#2 Reunion (2)

Reunion


#ছোটগল্প

#

নিম্মি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।কিভাবে জাহিদকে জিজ্ঞাসা করবে এসব নিয়ে?নাকি অন্য কোন বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করবে?ঠিক করে সায়মার কাছে যাবে।আর পড়ালেখা তো একেবারে শেষ।মাত্র ১মাস বাকি পরীক্ষার,যা করার দ্রুত করতে হবে।বাবা মা যদিও খারাপ ব্যবহার করবে না,এ নিয়ে নিশ্চিত কিন্তু নিজের ভবিষ্যৎ যে গোল্লায় যাবে,সেটা নিম্মি ভালোই বুঝে।

পরদিন বিকেলের দিকে সায়মার বাসায় যায়।গিয়ে দেখে ও টিভি দেখছে।টেনে ওকে ঘরে নিয়ে আসে।
-কিরে,এত টানাটানি করতেছিস কেন?কি হইছে আবার?
-জাহিদের প্রেমিকার নাম কি?কিসে পড়ে?কোথায় থাকে?তুই দেখছিস?আমাকে দেখাতে পারবি?
সায়মা কপালে চাপড় দিয়ে বলে,
-আরে বাবা,জাহিদ যদি এত আমাদের সব জানিয়েই করত,তাহলে ক্লাসের কাউকে,তাও আবার নিজের সার্কেলের কাউকে এভাবে ফাঁসাত না!
-তার মানে কি!
-মানে হচ্ছে,ওর প্রেমিকা নিয়ে শাহেদের কাছে শুনেছিলাম।জাহিদ নাকি শেয়ার করেছিল।মেয়েটা ওর ফ্যামিলি ফ্রেন্ড,কাজিন বোন ও হতে পারে,আমি জানি না ঠিক।আর আমাদের কলেজের না,আশেপাশেরও না,এটুকু নিশ্চিত।তবে একটা কথা কি......মানে......
সায়মা আমতা আমতা করতে থাকে।
-কি!এরকম ইয়ে,মানে,এসব কেন বলতেছিস?সোজা করে বল
-তোর চেয়ে মেয়েটা অনেক সুন্দর, মানে সুন্দরী যাকে বলে। তাই ওকে ছেড়ে জাহিদ তোকে...মানে...এগুলো শাহেদের কাছে শোনা আর কি...তুই কিছু মনে করিস না,হ্যাঁ?

নিম্মির কান লাল হয়ে যায়।সায়মা এগুলো দুদিন পর পর কিসব বোমা ফাটায়?এসব কোন কথা নাকি?
নাক মুখ কুঁচকে সায়মাকে বলে,
-এখন কি করব তাই বল।
-জাহিদকে একটু বাজিয়ে দেখ কিছুদিন, এই ছেলের মতিগতি আগে বুঝে নে,এরপর কিছু একটা করা যাবে।
দুই বান্ধবী আলোচনা করে ঠিক করে এরপর কি করবে।

নিম্মি সন্ধ্যার আগেই বাসায় চলে আসে।আজ সে আর চা খেতে খেতে বেলকনির চেয়ারে বসতে যায় না,ঘরে বসে ছোট ছোট চুমুক দিয়ে পড়াতে মনোযোগের চেষ্টা চালায়,আর মাথায় ঘুরতে থাকে,জাহিদ বাইরে! এক ফাঁকে পর্দা সরিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে,জাহিদ কি আছে?হুম,ঐ তো!নাহ,ধরা দেয়া যাবে না।

এভাবে ৩দিন পেরিয়ে যায়,জাহিদ নিম্মির দেখা পায় না।প্রতি সন্ধ্যায়ই ওদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেয়,আর নিম্মিকে খোঁজে।কিন্তু নিম্মি একদমই সামনে আসছে না।জাহিদের কিছুটা চিন্তা হয়,অসুস্থ নাকি মেয়েটা?এপাশ ওপাশ হাঁটাহাঁটি করে,একটু একটু পর পর ওর বেল্কনির দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে,নিম্মি নাকি?
নিম্মিও এসব দোতলা থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে থাকে,যেটা জাহিদ ধরতে পারে না।প্রতিরাতেই নিম্মি ভাবে,আজ সামনে যাব,কিন্তু যখন মনে পড়ে,এই ছেলে একটা চালবাজ,তখন মাথা গরম হয়ে যায়,কে যায় এর সামনে!!

