#3 Reunion (3)

Reunion

#ছোটগল্প

#

নিম্মি কঠিন চাহনী জাহিদের দিকে ছুড়ে দেয়।জাহিদ এমন ভাব করে,যেন কিছুই বুঝে না।ওর কাছে এসে বলে,
-কিরে?কখন আসলি?আবার চলেও যাইতেছিস?সাজুগুজুও করছিস দেখি।তা চলে যাইতেছিস কেন?

নিম্মির মেজাজ সপ্তমে চড়ার মত অবস্থা।এখন আর ওর সাথে ভাণ করার সময় নাই,যা বলার সরাসরি মুখের উপর বলবে।খারাপ হওয়ার আগেই মেজাজ কোন মতে নিয়ন্ত্রণে এনে বলে,
-তোর নাকি প্রেমিকা আছে শুনলাম,তা এটা কি সত্যি?
জাহিদ একটা তেলতেলে হাসি দিয়ে মাথা চুল্কায়। চুল্কাতে বলে,
-কার কাছ থেকে শুনলি?
-যার থেকেই শুনি,তা জেনে কি হবে?সত্যি না মিথ্যা সেটা শুনতে চাই।
-আরে,এরকম দুচারটা তো থাকেই,সময় পারের জন্য!এগুলো সিরিয়াস কিছু না!
-কি!সময় পার করা?তুই টাইম পাস করা শিখছিস?তুই যে চরিত্রহীন,তা আমি আগে তো জানি নাই!
-আরে ধুর,চরিত্রহীনতার কি আছে এখানে?ওদের সাথে একটু মজা করি,ভালো সময় কাটে।কলেজ লাইফেই তো এগুলা করব,না হয় আর কখন?
নিম্মি শুধু অবাক হতেই থাকে।এসব কি!
-তুই তারমানে আমাকেও...মানে আমাকে নিয়েও...এসব ভেবেই...তাই না??
-আরে নাহ,তুই তো আমার বান্ধবী!
-তাহলে চিরকুট কেন দিলি?আর আমার হাত ধরা?বাসার সামনে দাঁড়ানো??এসব কি জাহিদ?এগুলার মানে কি বল!
-আরে,তোকে এমনিতেই দেখতে ইচ্ছা করত,নীল শাড়ীতে দেখতে ইচ্ছা করেছিল,আর কিছু না।এত সিরিয়াস হইতেছিস কেন?!আর নিজেকে দেখছিস?আমাদের যায় নাকি?কোন দুঃখে এসব ভাব্লি?এইসব ভাবিস কিভাবে বল তো?সব কিছু বন্ধুসুলভ স্বাভাবিকভাবে নিবি,দেখবি সব কত সুন্দর!

এবার নিম্মির পায়ের রক্ত মাথায় উঠে আসে।এগুলা কোন জাতের ফাজলামি?আবার ওর চেহারা নিয়েও কথা বলে?কলেজের নজরকাড়া সুন্দরী না হতেই পারে,তাই বলে এতটাই খারাপ যে...?জাহিদকে ইচ্ছা করে কষে একটা চড় দিতে,কিন্তু ও পারে না।চিৎকার করতে ইচ্ছা হয়,কান্না করতেও ইচ্ছা করে,কিন্তু কিছুই করা হয় না।শুধু ঘুরে ওদের উঠোনটা পার হয় পেছনে ডাকতে থাকা জাহিদকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে।

নিম্মি কোনমতে কান্না চেপে বাসায় এসে অনেক কেঁদেছিল।সায়মার বাসায় ফোন দিয়ে ওকে আসতে বলে।বান্ধবী এলে তাকে জড়িয়েও কাঁদে।জাহিদ এরকমটা কেন করল?নিম্মি কি ক্ষতি করেছিল?মানুষ পড়ালেখায় পেছানোর জন্যেও এত নিচে নামতে পারে?তাও আবার কলেজের সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়ার জন্যে?ওর কানে বারবার বাজে জাহিদের তার মাকে বলা সেই কথাগুলো, "যে প্রথম হওয়ার কথা,ও যাতে প্রথম না হয়,সেই ব্যবস্থা করছি!" এটাই ব্যবস্থা?! যেন নিম্মি ওর প্রেমে হাবুডুবু খায়?যেন ও কলেজের বেস্ট স্টুডেন্ট হয়?

নিম্মি এরপর অনেক চেষ্টা করে,তবুও আগের মত পড়তে পারে না।বারবার ওর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনের মাঝে উঁকি দিতে থাকে।জাহিদের সাথে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে,ওর সাথে বন্ধুত্ব দু পায়ে পিষেছে,তবু ওর থেকে পাওয়া আঘাত ভুলতে পারে না কিছুতেই।এত ভালো বন্ধুত্বের মাঝে এত ভয়ানক বিষ ছিল যা নিম্মি কোনোদিন বুঝে নি ।মানুষ এতটাও খারাপ হতে পারে?এইটুকু স্বার্থের জন্য?নিম্মি চুল ধরে টানাটানি করে।ও এত স্টুপিড কেন!মানুষ চিনতে এত বড় ভুল হয়ে গেল যে এখন জীবনের ক্ষতি করে সে ভুলের মাশুল দিতে হবে ওকে।

এইচএসসি পরীক্ষা ভালো ভাবেই পার হয়।এই দেড় মাস জাহিদের দিকে একবারের জন্যেও তাকিয়ে দেখেনি।নিজের মত সেন্টারে গেছে,পরীক্ষা দিয়েছে,বেরিয়ে চলে এসেছে।সবাই মোটামুটি বুঝতে পারে নিম্মির মন মেজাজ ভালো নেই,কিন্তু এর পিছের ঘটনা সায়মা ছাড়া আর কেউ জানে না।

