারে কেঁপে উঠলো পুরো বাড়িটা।

নিঝুম গাড়িতে মনে হতেই সমস্ত শরীর এক সেকেন্ডের জন্য স্থবির হয়ে গেল অরণ্যর। পরের মুহুর্তে দ্রুত সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসল ও। মেইন ডোরের কাছে গিয়ে ওর মাথা পুরো ফাঁকা হয়ে গেল। দরজাটা বাইরে থেকে লক করে দিয়েছে কেউ।

অরণ্যর বুকের মধ্য তখন হাতুড়ির ঘা পড়ছে। ওর একমাত্র চিন্তা তখন নিঝুমের কোনো বিপদ যেন না হয়। ও নিজে মরে যায় যাক, ঝুমের যেন কিছু না হয়। নিজের বোকামির জন্য যদি ঝুমের গায়ে তিল পরিমান দাগ পড়ে, তাহলে অরণ্যর মরে যাওয়াই ভাল।

দরজার হ্যান্ডেল ধরে টানাটানি করেও কোনোভাবে দরজাটা খোলা গেল না। অরণ্য হাতের কাছে এমন কোনো জিনিসও পেল না যেটা দিয়ে দরজা খোলার কোনো ব্যবস্থা করা যায়। ডুপ্লেক্স বাসাটার ভিতরটা অনেক বড়ো। অনেক গুলো রুম। পিছনের দিকের রুমগুলো একদম অন্ধকার। অরণ্য সাম্ভাব্য সব জায়গায় চেষ্টা করে দেখল বাইরে বেরুবার কোনো দরজা খুঁজে  পাওয়া যায় কিনা কিন্তু কিছুই খুঁজে পেল না।

নিঝুমের কি অবস্থা আল্লাহই ভালো জানেন। সুস্থভাবে অরণ্য এখন আর কিছু ভাবতে পারছেনা। এতবড় ভুলটা ও করল কি করে? এটা যে ওর জন্য একটা ফাঁদ তাতে আর এখন কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু নিঝুমকে সাথে নিয়ে বেকুবের মতো ও এখানে আসল কেন? এখন এর কি জবাব দিবে অরণ্য নিজেকে।

শত্রুর উদ্দেশ্য কি সেটাও অরণ্য বুঝতে পারছেনা। ওদের শিকার যদি অরণ্য একা হয়, তাহলে ওকে এখন মেরে ফেলা ওদের জন্য কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু সেক্ষত্রে নিঝুমকে হয়তো ওরা আর জড়াবেনা। কিন্তু নিঝুমকে নিয়ে যদি ওদের আলাদা কোনো প্ল্যান থাকে তাহলে ঝুমের মুখটা বোধহয় আর অরণ্যর দেখা হবে না। সমস্ত শরীর, মন একসাথে অসার হয়ে আসতে লাগল অরণ্যর। নিঝুমের কিছু হলে ওর বেঁচে থাকার আর কোনো মানেই হয়না। নিজেকে এত দুর্বল অরণ্যর কোনদিনই মনে হয়নি।

আবারো সামনের ঘরটায় আসল অরণ্য। প্রতিটা জানালায় মোটা করে গ্রিল বসান। খুব হিসেব করে জায়গাটাকে নির্বাচন করেছে শত্রুপক্ষ।
আবারো দোতলায় উঠল ও। বাথরুম গুলো ভালো করে পর্যবেক্ষন করল। কিন্তু ওখানেও ভেন্টিলেটরের সামনে গ্রিল করা। দোতলার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে ছাদে যাওয়ার একটা দরজা পেল অরণ্য। কিন্তু দরজায় মোটা একটা তালা ঝুলছে। তবু এটাই এখন শেষ ভরসা। তালাটা কোনো ভাবে বাড়ি দিয়ে খোলা যায় কিনা চেষ্টা  করতে হবে। শক্ত ধরনের লোহার কিছু পাওয়া যায় কিনা খুঁজতে লাগল অরণ্য। আচমকা ফোনের ভাইব্রেশনে টনক নড়ল ওর। তাইতো ওর কাছে তো ফোন আছে। সাথে সাথে নিঝুমের নাম্বার ডায়াল করল অরণ্য। কিন্তু নিঝুম ফোন রিসিভ করল না। দুশ্চিন্তা যেন আনলিমিটেড প্যাকেজ নিয়ে এসেছে অরণ্যর জন্য।

আবারও কল করলো অরণ্য। কিন্তু এবারও কেউ ধরল না। তবে হালকা ভাবে ফোনের রিংটোনের একটা সুরেলা শব্দ অরণ্যর কানে আসতে লাগল।

আবারো নিঝুমের নাম্বারে কল করল অরণ্য আর ঠিক একই সাথে ক্ষীন একটা সুর বাতাসের আড়মোড়া ভেঙ্গে অরণ্যর কানে লুটিয়ে পড়তে লাগল। শব্দের উৎস ওর আশেপাশেই কোথাও। এটা কি তবে নিঝুমের ফোনের রিংটোন?

