47
নিঝুম গোাসল থেকে বের হয়েও দেখে অরণ্য একইভাবে বিছানায় বসে আছে। অন্যমনস্ক আর বিষন্নতা দুটো অনুভূতিই স্পষ্ট ফুটে আছে ওর চেহারায়।
"কী হয়েছে?"
"উমম... কিছু বললে?"
অরণ্য অন্যমনস্ক ভাবেই নিঝুমের দিকে ঘুরে তাকায়।
"কী হয়েছে? তোমার চেহারা এমন লাগছে কেন? "
" কিছু না পার্থ কল করেছিল। বলল টিম ইনচার্জ আমাকে খুঁজছে। রাতে কয়েকবার নাকি ফোন দিয়েছিল।"
কথাটা শোনার সাথে সাথেই বুকটা কেমন কেঁপে উঠল নিঝুমের। না... অরণ্য হেরে যাবে এমন কথা ও ভাবতেও পারেনা কিন্তু যদি খারাপ কিছু হয়, তখন? গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল ওর।
হাতের তোয়ালটা চেয়ারের উপর ছুড়ে দিয়ে অরণ্যর গা ঘেঁষে বসে পড়ল নিঝুম। ওর মুখ শুকিয়ে গেছে ভয়ে, অরণ্যকে এক সেকেন্ডের জন্যও ওর চোখের আড়াল হতে দিতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।
অরণ্য তাকিয়ে দেখে নিঝুমের মুখে দুশ্চিন্তার ছোটখাট একটা পাহাড় তৈরি হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে।
"ঝুম..... এটা কী? তোমার মুখের রঙ এমন আলকাতরার মতো দেখাচ্ছে কেন? "
"অরণ্য প্লিজ দুষ্টুমি করোনা.... আমার সত্যি ভয় করছে।"
অরণ্য চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ, তার পরে নিঝুমের পিঠে হাত রেখে ওকে টেনে কাছে নিয়ে আসল।
" আমি শুটার হিসেবে খারাপ না বউ, কিন্তু অয়ন যখন মারা গেল তখন আমি এত ভয়নক অবস্থায় ছিলাম যে, ওদের পিছনে দৌড়ানোর মতো মানসিক অবস্থায় ছিলাম না। আর এখন যাবোই যুদ্ধক্ষেত্রে, সুতরাং মানসিক আর শারীরিক প্রিপারেশন দুটোই বেষ্ট রাখতে হবে আর থাকবেও আশা করি। তুমি এতো দুশ্চিন্তা করো না। আমাদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করো যেন টীমের সবাই সু্স্থ ভাবে নিজের পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পারি।"
নিঝুম উত্তর দিলনা। এসব কথা তো ও নিজেও জানে, কিন্তু তারপরও যে ওর ভয় কাটে না। অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল ও।
"আচ্ছা বউ... "
"উমম... "
"তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।"
নিঝুমের চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দিল অরণ্য।
"কী? "
"সামনে আমাকে অহনার সাথে কাজ করতে হবে, " অরণ্য আস্তে আস্তে শব্দগুলো উচ্চারন করলো।
"লাগলে করতে হবে," নিঝুম শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বলল। অরণ্যর শাড়ি খুব পছন্দ বলে বেশিরভাগ সময় শাড়ি পরারই চেষ্টা করছে এখন নিঝুম।
"আমি দায়ে পড়ে করব বউ... আমি করতে বাধ্য," অরণ্য নিঝুমের চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বলল।
