#7 ধকাস ধাক্কা!!!

Thank you so much everyone for all your votes and 100 reads!!!"

Dedicating this chapter to-

nadimamuna and mistytic...thank you so much guys❤❤❤

*****************

ধকাস ধাক্কা!!!

#ছোটগল্প

#

এতক্ষণে পাঠকেরা নিশ্চয়ই গল্পের নায়ক নায়িকার পরিচয় পেয়ে গেছেন।নায়ক আর নায়িকা আপাতত নিজেরাও জানে না তাদের জীবনে কি ঘটতে যাচ্ছে,কারণ দুটি বিপরীত চারিত্রিক মানুষ স্বাভাবিকভাবেই দুজন দুজনের কাছ থেকে দূরে থাকে,কিন্তু তারা নিজেরাও বুঝে না যে,বিপরীত মেরুদ্বয় পরস্পরকে আকর্ষণ করে!


অফিসে জয়েনের পাঁচ দিনের মাথায় রাশেদের সাথে নিম্মি রাস্তায় এমন এক ধাক্কা খায় যে সারাদিন দুজনেই চরম বিরক্তি নিয়ে বসেছিল আর ভাবছিল একে অপরকে কিভাবে শায়েস্তা করবে।কিন্তু ঢাকা শহরের মত পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত শহরে মানুষগুলো এতটাই আত্মকেন্দ্রিক আর কর্মব্যস্ত যে অন্যকে নিয়ে বেশিক্ষণ ভাবার সুযোগ আর সময় তাদের হয় না।তাই না চাইলেও দুজন আবার যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।কিন্তু ভাগ্য বলেও তো কিছু আছে,তাই না?সেই ভাগ্য আপনি যেখানেই থাকুন,যার সাথে আপনার জোড়া,তার সাথে মিলিয়ে দিবেই,যদিও তারা একজন থাকে হিমালয়ের গুহায়,আরেকজন এন্টার্কটিকায়!

ঐ ধাক্কার তিন দিন পর নিম্মি অফিসে কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠে,মাথাটা কেমন যেন ব্যথা করছে।উঠে গিয়ে মাজনুন ভাইকে বলে তার মনের মত করে এক কাপ কফি দিতে,আর এর মাঝে সে ক্যাফে কর্নারের একপাশে গিয়ে দাঁড়ায়।এদিকটার ডেকোরেশন খুব সুন্দর।একপাশের দেয়াল পুরোটা কাঁচের,কিছু বসার সোফা আছে,গাছ আছে।সোফায় বসে ভাঙাচোরা শহরটাকেও দেখতে স্বর্গরাজ্য মনে হয়।তবে এখানে বসে কফি খাওয়ার মত সময় নিম্মির নেই,অফিসে ভালোই কাজের চাপ চলছে।গরম কফিটা হাতে নিয়ে একটু ঠান্ডা করে নেয় চামচ দিয়ে নাড়িয়ে।এরপর কফিতে হাল্কা চুমুক দিতে দিতে যখন সে ডেস্কের কাছাকাছি চলে এসেছে,মোড় ঘুরলেই ওর ডেস্ক,উল্টো দিক থেকে তখন ফাইলের দিকে তাকিয়ে থাকা রাশেদ আসছে,তাই আবারো ধামাধাম এক ধাক্কা! ধাক্কার ফলে নিম্মির সাধের কফি উড়ে গেল,উড়ে গিয়ে পড়ল তিন হাত দূরে,আর কফির কিছু ছিটে এসে পড়ল রাশেদের জুতোয়,আর রাশেদের ফাইল থেকে পেপার গুলো উড়ে গিয়ে চারপাশে ছিটিয়ে পড়ল!

সিনেমার কাহিনী হলে হয়ত রোমান্স হতে পারত,দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিতে পারত,সরি বলে লাজুক চাহনি বিনিময় হত,অন্তত রাশেদ তাই ভেবেছিল,কিন্তু এটা সিনেমা না! তাই এসব দেখে নিম্মি পুরো ফ্রিক আউট করে,

-অন্ধ আপনি?!আমার কফি উড়িয়ে দিছেন একদম! চোখে না দেখে কোন দিকে তাকিয়ে হাঁটেন হ্যাঁ?

