২
শ্রাবণ মনযোগের সাথে পিউকে দেখেছে। লাল বেনারসীতে কী অদ্ভুত সুন্দর লাগছে পিউ কে। কিন্তু মেয়েটা খুব ক্ষেপেছে। সেই যে আসার পর থেকে মুখ ঘুরিয়ে বিছানায় বসে আছে, একবারও ওর দিকে তাকায়নি।
কিন্তু শ্রাবণ পিউয়ের একজন ঘনিষ্ট বান্ধবীর কাছ থেকে খবর নিয়ে জেনেছে যে, পিউ কোনো ছেলের সাথে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ না। ওর বান্ধবী একদম গ্যারান্টি দিয়ে বলেছে যে," অসম্ভব, পিউয়ের কারো সাথে এরকম কোনো রিলেশন থাকলে আমরা জানবো না, এটা হয় নাকি? ওই মেয়ে সারাদিন পিএইচডি করার স্বপ্ন দেখে। পড়া ছাড়া ওর মাথায় কিছুই ঢুকেনা। আর ওর সাথে খাতির করবেটা কে? দেখতে সুন্দরী হলেও, একদম খটেখটে স্বভাবের। কথাও তেমনি চাঁছাছোলা। ক্লাসের ছেলেরা পাঁচশ হাত দূরে থাকে ওর কাছে থেকে, পড়ার বিষয় ছাড়া। আসলে পিউ কারো প্রেমে পড়ার মেয়েই না।"
এই কথাটা অবশ্য শ্রাবণের একটুও পছন্দ হয়নি। মেয়েটা হয়তো একটু ঘোর প্যাচ কম বোঝে। তা মনের মধ্যে অত গিট্টু না রেখে সরাসরি কথা বলাই তো ভালো, নাকি? আর পিউয়ের সেদিনের হাসিটা এখনও ভুলতে পারেনি শ্রাবণ। কী মিষ্টি ছিল হাসিটা। ওটার কাছে পৃথিবীর অন্য সবকিছু ম্লান এখন শ্রাবণের। কিন্তু বিয়ের পরও কি ওকে ভালোবাসবে না পিউ ?
পিউয়ের সেই বান্ধবী আরও বলেছে যে, নিয়মিত পড়াশুনা করে বলে পিউ টিচারদের খুব প্রিয় ছাত্রী। তাছাড়া ওদের টিচারগুলো সবাই প্রায় মাঝবয়সী আর ম্যারিড। তাদের সাথে এ ধরনের সম্পর্ক তৈরির প্রশ্নই আসে না পিউয়ের। আর এর বাইরে কোনো হাউস টিউটরও কখনও ছিল না পিউয়ের। সবাই ওরা বান্ধবীরা একসাথে কোচিং করত স্কুল, কলেজে থাকতে। তাহলে হঠাত এই উল্কাপাতের মতো টিচার এসে জন্মাল কোথা থেকে?
তাহলে?
