২৯


ঘুম ভেঙে ইকরা নিজেকে ফ্লোরে আবিষ্কার করল। এর আগেও কয়েকবার সে খাট থেকে ধুম ধাম পড়ে গেছে ঘুমের মাঝে। বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে তার ঘুম তো ভাঙেইনি, বরং সে বালিশ সহ পড়ে যাওয়ায় মাথার নিচ থেকে সেটা সরিয়ে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিল। আজ ঘুম ভাঙতে তার দুপুরের কাছাকাছি হয়ে গেছে। ভেবেছিল শুয়ে থাকবে, কিন্তু তা আর হলো না। কারণ সে ফ্লোরে শুয়ে আছে আর এজন্য সে উঠে বসে আছে। নেহা বিছানায় বসে মুখ চেপে ইকরার হাবভাব দেখছে। ইকরার চোখে চোখ পড়তেই সে ফিক করে হেসে দিল। ইকরা বিরক্তিতে উচ্চারণ করল,
"আমি বিছানা থেকে পড়ে গেলাম, আর আমাকে তুলবা না?"
"কিভাবে তুলব? তোকে আলগানোর শক্তি আছে আমার?"

ইকরা ফ্লোর থেকে উঠতে উঠতে বলল,
"না খেয়ে খেয়ে তো শুটকি মাছ হচ্ছো দুই বোন। চাচী কি খাওয়া দেয় না?"
"এত খেতে ভালো লাগে না। তুই যেভাবে ফুলতেছিস, দেখিস কিন্তু!"
"তোমাদের চেয়ে ভালো আছি"
"তা তো অবশ্যই। এই শরীর নিয়ে আবার বিছানা থেকে পড়েও যাস! কবে যে নিজের শরীরের ওজনে নিজের হাত পা ভেঙে বসবি, কে জানে!"

ইকরা মুখ ভেঙচে ফ্রেশ হতে চলে গেল। জোছনা আর নাজনীন গল্প করছে। ইকরাকে ঘুম থেকে উঠতে দেখে নাজনীন বিরক্ত হলেও জোছনা একটুও বিরক্ত হলো না, সে হাসিমুখে খাবার এগিয়ে দিল। ইকরা নাস্তা করে ঘরে এসে দেখল, নেহা আর নিসার সাথে নিপাও এসে যোগ দিয়েছে।
"তুমি কি মাত্র ঘুম থেকে উঠলা নিপাপু?"
নিপা ঢুলুঢুলু চোখে হাই তুলতে তুলতে বলল,
"নাস্তা করে একচোট ঘুম দিয়ে উঠলাম!"
"বাব্বাহ!"

নেহা এই সময় বললো,
"এই, দেখ দেখ! ভাবি কি করেছে!"
"কি করেছে?"
ওরা তিনজনই এগিয়ে আসে নেহার ফোনের স্ক্রিনে দেখার জন্য। তরীর বদলে দেয়া প্রোফাইল পিকচার দেখলো সবাই। নিসা বেশ পুলকিত হয়ে বলল,
"ওদের এই ছবিটা আমি তুলে দিয়েছি। সুন্দর আসছে না? দ্যা লুক লাইক মেড ফর ইচ আদার!"
নেহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
"ইমরান ভাইয়ার সাথেও তো মেড ফর ইচ আদারই মনে হতো!"

ইকরা বলল,
"আপু, তরী ভাবী অনেক সুন্দরী, এটা যেমন ঠিক, জিসান ভাইয়া আর ইমরান ভাইয়াও অনেক হ্যান্ডসাম। আমার কোন ভাই কি ফেলে দেয়ার মত? সবচেয়ে বড় কথা, ওরা দুজন সুখে আছে, তাই ওদের পাশাপাশি দেখতেও ভালো লাগে"
"তোর কি মনে হয়, ওরা কি আসলেই সুখে আছে?"
"আপাত দৃষ্টিতে তো তাইই মনে হয়"