রাশেদও কম কিসে?রোমান্স না জুটুক কপালে,তাই বলে ঝগড়া করতে পারবে না?
-আমি অন্ধ?আপনি আন্ধী!আপনার কারণে আমার ফাইলের সব কাগজ এলোমেলো হয়ে গেছে!

-আজব মানুষ দেখি আপনি!দোষ আপনার,আর আমাকে বকতেছেন!

-দোষ আপনার, আমার না,শুধু শুধু বাজে বকবেন না!

-আরে ভাই,আপনার কাগজ তো তোলা যাবে,গোছান যাবে,আমার কফি তো পুরাটাই দিলেন ফেলে!

-আপনি কফি নিয়ে আসতেছেন তো আওনি সাবধান থাকবেন না?নিজে না দেখা হাঁটে আবার আরেকজনের দোষ দেয়!

-ধুর মিয়া,আপনার সাথে কথা বলাটাই অনুচিত!

নিম্মি গটমট করে আবার ঘুরে যায় কফি কর্নারের দিকে,আবার বানানো লাগবে কফি,ওদিকে রাশেদও বিড়বিড় করে নিম্মিকে বকতে থাকে।

কিছুদিন পর রাশেদ ম্যানেজারের রুমে গিয়ে কথা বলছে।কথা বলা শেষে সেখান থেকে বেরুবার সময় যেই না দরজা খুলেছে,ঠিক তখন ওপাশ থেকে নিম্মি আসছিল আর সামনে থেকে সদ্য খুলে যাওয়া দরজার সাথে দুম করে ধাক্কা খেয়ে একেবারে মাটিতে! রাশেদ চমকে ওঠে পিছে তাকিয়ে দেখে এক মেয়ে কপালে হাত দিয়ে এক মেয়ে মেঝেতে বসে আছে,দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে কপালে হাত দিয়ে বলে "সরি!"
মেয়েটা যেই না মুখ তুলে তাকায়,তখন দেখে এটা নিম্মি!নিম্মি চিৎকার করে ওঠে,
-আপনি!!!
-হ্যাঁ,আমি!আসলে দেখিনি যে পেছন থেকে আপনি...
-আপ্নি দেখবেন কি?আপনি কি কিছু দেখেন?আপনার চোখ আছে?চোখ থাকলে বারবার আমাক ফেলতেন না!রাখেন কোথায় চোখদুটো? পকেটে?আমার মাথা ফাটিয়েই দিলেন আজকে!আমার মাথাটা শেষ করে দিয়েছেন একেবারে!ওহ আল্লাহ,তুমি আজ আমাকে বাঁচাইছ, আরেকটু হলে এই লোক আমাকে মেরেই ফেলত!
এক নাগাড়ে এসব কথা বলে নিম্মি কান্না শুরু করে।এদিকে রাশেদ না পারছে নিজের দোষ মানতে,না পারছে কিছু করতে।কিন্তু মেজাজ ততক্ষণে ওর চটে গেছে।মুখ কালো করে একটা ঝাড়ি মারে,
-এই মেয়ে!চুপ!একদম চুপ!আমি কিভাবে দেখব,তুমি এদিক থেকে আসতেছ,তুমি দেখবা না,হ্যাঁ?!নিজে না দেখে চলাফেরা কর বলে নিজেই সবার সাথে ধাক্কা খেয়ে ক্যালেংকারি কর!
-আমি মোটেও সবার সাথে ধাক্কা খাই না!শুধু আপনার মত একটা অন্ধ আমার সাথে এসে ধাক্কার ব্যবস্থা করে!

ওদের চিল্লাপাল্লা শুনে আশেপাশের কয়েকজন ওখানে চলে আসে,তারাও দুভাগে ভাগ হয়ে যায়,কেউ বলে নিম্মি খেয়াল করলেই হত,কেউ বলে রাশেদ আস্তে করে দেখে খুললেই পারত,দরজা তো কাঁচের,কাঠের না।তখন রাশেদের খেয়াল হয়,নিম্মির কপালে একটা আলু উঠে গেছে,সেটা লালও হয়ে গেছে।
-আরে ভাই,সরেন,যা গেছে,গেছে,মেয়েটার কপাল ফুলে গেছে,ওকে কেউ একটু বরফ এনে দেন প্লিজ।
-লাগবে না,আমারটা আমি একাই লাগাতে পারব,
বলে নিম্মি উঠে একাই চলে যায়।রাশেদের মনে হয়,ব্যথা পেয়েছে,একদম ঠিক আছে,বেশি দেমাগ এই মেয়ের!