"জানি," নিঝুম নিভু নিভু স্বরে উত্তর দিল। ওর কষ্টের শেষ নেই। একদিকে অরণ্য ওকে ছেড়ে যাবে সাথে আবার ওই মেয়ে এসে জুটবে অরণ্যর গলায় ঘন্টি হয়ে। তারপরও যদি অয়নকে সত্যি ভালোবাসত মেয়েটা। যে কোন সময় ওকে মেরেও ফেলতেও পারে যদি টের পায় এটা অরণ্য। কবে যে ওই মেয়ে জেলে যাবে কে জানে।
"আমি জানি তারপরও তোমার কষ্ট হবে কিন্তু আমি সত্যি এই কেস থেকে সরে যেতাম যেভাবে হোক... যদি অয়নের ব্যাপরটা এতে ইনভলভ না থাকত," অরণ্য বলল।
"না... আমি চাইতাম না। অয়ন মারা না গেলেও না। এই কেস তোমার অবশ্যই সমাধান করা উচিত। কেন ওরা তোমাকে মারতে চাইবে? অয়ন যদি সেই সময় তোমার সাথে না থাকত তাহলে তো ওরা নিশ্চই তোমাকেই গুলি করত। না, তুমি ওই রাইসুল নামের লোকটাকে কিছুতেই ছাড়বে না। আমি... আমি চাই ওই লোকটা তার উপযুক্ত শাস্তি পাক আর ওই অহনা মেয়েটাও," নিঝুম দৃঢ়তার সাথে উত্তর দিল।
"থ্যাংস ঝুম... আমি চেষ্টা করব, আমার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করব।"
অরণ্যর উত্তরে ওকে আরও জোরে আকড়ে ধরল নিঝুম।
" তুমি আমাকে কথা দাও তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে, আমাদের কাছে ফিরে আসবে।"
"আসব বউ। তোমার কাছে ফিরতে আমাকে হবেই, নাহলে আমি মরেও শান্তি পাব না। "
"কথা দিলে কিন্তু... "
"দিলাম, কিন্তু এখন এই হুচপুচ করে কান্না বন্ধ করো। আমি আমার এই স্পেশাল হানিমুন টাইম স্পয়েল করতে চাই না। এমনি হাঁদারামটা দুইদিন খেয়ে ফেলল। না শান্তিতে খেতে পারলাম না ঘুমাতে," অরণ্য পরিবেশটা হালকা করতে চাইল।
কিন্তু আজ অরণ্যর দুষ্টামিতেও নিঝুমের মনের মেঘ কাটল না। অজানা আশঙ্কা থেকে থেকে অয়নের মৃত্যুর কথাই বার বার স্মরন করিয়ে দিয়ে যেতে লাগল ওকে।
.............................................
রুমানা ঠিক বুঝতে পারছেনা ফাহিম ওকে কী বলল। ঘন্টা দুয়েক আগে ওরা শ্রীমঙ্গল থেকে এসেছে। নিঝু যে ফিরবে না সে আন্দাজ রুমানা আগেই করেছিল কিন্তু ফাহিমের কথা শুনে এখন রুমানা মাঝ দড়িয়াতে পড়ে আছে।
নিঝু তিন প্যাকেট চা পাঠিয়ে দিয়েছে আশুর কাছে। তার এক প্যাকেট অয়নের মাকে দিতে বলেছে। রুমানা এতক্ষণ বসে চায়ের প্যাকেটের সাথে আরো কিছু ফল আর বিস্কুট, আচার মিলিয়ে একটা গিফট বাস্কেট তৈরী করেছে। শাহেদ আর ও মিলে কাল যেয়ে বিয়াই বাড়ি এটা দিয়ে আসবে নিয়ত করে টেবিলের উপর রাখতেই ফাহিম কাচুমাচু ভঙ্গিতে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
"খালামনি একটা কথা ছিল।"
"তো বল.... তোর কী কখনো অনুমতি লেগেছে আমার সাথে কথা বলার জন্য।"
"না ঠিক তা নয়।"
"দেখ আমিও জানতাম যে নিঝুম রাজি হবে না। তাতে অয়নের সাথে ওর ম্যাচিং হোক না হোক, ও অরণ্যর বাচ্চাটাকে ওই ফ্যামিলির একজন হিসেবে মানুষ করতে চায়। আসলে অয়নের সাথে ও কখনই সুখি হবে বলেও আমার মনে হয় না। এ জন্যই তোর কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু ওই দিন তোর খালু আমাকে বোঝাল যে, তুমি সবচেয়ে বেশি কী চাও, তোমার নিঝুর সুখ তাই না? আর অরণ্য ছাড়া এই মুহূর্তে ওর সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে ওদের সন্তানটা। তুমি এখন ওকে আসলে যার সাথেই ভিড়িয়ে দাওনা তাতে কাজ হবে না। নিঝুম, অয়নকে রেখে ফিরবে না।