নিসা চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলল,
"আমি বেশ কয়েকবার ছাদে ঘুমাতে দেখেছি ভাইয়াকে। আমার কাছে মনে হয় কি, এখনো ওরা আমাদের সাথে এক্টিং করতেছে। আমরা আসলে যা দেখতেছি, তা ঠিক না। ওরা আসলে তেমন নেই যেমন আমরা দেখি"
নেহা বলল,
"কেন থাকবে না? জিসান ভাইয়া কি খারাপ নাকি? আজ পর্যন্ত ভাবিকে কিছু বলতে শুনলাম না। বাচ্চাদের কি সুন্দর সামলে রাখে, ভাবির তো তেমন কিছুই করতে হয় না অফিস থেকে আসার পর"
ইকরা বলল,
"আসলেই। ইমরান ভাইয়া চলে যাওয়ার পর প্রথম প্রথম ভাবির জন্য খুব কষ্ট হতো। যখন জিসান ভাইয়ার সাথে বিয়ের কথা প্রথম শুনলাম, আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম! একটা ব্যাপার অবশ্য অবাক লাগে, মানুষ একজন, কিন্তু কিভাবে দুইটা মানুষের জন্যই যে পার্ফেক্ট হয়!"

এতক্ষণ নিপা কিছু বলেনি, এবার সে মুখ খুললো।
"একজন ভালো মানুষ অন্য ভালো মানুষের জন্য উপযুক্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দুইটা ভাই, দুজনই ভালো। তরীও খুব লক্ষী একটা মেয়ে। এজন্য দুজনের সাথেই ওকে মানায়। তবে তোরা কি একটা জিনিস খেয়াল করেছিস?"

তিনজন একত্রে বলে উঠল,
"কি?"
"তরীকে বিয়ের জন্য কিন্তু জিসান অনেক আগে থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছে"
ইকরা বলল,
"ইশতিই তো এটা শুরু করল! মনে নেই তোমাদের বাসায় আসার পর থেকে ভাইয়াকে আব্বু আব্বু ডাকা শুরু করল? তখনই তো সবার মাথায় আসলো ভাবির সাথে জিসান ভাইয়ার বিয়ে দেয়ার ব্যাপারটা"
নিসা নেহা সম্মতি দিল। নিপা মুচকি মুচকি হাসছে।
"ইশতির মত এটুকুন পুচকুর কিভাবে মাথায় আসবে এক বছর আগে মারা যাওয়া বাবাকে ভুলে আরেকজনকে বাবা ডাকার কথা? জিসানই ওকে এসব শিখিয়ে দিয়েছিল যেন ওর কথা শুনে সবাই ওদের বিয়ের কথা বলে"
"অসম্ভব!"

ওদের তিন বোনের কন্ঠে বিস্ময়, একেব অপরের মুখের পানে চেয়ে দৃষ্টি বিনিময় করল। নিপা আবার বলল,
"তোরা ভালো ভাবে ভেবে দেখ। ইশতি যে শুধু জিসানকে বাবা ডাকতো, তা না, ও রীতিমতো জেদ করতে শুরু করল। কই, এর আগে তো কখনো এমন করেনি। তখন থেকে কেন? এটা জিসানের কারসাজি। ও চাচ্ছিল, ওদের বিয়ের চিন্তা পরিবারের কারো না কারো মাথায় আসুক"
"এভাবে তো ভেবে দেখিনি!"

নেহা বলল,
"জিসান ভাইয়া কেন এত মানুষ থাকতে তরী ভাবিকে বিয়ের জন্য এত কাহিনী করবে? ভাইয়া তো অন্য যেকোনো মেয়েকে বিয়ে কর‍তে পারত চাইলেই। কেন তরী ভাবিই? তাও আবার দুই বেবী হওয়ার পরও?"
নিপা ঘাড়ের নিচে হাত দিয়ে শুয়ে বলল,
"সেটা জিসানই ভালো বলতে পারবে!"