সেদিন বাসায় গিয়ে নিম্মি আয়নার সামনে দাঁড়ায়,ইশ!এই আলুটাকে চুল দিয়েও ঢাকা যাচ্ছে না।মা দেখে সে কি চিন্তা।মা কি আর জানে একটা খবিস মানুষের কারণে ওর কপালটা আলু হয়ে গেছে?

এরপরের দুদিন পর্যন্ত নিম্মি আলুর মত ফোলা কপাল নিয়েই অফিসে যায়।রাশেদ দূর থেকে ওকে দেখে খারাপ লাগে,কিন্তু কাছে গিয়ে একবারও সরি বলার সাহস পায় না।কারণ সেদিন ও বেচারি ব্যথা পেয়ে নাহয় কিছুটা রিএক্ট করেছিল,কিন্তু রাশেদ তো চুপ থাকতে পারত,ওকে ভালোভাবে সরি বলতে পারত,কিন্তু তা করেনি।এখন ওর মত মুখচোরা মানুষ কিভাবে সরি বলবে?আহারে,কপালে নিশ্চয়ই ব্যাথা করে!অনেক ভেবে রাশেদ উপায় বের করে।

পরদিন নিম্মি অফিসে ডেস্কে এসে দেখে সেখানে এক কাপ ধূমায়িত কফি আর একটা কিটকাট রাখা।মগের নিচে একটা চিরকুট যাতে লিখা-
"কফির বদলে কফি,
আলুর বদলে চকলেট,
আর মানুষটা খুব সরি,
যদিও সে একটু লেট!"

নিম্মি একটু ভেবে হেসে ফেলে।কফিতে চুমুক দিয়েই চোখ বুজে হাসিটা আরো বিস্তৃত হয়,আহ,এই কফির বদলে যে কেউ মাফ পাবে।কফি শেষে উঠে দেখে রাশেদ ওর কেবিন থেকে বেরুচ্ছে,দুজনের চোখে চোখ পড়ে যায়।এই প্রথম দুজন দুজনের দিকে চেয়ে হাসে।

রাশেদ ঘুরে এসে নিজের কেবিনে বসে নিম্মির হাসির কথা ভাবতে থাকে।মেয়েরা চকলেট পেলে,আবার নিজের প্রিয় কিছু পেলে সব ভুলে যায়।নিজে নিজে হাসে আর কাজে মন দেয়।

দুপুরের লাঞ্চ টাইমে ভাবে নিম্মির সাথে খাবে কিংবা ওকে বলে দেখবে মেয়েটা কি বলে।ওর ডেস্কের কাছে এসে দেখে শরীফ আর মারুফের সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলছে,আর চুল গুলো খোপা থেকে খুলে দিয়েছে।খোলা চুলে নিজে হাত বুলাচ্ছে আর এপাশ ওপাশ করছে।কি হল রাশেদ বুঝল না কি হল, কিন্তু ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।এত হাসাহাসির কি আছে,হ্যাঁ?তাও আবার ওদের সাথে?তাও আবার এভাবে চুল খুলে?এগুলা কি অফিসের ভেতর?

নিম্মির কান্ড দেখে রাশেদ ওর সাথে লাঞ্চের অফার জানাবে কি,উল্টো রাগে খিটমিট করতে থাকে।মেয়েমানুষ সব এক রকম নাকি,হ্যাঁ? ছোট থেকে আজ অব্দি সবগুলা একই কেন!
রাশেদ কেবিনে এসে এদিক ওদিক হাঁটতে থাকে।নিম্মির খবর আছে,চুল খুলে কলিগদের সাথে সাথে হাসাহাসি বের করবে ও!

চলবে...

লেখনীতে, #Abiar_Maria

Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top