তোর খালু তোকে যেতে দিল কেন জানিস? কারন আমরা তোকে যতই বোঝাই না কেন লাভ হতো না। তুই মনে করতি তুই গেলেই ম্যাজিক হবে। ঠিক এই জিনিসটা বোঝানোর জন্যই শেষ পর্যন্ত তোর খালু রাজি হলো তোকে শ্রীঙ্গলে যেতে দিতে।"
"খালামনি আমি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি। নিঝুমের মনে আমার জন্য কোন বিশেষ জায়গা নেই, যেটা ওর স্বামীর জন্য আছে। সরি, আমি আগে ব্যাপরটা বুঝতে পারিনি কিন্তু এখন আমি তোমার কাছে অন্য একটা আবদার করতে চাই।"
"অন্যকিছু আবদার? সে আবার কী? "
"খালামনি আমি তোমাদের অনুমতি থাকলে আশুকে বিয়ে করতে চাই। আমি আমার বাকি জীবনটা এমন কারও জন্য হাহাকার করে কাটাতে চাই না যার মনের কোথাও আমি নেই। প্লিজ তুমি কী আশুকে আমাকে দিবা? "
রুমানা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন ফাহিমের দিকে। ফাহিমকে বরাবরই রুমানার পছন্দ। ছেলে নেই তাদের আর ফাহিম ছোট থেকেই বেশ ন্যাওটা ছিল রুমানার, সব মিলিয়ে মেয়ের জামাই হিসেবে ওকে তার খুবই পছন্দ ছিল। কিন্তু ডিগ্রী শেষ না করে বিয়ে না করার পণই ফাহিমকে নিঝুমের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আর কোন জায়গাই কারও জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য ফাঁকা থাকে না। আর সেই শূন্যস্থান পূরনের জন্যই অরণ্য আসল নিঝুমের জীবন। আবার দুর্ঘটনায় অরণ্য চলেও গেল। আবার সেই ফাঁক পূরন করতে অরণ্যর জায়গায় অয়ন আসল। কেমন একটা যেন হয়ে গেল নিঝুর জীবনটা। একটা ব্যাথা... সমগ্র সত্বা জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে লাগল রুমানার।
কিন্তু এখন ফাহিম, আশুকে চাচ্ছে... সত্যি নিঝুমকে ভুলে গিয়ে আশুকে ভালোবাসতে পারবে তো ফাহিম? আজকাল কেমন একটা ভয় হয়, বড়ো মেয়েটার জীবন এতো এলোমেলো হয়ে গেছে যে ছোট মেয়ের বিয়ের কথা ভাবতেও রুমানার এখন ভয় করে।
..............................................
"অরণ্য আপনার মতামত কী এই বিষয়ে? "
"স্যার আমার মনে হয় আমি বরং অহনার সাথেই যাই। আর একটা গ্যাপে আপনারা আমাকে ফলো করেন। আমি সাথে থাকলে কথা বার্তা দিয়ে একটু হলেও সে আমার দিকে ব্যাস্ত থাকবে," অরণ্য দলের অন্যান্যদের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল। আজ মোটামুটি ফাইনাল একটা মিটিং হচ্ছে ওদের, গত সাতদিন ধরে সব তথ্য যাচাই থেকে শুরু করে কে কেমন প্রস্তুতি নিবে মিশনের জন্য সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মূলত আজকের মিটিংয়ের পরই ওরা ফাইনাল সিদ্ধান্তটা নিবে যে কবে আর কখন ওরা মুভ করবে।