শেষ পর্যন্ত শ্রাবণের মনে হয়েছে মেয়েটা কোনো কারনে বিয়ে করতে চাইছে না। তাই একটা মিথ্যে অজুহাত দাঁড় করিয়েছে ওর সামনে। সেজন্যই শ্রাবণ আর বিয়েটা ভাঙেনি। পিউয়ের যদি সত্যি কেউ থেকে থাকে তবে ওই ভেঙে দিক বিয়েটা। শ্রাবণ কেন দোষ ঘাড়ে নিবে? এদিকে ওর মায়ের শরীর এমনিতেই খুব একটা বেশি ভালো যাচ্ছে না আজকাল আর পিউকে শ্রাবণের অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে।
শ্রাবণ ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছে প্রায় দশ মিনিট কিন্তু পিউ এখনও অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে।
"উহ্ "
অযথাই কাশল শ্রাবণ বার কয়েক। আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে ও। কিন্তু না... একেবারে পাথরের প্রতিমা হয়ে বসে আছে পিউ । নামটা শ্রাবণের দারুন পছন্দ হয়েছে। মনে হয় ছোট্ট একটা পাখি। শ্রাবণের কী ভীষন ইচ্ছে হচ্ছে বউটাকে জড়িয়ে ধরে একটু আদর করে নিতে।
দূর থেকেই স্ফটিকের মতো হীরের নাকফুলটা পিউয়ের ধারাল নাকটাকে আরও সোন্দর্যমন্ডিত করে তুলেছে। ধারাল নাকে নিজের নাকটা একটু ঘষে নিলে কেমন হয়? কিন্তু তা আর হচ্ছে কই। গালফুলো বুড়ি একটা।
প্রথম বিয়ে, প্রথম বউ আর তার জন্য মন কেমন করাটাও তো প্রথম। কিন্তু বউটা ওর আসলেই একবারে কাঠখোট্টা।
"পিউকাহা তোমার রাগটা কি এখনও আগের মতই আছে না একটুখানি কমেছে?" শ্রাবণ বিছানায় বসতে বসতে জানতে চাইল।
ওর ঘরটা এই স্বল্প সময়ের মধ্যে ফুল দিয়ে সাজান হয়ে গেছে কাজিনদের বদৌলতে। পুরো বিছানায় লাল গোলাপের পাপড়ির ছড়াছড়ি। এসিটা খুব হালকা ভাবে চালু রয়েছে। ভয়নক রোমান্টিক পরিবেশ বিরাজমান... অথচ পিউ মনে হচ্ছে টোটালি সুইচড অফ হয়ে আছে।
শ্রাবণ যে ওর বেশ কাছ ঘেষে বসেছে পিউ সেটা টের পাচ্ছে। ওর মাথার ওড়নাটা আগের মতোই লম্বা করে ঝুলান রয়েছে। রাগে পিউ বিয়ের কাপড়ও চেঞ্জ করেনি। কী দরকার? আম্মু বোঝা ঘাড় থেকে নামাতে চেয়েছিল। নেমে গেছে ঘাড় থেকে। এখন ও বাঁচুক মরুক কার কী। রিদমের কথা মনে পরে খুব কষ্ট হচ্ছে পিউয়ের। আচ্ছা ছেলেটা বাঁচবে তো? মনে হতেই বুকটা ছিড়ে যেতে চাইল। ইশশ... যদি রিদমের মাথাটা একবার বুকে চেপে ধরতে পারত, পিউ না পেরে চোখ বন্ধ করে ফেলল। এত কষ্ট হচ্ছে যে ও ভাষায় প্রকাশ করতে পারছে না। এরচেয়ে তো মরন অনেক গুন ভাল ছিল ওর জন্য।
"কী কথা বলবে না একদম? আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না? " শ্রাবণ আলতো হাতে পিউয়ের একটা হাত তুলে নিল।
যেন কেন্নো এসে পড়েছে ওর শরীরে... পিউয়ের গা টা ঘিনঘিন করে উঠল। মিথ্যুক একটা লোক। শুধু ওর বাড়িঘর দেখে এই লোক ওকে কথা দিয়েও কথা রাখল না। পিউয়ের ইচ্ছে হচ্ছে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিতে। রিদমের সাথে ওর আত্মার সম্পর্ক। রিদম যখন ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে , পিউয়ের নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ মনে হয়। আর এই লোকটার হাতের ছোঁয়া ওর কাছে কেমন অশুচি মনে হচ্ছে।
শ্রাবণ একটু হতভম্ব ভাবে পিউয়ের দিকে তাকাল। পিউয়ের চোখে কি সত্যিই ওর জন্য ঘৃনা দেখল শ্রাবণ? এক ঝটকায় নিজের হাতটা শ্রাবণের হাত থেকে সরিয়ে নিল পিউ।
"খবরদার আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না।আপনি একটা প্রতারক, ঠগ।"