চতুর্থ দিন সন্ধ্যার কিছু পর নিম্মিদের ডোর বেল বাজে,দরজা খুলেন নিম্মির মা।মা কার সাথে কথা বলেন যেন,এরপর নিম্মির নাম ডাকতে ডাকতে ওর ঘরে চলে আসেন।মাকে দেখে নিম্মি নাক মুখ সব বইয়ের পাতায় ডুবিয়ে দেয়,যেন এ দুনিয়ায় বই ছাড়া কিচ্ছু চিনে না সে!
-তোর বন্ধু এসছে,দরজায় দাঁড়ায় আছে।
-(না তাকিয়ে)কোন বন্ধু মা?
-জাহিদ এসছে।
নিম্মির বুকের ভেতর লাফ দেয়,কাজে দিয়েছে ডোজ!কিন্তু আগের মতই ভাব নিয়ে বলে
-কি চায় ও?
-আমি কি জানি!সামনে পরীক্ষা,এসব নিয়েই বলবে হয়ত।বসতে বললাম,বসবে না।
-বসা লাগবে না।ওকে চলে যেতে বল।আমি পড়তেছি মা
-কি পড়তেছিস এত?দুমিনিটে পড়া কি ছাদে উঠবে নাকি?ছেলেটা দাঁড়ায়া আছে সে পড়া দেখায় আমাকে!যা ঐদিকে!

মায়ের ঝাড়ি খেয়ে নিম্মি মুখ ভেংচে ওদিকে যায়।দরজায় জাহিদ দাঁড়িয়ে আছে।ওর দিকে তাকিয়ে এক ভ্রু উঁচু করে বলে,
-কি বলবি?
জাহিদ গলা নিচু করে বলে,
-আজকাল চা খাস না?
-নাহ!
-এজন্যে বেল্কনিতেও আসবি না?
-নাহ!
-তুই কি কিছু বুঝিস না?
-বুঝি তো!আমার পরীক্ষা সামনে,পড়া লাগবে।আর কিছু বুঝে লাভ নাই।

জাহিদের মুখ কিছুটা অন্ধকার হয়ে যায়।ও বিদায় দিয়ে চলে যায়।জাহিদের সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাওয়া দেখে নিম্মির বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে।নিজেকে অনেক কষ্টে আটকে রাখে ওকে ডাকা থেকে।ঘরে এসে পড়ার টেবিলে বসে বসে ভাবে,বেশি বেশি হয়ে গেল না তো?জাহিদ কি করেছে ওর সাথে,এসব কিছুই তখন মাথায় কাজ করে না।ওর কাছে যাওয়া দরকার,কিন্তু গিয়ে কি বলবে?কোথায় যাবে?ওর বাসায় নাকি?বাসায় যাওয়া ঠিক হবে? হাবিজাবি চিন্তায় নিম্মির পড়াশোনার আরও একটা দিন বরবাদ হয়।

পরদিন নিম্মি অপেক্ষায় থাকে কখন বিকেল আসবে,কখন সন্ধ্যা আসবে,কখন জাহিদ আসবে।আজ কথা বলতে হবে।অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে বিকেল সন্ধ্যা সবই আসে,কিন্তু জাহিদ আসে না।মাগরিবের আযান দেয়,আসে না,এশার আযান দেয়,তবু আসে না।নিম্মির খুব খারাপ লাগে।হাজার হোক,বন্ধু তো! নাহয় কিছু একটা করেছে,আচ্ছা,এমনও হতে পারে না এটা চাপাবাজি ছিল?নিম্মি দোটানায় ভোগে।বাড়াবাড়ি করা ঠিক হয়নি।ওর অর্ধকঠিন হৃদয় আবারও শ্রাবণের বর্ষণ তরল করে দেয়,জাহিদকে নিয়ে আকাশপাতাল ভেবে ভেবে আরো এক দিন শেষ করে দেয়।পরীক্ষার বাকি আর ২৩দিন।