"হুম... গাইস ওই টানেলের ভিতরে আমরা সবাই ঢুকব কিন্তু টানেল ক্রস করব শুধু আমি আর অরণ্য।
বি কেয়ারফুল, আমরা দুজন ছাড়া টানেলের মুখের এই পয়েন্টটা ছেড়ে কেউ কোন দিকে সরবেন না। ইট’স অ্যান অর্ডার। "
মশিউরের কথায় সবাই ম্যাপের উপরে বড়ো লাল রঙের বৃত্তটিকে আবার মনযোগের সাথে দেখল।
"টানেলের এই জায়গাটায় চারটা রাস্তা চারদিকে চলে গেছে।"
ম্যাপের গায়ে আরও কিছু ছোট ছোট বৃত্ত তৈরি করল মশিউর,"এর একটা রাস্তা সোজা খাগড়াছড়ি দিয়ে বের হয়েছে আর একটা একদম নাফ নদীর কাছে। সবাই খেয়াল করুন আমরা যে রাস্তা দিয়ে ঢুকব সে রাস্তায় ফিরব না। আমরা কোন রাস্তা দিয়ে ঢুকব সেটা আমরা চট্টগ্রাম যেয়ে সিদ্ধান্ত নিব আর কাজ শেষ করে ঠিক এই পয়েন্টে ফিরে এসেই আমরা সিদ্ধান্ত নিব কোন রাস্তায় আমরা ফিরব।"
"স্যার,টানেলের ভিতরে কী আপনি অ্যাটাকের আশঙ্কা করছেন? " পার্থ জিজ্ঞেস না করে পারল না। এই টানেলটা খুঁজে বের করতে ওদের জান বেরিয়ে গেছে। প্রতিবছর প্রচুর পরিমান ইয়াবা মায়ানমার হতে নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশে এসে ঢুকে। তারপর এগুলোর কিছু অংশ ধরা পড়লেও, একটা বিরাট অংশ বিভিন্ন ভাবে বাংলাদেশ হয়ে মিডলইস্টসহ আরও অনেক দেশে পাচার হয়ে যায়। ওরা তথ্য পেয়েছে এই টানেলটা দিয়ে অনেক সহজে পাচারকারীরা ইয়াবা পরিবহন করে দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দেয়।
"রাইসুল লোকটা বিভিন্ন ধরনের কুকর্মের সাথে যুক্ত, তাই তার ক্ষমতার বহরটাও একটু বেশি আর সে সবার উপরই তার এই ক্ষমতাটা দেখাতে একটু বেশি পছন্দ করে," মশিউর শক্তমুখে কথাটা বলল। " কিন্তু যতবড় ক্ষমতাধরই হোক, সবারই শেষ বলে একটা কথা আছে, আর রাইসুলের অপকর্মের শেষ আমাদের হাতে দিবেই হবে আশা করি। "
" স্যার, " দলের সবাই একসাথে মেজর মশিউরের কথায় সহমত প্রকাশ করল।
..........................................................
নিঝুম খুব চেষ্টা করছে মন খারাপ না করার কিন্তু যত চেষ্টা করছে তত আরও বেশি করে মন খারাপ হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলে বাকি কটা দিন ও অরণ্যর সাথে প্রায় ছায়ার মতো লেপ্টে ছিল। কিন্তু ঢাকায় আসার পর থেকে অরণ্য ব্যাংকে যাওয়ার নাম করে প্রায় প্রতিদিনিই গোপনে মিটিং করছে ফলে প্রায়দিনই আসতে আসতে অনেক রাত হচ্ছে ওর।
নিঝুম নিজে অরণ্যকে মিস তো করছেই সাথে শাশুড়িকে জবাব দিতে দিতে শেষ। এখন কে তাকে বোঝাবে যে অয়ন এখন আবার এত রাত করে বাড়ি ফেরা ধরল কেন? বিয়ের আগে এই ছেলেতো বেশ একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে ফিরত। তাহলে নিঝুমের সাথে কী এখনও কোন কথা বলে না অয়ন ? নিঝুম নিজে থেকে একটু চেষ্টা যদি করত তাহলে অয়নটা হয়তো একটু দ্রুত স্বাভাবিক হতো ওদের সম্পর্কটা নিয়ে। আগে যতোই ভাল সম্পর্ক থাকুক, নিজের ভাইয়ের সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছিল যে মেয়ের তাকে একদম হুট করে নিজের স্ত্রীর জায়গায় বসানটাতো একটু কঠিনই।