পিউয়ের কথাগুলো এতটাই রূঢ় ছিল যে শ্রাবণ প্রথমে বুঝতেই পারেনি ওর পিউকাহা ওকে ঠিক কী শোনাল।
একি সেই প্রথম দেখা পিউ? হ্যাঁ, পিউ একটা অনুরোধ করেছিল ওকে। শ্রাবণ কথাও দিয়েছিল। কিন্তু শ্রাবণ তো তার কোনো সত্যিকারের ভিত্তি খুঁজে পায়নি। যে নেই তার জন্য ও কেন জায়গা ছাড়বে? আর পিউকে পাওয়ার লোভটাও এত প্রবল ভাবে মাথাচাড়া দিচ্ছিল যে শ্রাবণ পিউয়ের অনুরোধটা রাখতে পারেনি। এখন ওর মনের, ওর ভালেবাসার কি কোনো মূল্য দেবেনা ওর স্ত্রী? শ্রাবণ তো পিউয়ের আগে এভাবে কাউকে চায়নি কখনো। ওর সমস্ত ভালোবাসার চাবিকাঠি তো পিউয়ের হাতে তুলে দিতেই চেয়েছে ও প্রথম দিন থেকে। কিন্তু পিউ যে তীব্রতার সাথে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল, শ্রাবণের স্বপ্নগুলোও সেই সাথে তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল। পিউ যদি অভিযোগ করত, অভিমান করত গায়ে লাগত না শ্রাবণের। কিন্তু পিউয়ের কন্ঠস্বর যেন তুষের আগুনের মতো, ধিক ধিক করে জ্বলছে অবিরত।ওইটুকু কথাতেই যেন মনের বিষ সবটা উগ্রে দিয়েছে পিউ। শ্রাবণ হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকে নিজের নবপরিণীতার দিকে।
তাহলে কি পিউয়ের কথাই ঠিক ছিল?
চোখজোড়া ছলছল করে উঠল শ্রাবণের। এত বড়ো ভুল হয়ে গেল? মেয়েটাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। সব ভুল ওর। এখন কী করবে শ্রাবণ। ভাঙা মন নিয়ে কি সংসার করা যায়? শুধু যদি পিউয়ের শরীরটা ওর কাম্য হতো তাহলে না হয় আলাদা
কথা ছিল। কিন্তু ওতো মন ডিঙিয়ে স্বপ্নসৌধ গড়তে চায়নি।
শ্রাবণ আর কথা বাড়াল না। কেন যেন বড্ড অপমান লাগছে। নিজেকে এতটা ছোটো না করলেও পারত ও। কথা না বাড়িয়ে আস্তে করে বালিশ টেনে শুয়ে পড়ল শ্রাবণ। মনের সাথে সাথে এখন শরীরটাও কেমন অবসন্ন লাগছে। মনে মনে ছোট্ট একটা সংসারের ছবি একেঁ ফেলেছিল। ভুলে গিয়েছিল মরুভূমির বুকে মরুদ্যানের চাইতে মরীচিকাই বেশি থাকে।
পিউ ঠায় বসেই রইল। এত খারাপ একটা লোকের সাথে একঘরে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর। বিয়ে ভাঙবে না সেটা ওকে মুখের সামনে বলে দিলেই হতো। খামোখা নাটক করার তো কোনো প্রয়োজন ছিল না। বিয়ে হবেই জানলে পিউ নিজেও আর লোকটাকে মিছে স্বপ্ন দেখাতো না। এখন তো ও নিজেও একটা মিথ্যেবাদী হয়ে গেল। এত কষ্ট লাগছিল রিদমের মুখটা মনে করে, পিউ দুহাতে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল।
এরপর একসময় কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে গেল।
ভোরে ঘুম ভেঙে শ্রাবণ অপলক ভাবে কিছুটা সময় তাকিয়ে তাকল পিউয়ের ঘুমন্ত মুখটার দিকে। পিউ ওর পায়ের কাছে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। চোখের পানি শুকিয়ে হালকা একটা দাগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে ভয়নক ভাবে টানছে পিউয়ের লেপ্টে যাওয়া দুচোখের কাজল। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের উপর পড়ে আছে। ঠোঁটটা একদম গোলাপের পাপড়ির মতো গোলাপি। শ্রাবণ চোখ বন্ধ করে মুখ ঘুরিয়ে নিতে চাইল। কিন্তু আবার ফিরে তাকাল। ওর যে ভীষন মন কেমন হচ্ছে। দুহাতের মধ্যে টুলটুলে মুখটা তুলে ধরতে মন চাচ্ছে।
প্রতিটা নিঃশ্বাসের সাথে পিউয়ের বুকটা হালকা ওঠানামা করছে। শ্রাবণ দ্রুত চোখ সরাল। ওর ভেতরে কী অসম্ভব তোলপাড় হচ্ছে, পিউ কি ওকে একটু ভালোবাসবে না কখনও?