যেদিন রেজাল্ট দেয়,সেদিন ও ভালোই খুশি ছিল।তিন বিষয়ে লেটার মার্ক পেয়েছে।যদি এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটত,তবে বোর্ডে স্ট্যান্ড করার একটা সুযোগ ছিল।তবে এসব ভেবে লাভ হবে না।সবার সাথেই কথা হয় ওর,এর মাঝে সায়মা ওর বাসায় আসে।
-কিরে,কেমন আছিস?
-ভালোই।তুই কেমন আছিস?এত শুকাইছিস কেন?রেজাল্ট বেশি ভালো হয় নাই তাই?
-ধুর,যা হওয়ার হয়েই গেছে।এরজন্যে শুকায় কি হবে!
-জানিস...একটা কথা...জাহিদ অনেক ভালো করেছে।তুই তো কলেজের মাঝে ষষ্ঠ হইছিস,ও ফার্স্ট হইছে...এত নাম্বার বেশি কিভাবে পাইল সেটা বুঝলাম না!

নিম্মি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
-জাহিদ তো এজন্যেই আমার সাথে এই নাটক করল,যেন আমি ওর রাস্তায় না আসি।শুধু ওটা না,আমাকে একেবারে এক টানে কত পিছে ফেলে দিল!হাহ!এসব মানুষই বড় বেশি সুখে থাকে!!
সায়মা মুখ নিচু করে থাকে।নিম্মির মত মেয়ের সাথে যা করেছে জাহিদ,ও কখনোই এসব পাওয়ার যোগ্য না।উপরন্তু নিম্মি ওকে পছন্দ করে ফেলেছে,এ জাতীয় কথাও জাহিদ নাবিল,শাহেদ,তন্ময় ওদের কাছে বলেছিল।নিম্মি অবশ্য এসব সেভাবে জানে না,সায়মা চেপে গিয়েছিল।কি দরকার ওকে কষ্ট দেয়ার?মেয়েটার মনে কষ্ট কি কিছু কম পড়ে গেছে নাকি?

রিইউনিয়নের অনুষ্ঠানে বসে নিম্মি ভাবতে থাকে,জাহিদের কলিজা কেটে দেখা যেত,ও সুখ কতটা পেয়েছে!কিন্তু তবু কেন যে ছেলেটাকে কেন যেন ততটা ঘৃণা করতে পারছে না।আচ্ছা,এটা কেন হচ্ছে?জাহিদ অনেক হ্যান্ডসাম বলে,তাই?নাকি ওর সেই কৈশোর জীবনের ভালোবাসা এখনও কোথাও লুকিয়ে আছে তাই?ভাবতেই ভাবতেই জাহিদ ওর হাত ধরে,
-নাচবে আমার সাথে?

জাহিদের এমন উন্মুক্ত আহবানে নিম্মি অবাক হয়ে যায়।ছেলেটার কি কিছুই মনে নেই?নাকি এখন ওর সৌন্দর্য দেখে একটু চেখে দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে?নিম্মি অস্বস্তি নিয়ে সায়মার দিকে তাকায়।দেখে মঈন ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে নাচার ফ্লোরে।চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকাতেই সায়মা চোখের ইশারায় নাচতে বলে মঈনের হাত ধরে ফ্লোরে রওনা দিয়েছে।নিম্মি চোখ গুলো আলুর মত করে জাহিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
-আমি নাচতে জানি না,সরি
-অসুবিধা নেই,তেমন নাচাব না তোমাকে।শুধু হাল্কা কোমর দোলালেই হবে।এসো।

নিম্মির হাত ধরে ওকে নিয়ে ডান্সিং ফ্লোরের দিকে জাহিদ এগুতে থাকে।নিম্মি দোটানায় ভোগে।এতবছর পর ওর রিএকশন কি হবে? আগের ব্যাপার গুলা মাথায় রাখা কি বোকামি হয়ে যাবে?নাকি মেনে নিবে?তবে জাহিদের প্রতি যে একটা রহস্যময় আকর্ষণ হচ্ছে ওর আর সেটা এড়াতেও পারছে না,সেটা নিম্মি ভালোই বুঝতে পারছে।ঠিক করল,যা হচ্ছে,হতে থাক,থামানোর দরকার নেই।

জাহিদ ওর হাত ধরে ডান্সিং ফ্লোরে নিয়ে যায়।চারপাশে সব কাপল দেখে একটা সফট রোমান্টিক গান চালিয়ে দেয়া হয়,আলো গুলোও নিভে আসে প্রায়।জাহিদ নিম্মির হাত ধরে কাছে টেনে আনে।এক হাতে আঙুলের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে মুঠো করে উঁচু করে,আরেক হাত নিয়ে যায় নিম্মির কোমরে,নিম্মির এক হাত রাখে নিজের কাঁধে,ওর দুচোখের নজর দখল করে আছে নিম্মির দুচোখ।জাহিদ ওকে নিয়ে ধীরে ধীরে নাচতে শুরু করে।হাল্কা চালে আলো আধারীতে জাহিদকে অচেনা লাগে,কি আছে ঐ দুচোখে?নিম্মির অবাক লাগে।ছেলেটা চায় কি?

চলবে...

লেখনীতে,#Abiar_Maria

Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top