দুশ্চিন্তা আর আনন্দ একইসাথে অরণ্যর স্নায়ুতে উপুর্যুপরি আঘাত করে চলেছে। শেষ পর্যন্ত কোনার একটা ছোট্ট কক্ষে খুঁজে পেল ও নিঝুমকে। নিঝুম কেমন হাত পা ছড়িয়ে পড়ে আছে মেঝেতে। অরণ্য দৌড়ে কাছে গেল। নিঝুমের শ্বাস চলছে কিনা পরীক্ষা করল। একটু স্তিমিত কিন্তু চলছে। খুব সম্ভবত কোন চেতনা নাশক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়েছে ওকে অজ্ঞান করতে।

দ্রুত পানি এনে নিঝুমের চোখে মুখে  ছিটিয়ে দিল অরণ্য। সেই সাথে পার্থকেও ফোন করল। পার্থকে সবটা জানাতেই ওকে সতর্ক থাকতে বলল পার্থ... ও এখন নারায়ণগঞ্জে একটা কাজে আটকে আছে।

"আপনি সাবধানে থাকুন অরণ্যদা.. আমি স্যারকে বিষয়টা জানাচ্ছি।"

পার্থকে লোকেশনটা বলে ফোনটা কাটল অরণ্য।
কিন্তু পর মুহুর্তেই ভারী কিছু একটা এসে আঘাত করলো ওর মাথায়..কি হলো বোঝার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো অরণ্য।

নিঝুম চোখ খুলেই আবার বন্ধ করে ফেলল। প্রচন্ড আলোতে ওর চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। চোখ মেলতে চাইলে খুব যন্ত্রনা হচ্ছে।

"আহ...অসহ্য " সাথে সাথে দুহাত দিয়ে কপালটা চেপে ধরল নিঝুম, আস্তে আস্তে উঠে বসতে চাইল  কিন্তু ভারী কোনকিছু যেন চেপে বসে আছে ওর বুকের উপর। দুর্বল শরীর নিয়ে কিছুতেই ও সেই ভারটাকে সরাতে পারছিলনা।

আস্তে আস্তে দম নিয়ে যখন খুব ভাল করে আশপাশটা দেখতে চেষ্টা করল, তখন নিঝুমের নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। ভয়ে বুকের রক্ত পানি হয়ে গেল নিঝুমের। ওর বুকের উপর ভারি জিনিসটা যে আর কিছু নয়... অরণ্য! ওর হবু স্বামী।

চোখ খুলে রাখতে রীতিমতো কষ্ট হচ্ছিল নিঝুমের।
অরণ্যর গায়ে কাপড় নেই... ওর  নিজের দিকে ভাল করে তাকাতেই মাথা ঘুরে উঠল নিঝুমের। শখের শাড়িটা ওদের থেকে হাত খানেক দূরে মেঝেতে পড়ে আছে। ওর পরনে কেবল ব্লাউজ আর পেটিকোট। সব এলোমেলো হয়ে গেল নিঝুমের।

অরন্য কি শেষ পর্যন্ত প্রতারনা করল ওর সাথে? দুচোখের পানিতে চারপাশটা ঝাপসা হয়ে আসতে লাগল নিঝুমের। অরণ্যকে গলা টিপে মেরে ফেলতে ইচ্ছে হলো ওর। ভালো মানুষ সেজে ওকে বাইরে বের করে এনে... একি সর্বনাশ করলো ওর  অরণ্য। ফাঁদে আটকে পড়া শিকারের মতোই ছটফট করতে লাগল নিঝুম। কিন্তু অনেক জোরে জোরে ধাক্কা দিয়েও অরণ্যর দিক থেকে কোন সাড়াশব্দ পেল না ও।

চলবে.........

ভালো লাগলে ভোট আর কমেন্ট করার অনুরোধ রইল...😊

ধন্যবাদ।

Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top