----------------

বিকালের দিকে তরী সামনে থাকা ডেস্কটপের মনিটরের স্ক্রিনে হতাশা নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে যখন ভাবছিল, কখন ও বাসায় যাবে, তখন জিসানের নাম আর নাম্বার ওর ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠল। তরী সম্ভবত আনমনে সেই তখন থেকে জিসানের ফোন কল আশা করে বসেছিল, তাই রিং বাজার প্রায় সাথে সাথেই সে রিসিভ করে ফেলল। ওপাশ থেকে জিসান বলল,
"তুমি আমার কলের জন্য অপেক্ষায় ছিলে, তাই না?"
তরী নিজের বিস্ময় চাপা দেয়ার চেষ্টা চালালো,
"কই, না তো!"
"মিথ্যে"
"না, মিথ্যে কেন বলব?"
"তার মানে সত্যিই অপেক্ষা করছিলে না?"
"আসলে অফিসের কাজে ডুবে ছিলাম"
"কাজের ফাঁকে আমাকে মনে পড়েনি?"
"মনে পড়ার কোনো বিশেষ কারণ আছে কি?"
"আমি তো হেচকির পর হেচকির তুলে ভাবলাম, তুমি বুঝি আমায় ভেবে ভেবে সেকেন্ড, মিনিট ঘন্টার হিসাব ভুলে যাচ্ছো!"
"ভালোই রসিকতা করতে জানেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এমন কিছুই না। অফিসে এখনো?"
"নাহ, মিটিং শেষ করে খালার বাসায় আসলাম। খালা আমাকে খাবার দিল, খেলাম, শুলাম। শুয়ে একটা জিনিস আবিষ্কার করলাম"
"কি?"
"আমাদের দুজনকে ভীষণ মানায়"
তরী ঠোঁট চেপে বিশেষ কায়দায় হাসলো।
"তাই? আমাকে ছাড়াই এই চিন্তা মাথায় এলো কেন?"
"ফেসবুকে তোমার আইডি দেখে!"
"অহ"
"গতকাল তোমাকে কেমন লাগছিল জানো? অনিন্দ্য সুন্দর! শাড়িতে তোমাকে অনেক মানায়, যে কারো মাথা নষ্ট করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট"
"বুঝলাম। এখন থেকে শাড়ি পরা যাবে না"
"কেন কেন?"
"কারণ যে কারো মাথা নষ্ট হয়ে গেলে আমাকে আক্রমণ করে বসতে পারে!"
"শুধু আমাকে দেখিও, আমার জন্যে হলেও শাড়ি পরো"

তরী আনমনে অতীতের কথা ভাবছে। ইমরান বিয়ের শুরুতে এমন হাজার হাজার স্তুতিবাক্য শোনাতো। শেষের দিকে জিসানের খুব বেশি সময় ছিল না, ও চাকরি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। জিসানও নিশ্চয়ই এক সময় তরীর শাড়ি পরা রূপে মুগ্ধ হয়ে বিষম খেতে ভুলে যাবে, তরীকে যতই সুন্দর লাগুক, সে হোঁচট খেয়ে পড়বে না। তরী সূক্ষ্ম দীর্ঘশ্বাস গোপন করে। স্বীকার না করলেও নিজের কাছে নিজে মিথ্যা বলতে পারছে না- জিসানের ওর প্রতি ছোট ছোট পাগলামী গুলো ওর মনে ভালোলাগার সৃষ্টি করছে। এই ভালোলাগা রাত পর্যন্ত ছিল। বাসায় গিয়েও জিসান বারবার তরীকে কল করতে থাকলো, ওর সাথে কথা বলতে থাকলো।

তরী এই প্রথম প্রায় সারারাত জিসানের সাথে কথা বলল। ওদের নিজেদের অষ্টাদশী প্রেমিক প্রেমিকা মনে হচ্ছে, যারা কয়েক ঘন্টার বিচ্ছেদে কাতর হয়ে পড়ে। তরীকে জিসান একটুও বিরক্ত হওয়ার সুযোগ না দিয়ে দুজনে রাত দুটোর দিকে ঘুমিয়ে পড়ল। তরী বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে ভাবছে, এটাই কি বিবাহের মত পবিত্র সম্পর্কের বরকত, যে না চাইলেও একে অপরের প্রতি অজানা টান, মায়ার জন্ম নেয়? তরী কি জিসানের মায়ায় পড়ে যাচ্ছে? নাকি প্রেমে? বিশাল বিছানার এক পাশে দুই সন্তান ঘুমাচ্ছে, আর অন্যপাশে ও একা। এতদিন অসংখ্যবার একা থাকতে চেয়েছে, অথচ আজ একা থাকার পর দুঃখ হচ্ছে, উষ্ণ অস্তিত্বের অভাব বোধ হচ্ছে। তরী জিসানের বালিশ বুকে চেপে ঘুমাবার চেষ্টা করছে।

জীবন সত্যিই অদ্ভুত!