শ্রাবণের খুব ইচ্ছে হচ্ছে পিউয়ের হাতটা ওর নিজের মুখের উপর চেপে ধরতে। নতুন বউয়ের মেহেদি দেওয়া হাতের মধ্যে কী অদ্ভুত প্রশান্তি, যে পারে না তার চেয়ে এই কষ্ট বুঝি আর কেউ জানে না। বড্ড শখ ছিল, নিজের বউয়ের মুখটা ভোরের আলোয় খুব কাছ থেকে দেখার। গল্পে শোনা লজ্জায় রাঙা মুখটা কি কখনও দেখার সৌভাগ্য হবে ওর? পিউ কখনো হেসে কুটি কুটি হয়ে ওর বুকে মুখ লুকোবে?
নিজের ইচ্ছে গুলোতে কোনো ভুল ছিল বোধহয়। চাইলে এক্ষুনি শ্রাবণ জোর করে নিজের অধিকার আদায় করে নিতে পারে। কিন্তু না তঞ্চকের মতো কিছু নিতে ও রাজি নয়।
তারচেয়ে বরং একবার ক্ষমা চেয়ে দেখবে পিউয়ের কাছে? যদি ওর ভুলটা ক্ষমা করে দেয় মেয়েটা।
ঘুম থেকে উঠে পিউ এদিক ওদিক তাকাল। এটা কোথায় ও? ওর ঘরের দেয়ালের রঙ তো অফ হোয়াইট। আর এই ঘরটা কেমন করে যেন রঙ করা, এক এক দেয়াল এক এক রঙয়ের। ঘরটা অনেক ফার্নিশড তবু বিচ্ছিরি লাগছে। তারপর হঠাৎ দেয়ালে লাগান ছবি দেখে মনে পড়ল, আরে এটা তো সেই ডাক্তারের ঘর। সাথে সাথে উল্টো পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখল বিছানার ওপাশটা একদম খালি।
ভালো হয়েছে ঘুম থেকে উঠে ওই শয়তান লোকটার মুখ দেখতে হয় নাই। চোখ বন্ধ করতেই রিদমের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠল পিউয়ের। বাচ্চাটাকে বুকে জাপটে নিতে পারলে ওর যত সুখ। রাহাতকে কল করতে হবে যেন আজ রিদমকে ও কোনমতে একটু সামলে নেয়। কাল ও যে করেই হোক বের হবেই হবে। রিদমকে ছাড়া থাকতে পারবেনা পিউ। ওর মুখে আম্মু ডাকটা যে কত মধুর, পিউ সব কষ্ট ভুলে যায় মুহুর্তেই। এখনও মনে পড়ে রিদম যখন পেটে তখন খুব কষ্ট করতে হয়েছে ওকে।
মুখ হাত ধুয়েই রাহাতকে কল করল পিউ।
"কেমন আছে ও? কাল একটু জ্বর জ্বর ছিল কিন্তু।"
"না এখন ভাল আছে রিদম। তুমি চিন্তা করো না। কাল যে করেই হোক একটু এসো। রিদম সারাক্ষন আম্মু আম্মু করছে। আমি কোলে নিয়েও থামাতে পারছি না। তোমাকে না দেখলে ও ঠান্ডা হবেনা। "
পিউয়ের বুকের মধ্যে আবার তোলপাড় শুরু হলো। চোখের পানি আটকাচ্ছে না। দুইহাত দিয়ে নিজের দুই কান চেপে ধরল পিউ। উহঃ... কি অসহ্য।আম্মু শব্দটা ছাড়া ওর কানে আর কিছু আসছে না। ও মনে হয় পাগল হয়ে যাব।
"কি রে মা নাস্তা করবি না? "