নিম্মি পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে,উদ্দেশ্য জাহিদের বাসা।একটু সুন্দর করেই সাজে,নীল রঙের সেলোয়ার কামিজ পড়ে,জাহিদ নিশ্চয়ই খুশি হবে,ভাবতেই ওর মনে শিহরণ জাগে।কপালে একটা টিপ দেয়,ছোট্ট নীল টিপ।এবার ও প্রস্তুত।হাঁটতে নানান চিন্তা আসে ওর মনে,আর আপন মনেই হাসে।কলেজের হার্টথ্রুব ছেলেটা বেস্ট ফ্রেন্ড মানা যায়,কিন্তু প্রেমিক?তাও আবার নিম্মির?!সবাই ঈর্ষান্বিত চোখে ওকে দেখবে!ভেবেই ও ওড়নার খুট ধরে পেঁচাতে পেঁচাতে হাসে।রাস্তার মানুষ গুলো আড়চোখে ওকে দেখে হয়ত পাগল ভাবে,তবে তা নিয়ে নিম্মির কিছু আসে যায় না।

নিম্মি এসব আগডুম বাগডুম ভাবতে ভাবতে চলে আসে গন্তব্যে।জাহিদ দের বাসার সামনে এসে দেখে,সব কিছু চুপচাপ। ওরা খুব বেশি মানুষ থাকে না এখানে,জাহিদের ছোট একটা বোন আছে,তাও চুপচাপ জাতের মানুষ।দরজাটা খোলে বাড়ির দিকে তাকায়।একতলা একটা রঙ ওঠা বেশ বড় বিল্ডিং,ছিমছাম ছাদ যেখানে অনেক গাছ।বাড়ির উঠোনও আম,জাম,কাঁঠাল,নারিকেল, বড়ই,পেয়ারা গাছে ভরা।পরিবেশটা খুব সুন্দর। নিম্মি দুরুদুরু বুকে বাড়ির উঠোন পেরিয়ে ভেতর দিকে যায়।কাউকেই যে চোখে পড়ছে না।সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাবে নাকি?সিঁড়িতে পা রেখে উপর দিকে যাওয়া শুরু করে।হঠাৎ এক মহিলা কন্ঠ ওর কানে আসে।

-জাহিদ!এই জাহিদ!উঠ!পড়তে বস!কদিন বাদে ইন্টার দিবি,এখন পড়ে পড়ে ঘুমানো হইতেছে,না?
-উফ আম্মা,আরেকটু! কাল অনেক পড়েছি তো!
-দেখ,আমি কিন্তু এবার মানব না,কলেজের সবচেয়ে বেশি নাম্বার যেন আমার ছেলের থাকে!দ্বিতীয় হলেও হবে না আমার,আমি তোকে কলেজের সবার উপরে দেখতে চাই।
-দেখবা আম্মা,দেখবা,সে নিয়ে ভেব না।
-মেট্রিকে কিন্তু স্কুলে তোমার আগেও মানুষ ছিল একজন,এবার কিন্তু তা হবে না।আমি আমার ছেলেকে প্রথম দেখতে চাই!
-দেখবা তো আম্মা,দেখবা।যে প্রথম হওয়ার কথা,ও যাতে প্রথম না হয়,সেই ব্যবস্থা করছি!

নিম্মির মাথা হ্যাং হয়ে যায়,কি!!!
এসব কি শুনছে!
জাহিদ কি ওকে বুঝাল?সিঁড়ির রেলিঙ ধরে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নিম্মি।দুকান দিয়ে ঝাঁ ঝাঁ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে।কান গরম হয়ে মনে হচ্ছে সেটা মাথার তালু পর্যন্ত চলে গেছে।

ঠিক তখন জাহিদ নিচে নামতে গিয়ে দেখে নিম্মি দাঁড়িয়ে আছে।নিম্মি কখন আসল।নিম্মির কাঁধে হাত রেখে ও ডাক দেয়।নিম্মি না তাকিয়েই সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায়।জাহিদ গলা উঁচিয়ে ডাকে,
-কিরে কখন এলি?
নিম্মি কঠিন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকায়।কি জবাব দিবে?

চলবে...

লেখনীতে,#Abiar_Maria

Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top