এর পর থেকে প্রতিদিন ওদের অনেক অনেক কথা হয়, বেশিরভাগ সময় জিসানই কল করে। তরীও কয়েকবার কল দিয়েছে, বিশেষ করে অফিস থেকে ফেরার পর বাচ্চারা জিসানের সাথে ভিডিও কলে কথা বলত। তন্দ্রাও উৎসুক হয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকে। আসার আগের দিন তরীকে জিজ্ঞাসা করল ওর জন্য কি আনবে, তরী কিছুই চাইলো না। তরীর বাবা মায়ের সাথে অবশ্য জিসান দেখা করতে গিয়েছিল, ওর মা এত এত জিনিস দিয়ে দিল জিসানের কাছে।

পাঁচ দিন পর জিসান আজ বাসায় আসবে। জোছনা ছেলের পছন্দের খাবার রান্না করেছেন, তরী অফিস থেকে এসে দেখলো, জিসান এখনো আসেনি। ফ্রেশ হওয়ার পর একবার মনে হলো শাড়ি পরবে। একটুপর সে ভাবনা বাদ দিল, যদি জিসান ভাবে তরী দুর্বল হয়ে গেছে ওর প্রতি? ও জিসানকে ইম্প্রেস করতে চাচ্ছে? নাহ, থাক। তরী আবার শাড়িটা তুলে রেখে একটা থ্রিপিস পরে নিল। জিসানের আসাতে ওর এত আনন্দিত হবার অনুভূতি ওকে বিস্মিত করছে। ও কেন এমন আচরণ করছে? নিজেকে আটকে রাখছে ও।

জিসান বাসায় আসতে আসতে নয়টা বেজে গেল। আজ হুট করে একচোট বৃষ্টি হয়েছে। জিসান বাসায় ঢুকেই সবাইকে জানাচ্ছে কিভাবে বৃষ্টি ঝামেলা পাকিয়েছে ওর এখানে আসার ব্যাপারে। বাচ্চারা তো তাদের বাবাকে পেয়ে ভীষণ খুশি, কেবল তরীই একটু সরে সরে থাকলো। জিসান সবার সাথে হৈহল্লা করে বেডরুমে যখন প্রবেশ করল, তখন তরী দ্রুত টেবিলের কাছে গিয়ে কিছু একটা করার ভাব ধরল। জিসান হাতের ব্যাগ রেখে দরজা আটকে তরীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। ওর ঘাড়ে ঠোঁট স্পর্শ করে বলল,
"আই মিসড উই আ লট!"

তরী চমকে উঠল।

না, জিসানের স্পর্শে না, জিসানের শরীর খুব গরম হয়ে আছে। ও পেছন ফেরে জিসানের গালে কপালে হাত রাখলো, সব তপ্ত হয়ে আছে।
"এত জ্বর কি করে বাঁধালেন?!"
"তুমি নেই যে, এজন্য!"
"আমাদের বিয়ের কদিন হলো বলে?"
"তুমি তো আমার জন্মজন্মান্তরের সাথী!"

তরী ওর এলোমেলো কথা শুনে চোখের দিকে খেয়াল করলো, জিসানের চোখের দৃষ্টি ঘোলা, চোখের শিরাগুলো লাল হয়ে আছে। জিসানকে দেখে মনে হচ্ছে, ও কোনো কমেডি দৃশ্য দেখছে, মুখে তেমন একটা হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। তরী অবাক হয়ে গেল, ইমরানেরও জ্বর হলে একই রকম আচরণ করত। এদের দুজনের জিনেটিক কোডিং এ নিশ্চয়ই একই ধরনের তথ্য সংরক্ষিত। কেবল জিনেটিক কোডিং নয়, এদের ভাগ্যের কোডিং প্রায়; কালের বিবর্তনে দুজনের স্ত্রী একজনই, আশ্চর্য!

তরী জিসানকে জোর করে বিছানায় বসিয়ে থার্মোমিটার এনে জ্বর মাপলো, একশো এক। জোছনাও থার্মোমিটার এর কথা শুনে ঘরে এসে ঢুকলো। জিসান জানালো, এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পর গাড়ির জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেছে। তখন বৃষ্টির যেটুকু ছাঁট এসে লেগেছে, ওতেই হয়ত জ্বর এসেছে। জোছনা আফসোস করে বললেন,
"তুই মিথ্যা বলিস না। আমি জানি তুই ঠিক মত খাস নাই, ঘুমাস নাই, ঘামছিস, এজন্য এই অবস্থা। তোর খালা আমাকে বলছে না? এত বড় হয়েও এমন জ্বর বাঁধালে আমি কিভাবে সামলাবো তোকে?"