এগুলোর উত্তরে হু হু করা ছাড়া আর কী বলবে... মাথায় আসে না নিঝুমের। অরণ্যকে বলেছিল মাকে সব জানাতে কিন্তু অরণ্য বলেছে আর মাত্র কয়েকটা দিন। কাজটা একদম শেষ করে তারপর মাকে সব খুলে বলব সে।
সব মিলিয়ে নিঝুমের মানসিক অবস্থা খুবই করুন। তার পরেও এখনো দিনের শেষে একবার অরণ্যর দেখা মিলে সেই আশায় এই বাসায় পড়ে আছে ও। নইলে আম্মু ওকে কবেই নিয়ে চলে যেত আশু আর ফাহিম ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে।
"কী এতো ভাবো বউ?" ধপ করে হাতের ফাইলটা বিছানায় রাখল অরণ্য।
"কিছুনা... আজও এতো দেরি হলো যে? মা আমাকে প্রশ্ন করতে করতে ঝাঁঝরা করে ফেলল কেন তার ছেলের এতো দেরি হয়।"
"বলবা আপনের পোলা কার সাথে জানি ইটিশ পিটিশ করতেছে আজকাল আম্মা।আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি আপনের ছেলের ব্যবহারে, সে যারে তারে রাস্তায় চুমো খেয়ে বেড়ায় , আমি কালকেই আপনার পোলারে ডিভোর্স দিব," হাসতে হাসতে অরণ্য মোজা দুটো খুলে নিঝুমের হাতে ধরিয়ে দিল।
"তারপর তোমার মায়ের ঝাঁটাপিটা গুলো আমি খাবো তাইতো.... ফাজিল লোক কোথাকার।"
"নাহ, আমার আম্মু এতো খারাপ না যে তোমাকে ঝাঁটা পিটা করবে,জাস্ট একটু বকতে পারে যে তুমি এসব কী বলছ! আমার অয়ন খুব লক্ষী ছেলে," অরণ্য দাঁত বের করে হাসতে লাগল।
"উনি একটু না মোটেও খারাপ না আর তার অয়নটাও অনেক লক্ষী একটা ছেলে, কেবল বাঁদর যেটা... ওটা আমার গলায় এসে জুটেছে।"
"কী....আমি বাঁদর? "
অরণ্য একটানে নিঝুমকে ওর বুকের উপরে নিয়ে আসল।
"এই আস্তে, " নিঝুম তাড়াতাড়ি দুহাত অরণ্যর বুকের উপর রেখে ধাক্কাটা ঠেকাল।
"ওহ.. সরি বউ একদম ভুলে গিয়েছিলাম। আসলে আজকে এতো টাইট সিডিউল ছিল, ফাইনাল মিটিং হয়ে গেল, মাথা একদম জ্যাম হয়ে গিয়েছিল... ভেরি সরি," নিঝুমকে জরিয়ে ধরে ওর কপালে,গালে আদর করে দিল অরণ্য।
কিন্তু ফাইনাল মিটিংয়ের কথা শুনে নিঝুমের শরীর শক্ত হয়ে গেছে, আর কোন অনুভূতি ওর কাজ করছে না।
"তারমানে তুমি চলে যাবে? " চোখে বোবা কান্না নিয়ে প্রশ্ন করল নিঝুম।
অরণ্যর খুব কষ্ট হচ্ছিল নিঝুমকে হ্যাঁ বলতে। মেয়েটাকে ও একটুও কষ্ট দিতে চায়না কিন্তু ঘুরে ফিরে ওকেই কেবল সামনে পায় কষ্ট দেওয়ার জন্য। উত্তর না দিয়ে নিঝুমকে আরও আরও আদর করতে লাগল অরণ্য.....
অরণ্য চায় নিঝুম ওর যন্ত্রনাটুকু ভুলে যাক, কেবল সুখের স্মৃতিগুলো তারা হয়ে জ্বলে থাক।
কিন্তু জীবনে সুখ আর দুঃখ হাত ধরাধরি করে আসে... এটাই জীবনের নিয়ম।
চলবে........
Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top