শাহানা বেগমের ডাকে হুঁশ হলো পিউয়ের। তাড়াতাড়ি চোখ মুছে শাশুড়ির দিকে তাকাল ও। শাহানা আন্টির কথা আম্মু খুব বলে। ছোটো থাকতে কয়েকবার এসেছিল ও মায়ের সাথে এ বাড়িতে। তারপর আর তেমন আসা হয়নি বলে ভুলে গিয়েছিল। তাছাড়া পড়াশুনার চাপে বাইরে তেমন ঘোরাও হতো না ওর।
পিউ শাশুড়ির পিছে পিছে ডাইনিং রুমে এসে ঢুকল। শ্রাবণ আর ওর মেঝ খালু বসে নাস্তা করছে। শ্রাবণ একবার পিউয়ের দিকে তাকিয়ে আবার নাস্তায় মনযোগ দিল যেন সবকিছু খুব স্বাভাবিক।
কিন্তু পিউয়ের মনটা আবারো বিষিয়ে উঠল।
কী অভিনয়ই যে জানে এই লোক। মনে হচ্ছে এই লোকের চেয়ে ভালো মানুষ দুনিয়ায় আর হয় না। অথচ একে বিশ্বাস করেই পিউ হেরে গেলো। কোনো মানুষের প্রতি এতটা ঘৃনা পিউয়ের আগে কখনো হয়নি। নিঃশব্দে নিজের খাবার শেষ করল পিউ, তারপর শাশুড়ির পিছে পিছে রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকল।
"সে কী পিউ, তুই এখানে কেনো! যা বের হ বলছি। সাতদিনের আগে রান্নাঘরে ঢুকবি না একদম। আমি কি মরে গেছি যে এক্ষুনি তোকে হেঁশেল ঠেলতে হবে? আর আমি তোর মা এখন, আগের চেয়ে অধিকারও বেশি আর তোর এখন আদরও বেশি।"
শাশুড়ির কথায় প্রথম বারের মতো একটু হাসল পিউ এ বাড়িতে এসে। কত সহজে ওকে আপন করে নিলেন শাহানা আন্টি। অথচ তার ছেলে ওর কত বড়ো সর্বনাশ করল।
পিউ ঘরে ঢুকেই দেখল শ্রাবণ নিজের ল্যাপটপে ব্যাস্ত। বিরক্তকর, এই লোক শুধু ঘরের মধ্যে ঘুরঘুর করে নাকি মহিলাদের মতো। ওর ছোট ভাইটা সারাক্ষণই বাইরে টো টো কোম্পানির মতো ঘুরতে থাকে। ফোন না দিলে সহজে বাসায় আসে না। আর এই লোক তো মনে হয় কেউ ফোন না দিলে বাসা থেকে বের হয় না। পুরাই ফালতু একটা লোক। নিজের ওয়েট বলে কিছু নেই।
শ্রাবণ মনযোগ দিয়ে নতুন একটা আর্টিকেল পড়ছিল ল্যাপটপে। হঠাত যান্ত্রিক শব্দে ওর মনযোগটা ভাঙল। ফোন বাজছে কোনো একটা। কিন্তু রিংটোন বন্ধ করে ভাইব্রেশন দেওয়া।শ্রাবণ তাকিয়ে দেখল ওর নিজের মোবাইলটা ওর হাতের কাছেই রয়েছে। তাহলে পিউয়েরটা ফোনটা বাজছে বোধহয়।
ফোনটা আবারও বেজে উঠল। এবার আর উপেক্ষা করতে পারল না শ্রাবন, উঠে ফোনটা হাতে নিল। দেখল রাহাত নামের কেউ ফোনটা দিচ্ছে। ফোনটা হাতে নিয়ে ধরবে কী ধরবে না ভাবছে শ্রাবণ, ঠিক সেই মূহুর্তে ফোনটা কেটে গেল।
স্ক্রীনে ভেসে উঠল পিউয়ের সুন্দর একটা ছবি। ছবিতে পিউয়ের সাথে ছোট্ট টুলটুলে একটা বাচ্চাও আছে। কিন্তু এই বাচ্চাটা কে?
চলবে....
Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top