তরী সামলানোর চেষ্টা করল। জিসান হালকা কিছু খেয়ে শুয়ে পড়ল, আজ সে রাতের খাবার খাবে না। তরী জ্বরের ওষুধ খাইয়ে বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। জিসানকে পেয়ে ইশতি আজ ঘুমাতেই আসছে না, তার সারা শরীরে এনার্জি কিলবিল করছে, যেন রাত বাড়ার সাথে সাথে তার কাছে আসলে সকাল হচ্ছে। তরী অনেক জোর জবরদস্তি করে ওকে ঘুম পাড়িয়েছে, তন্দ্রা আগেই ঘুমিয়ে গেছে। তরী বিছানায় শুতে এসে দেখল, জিসানের ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে। একটা টাওয়েল ভিজিয়ে এনে ওর শরীর মোছার চেষ্টা করল যদিও খুব অস্বস্তি হচ্ছে। জিসানের শরীর মুছতে গিয়ে জিসান চোখ খুলে তরীকে দেখে জড়িয়ে ধরল।

ঘরে তখন ড্রিম লাইটের টিমটিমে আলো। তরীর জিসানকে অপার্থিব লাগছে, আলো আঁধারির মাঝে এক জোড়া চোখ মেলে জিসান ওর চোখ চোখ রেখে চেয়ে আছে। তরী ভেজা টাওয়েল দিয়ে ওর গলা মুছে বলল,
"শরীর ঘেমে গেছে, শরীর মুছতে হবে। টিশার্টটা যদি..."
"আমার টিশার্ট নিজ হাতে খোলার অর্থ জানো?"
তরী ঢোক গিলল।
"থাক, বেশি ঘামেননি, ঘাম শুকিয়ে যাবে"
"শরীরে ঘাম শুকালে যে আবার জ্বর আসবে?"
"আচ্ছা, তাহলে আপনি একটু কষ্ট করে..."
"লজ্জা লাগছে?"
শুয়ে তরীকে বাহুবন্দী করে রেখেছে জিসান নিজের সাথে, তরী কি করে বলবে এখন ওর লজ্জার চাইতে দমবন্ধ লাগছে বেশি? জিসান আবার বলল,
"মনে হচ্ছে কতদিন পর তোমাকে পেলাম! আমার কাছ থেকে পালাও কেন?"
"আপনি একটু হেল্প করুন, শরীর স্পঞ্জ করে দেই"
জিসান একটা নিঃশ্বাস ফেলে উঠে বসলো। তরী টিশার্ট খুলে শরীর মুছে টিশার্ট পরতে বলে টাওয়েল রেখে আবার বিছানায় আসলো। জিসান গায়ের উপর কাঁথা টেনে দিয়েছে। তরী পাশে শোয়ার পর ও জড়িয়ে ধরল। চোখের পাতা না খুলে বলল,
"আমাকে মিস করেছ তুমি?"
"জানি না"
"কি জানো তুমি?"
"এটা জানি যে এখন না ঘুমালে কাল আমার অফিস মিস হবে"
"অফিসকে মিস করতে চাও না, কিন্তু আমাকে মিস করেছ কিনা, তাও জবাব দাও না। আমাকে মিস করোনি?"
"না, করিনি"
"কেন করোনি?"
"কারণ আমি মিস না, মিসেস"
"তার মানে তরী মিসেস জিসান?"
তরী অন্ধকারে মিটিমিটি হাসছে। জিসান ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল। তরী মনে মনে বলল, মিসেসরা কখনো মিস্টারদের মিস না করে থাকে না। কিন্তু তাদের সেটা বলা হয় না, কারণ তারা যে মিস না! অথচ আমি এই কয়দিন যা অনুভব করেছি, সেই অনুভূতি 'মিস' শব্দের মত ছোট্ট শব্দে প্রকাশ হবে না। এটাকে কি বলব? মিস? নাকি মিসেস?

চলবে...

(সুখবর, এটা শেষ পর্ব না। এই গল্প আরও কিছু বাড়বে)

Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top