২২. সমাপ্তির শেষ প্রহর
আবীরের অনুলিপিরা ওমেগাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে আবীরের তৈরি বিশাল অ্যান্টিম্যাটার ট্র্যাপ এর দিকে।
অ্যান্টিট্র্যাপের ম্যাটার আর অ্যান্টিম্যাটারের সংস্পর্শে প্রলয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হয়। সে বিস্ফোরণে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ওমেগার শরীর। প্রচণ্ড ভূমিকম্পে দূরে কোথাও থেকে সুনামি উঠে আসছে।
সমুদ্রের এক বুক সমান পানিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আবীর। আকাশে চাঁদের আলো ছাড়া আর কোন আলো নেই। চারিদিকে এখনো গাঁড় অন্ধকার। এক অন্ধকারের মোহে আচ্ছন্ন ধূসর বারিধারা। আলো ছায়ার খেলা। এক অদ্ভুত মাদকতা বাতাসের ঝাপটায়। দূর বহুদূর হতে ছুটে আসছে এক প্রকাণ্ড ঢেউ।
আবীরের মুখে তৃপ্তির হাসি, সে এক সমাপ্তির আনন্দে।
এই পৃথিবীর প্রতিটা বালুকণাতে, প্রতি কণা কার্বনডাইঅক্সাইডে, অক্সিজেনে, ধূলিকণায়, আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে, সুগভীর নীলিমার অন্দরে বাহিরে মিশে আছে আঁখির শরীরের গন্ধ। তার ছোঁয়া, তার স্পর্শ, শুধু আঁখি নেই। শুধু আঁখি নেই কোথাও।
তাই তো আবীর আঁখির খোঁজে বেরিয়ে পড়েছে দূর অজানার পথে। আঁখিকে ফিরিয়ে আনতে যাকে সে ফেলে এসেছে সময়ের পশ্চাতে। তাকে ছাড়া আবীর কি নিয়ে ছুটে যাবে দূর ভবিষ্যৎ এর পথে? এ যেন শূন্য থেকে শুরু হয়ে শূন্যে বিলীন হয়ে যাওয়া।
ঐ তো ছুটে আসছে সে ঢেউ, গগন বিদারী আর্তনাদধ্বনিতে। তবু আবীর খুশি। খুশি সমাপ্তির আনন্দে। খুশি একটি নূতন সূচনার আনন্দে।
আবীর চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করতে থাকে সে মৃত্যু পিপাসী সে তরঙ্গের হিল্লোলে নিজেকে সঁপে দিতে।
তার মুখের মাঝে সমুদ্রের পানি আছড়ে পড়ছে একটু একটু করে।
দুঃখ, বেদনা, দ্বিধা, হতাশা, ভয় কোনো অনুভূতি তাকে আর স্পর্শ করতে পারেনা।
আবীর অপেক্ষা করতে থাকে মৃত্যুর জন্য। ঐ তো আকাশ সমান ঢেউ ছুটে আসছে তারই খোঁজে। মৃত্যুর মাধ্যমে সে ফিরে যাবে আরো একবার তার প্রিয় আঁখির কাছে।
মাত্র বিশ হাত দূরে পানির হিল্লোলের উপর ভেসে আছে আঁখির নিথর শরীর। আবীর ফিরিয়ে এনেছে ওমেগার কবল থেকে।
আবীর তাকিয়ে আছে দূর্বার সমুদ্রের নিঃসীম বেগে ধাবমান তরঙ্গের দিকে।
যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। আরো দূরে তাকিয়ে দেখে সে তো একা নয়।
ক্ষতবিক্ষত হাজার লক্ষ কোটি আবীরেরা পানি থেকে বেরিয়ে এসেছে সমাপ্তির আনন্দে উল্লাস করতে। কারো মাথা ফাটা, কারো চোখ মাথার একপাশটা উড়ে গিয়েছে। কারো বা শরীরের অর্ধেকটাই নেই। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ক্ষয়ে গেছে শরীরের বেশিরভাগ। তবু তারা এসেছে।
আবীরের সাথে যোগ দিতে এ সমাপ্তির সূচনায়। নতুন এক প্রারম্ভের উদ্দেশ্যে। আবীরের মুখের মৃদু হাসি বিস্তৃত হয়।
আকাশের চেয়ে উঁচু সে তরঙ্গরা বাঁকতে বাঁকতে আবীরের গাল স্পর্শ করে ফেলে।
অজানা এক প্রশান্তিতে চোখ বন্ধ করে ফেলে সে। চোখ বন্ধ রেখেও আঁখিকে দেখতে পায়। ঐ তো আঁখি হাত বাড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে সমুদ্রের তীরে। তার চিরচেনা সেই শ্বেতাপ্সরী।
" আবীর? "
আঁখি ডাকছে।
কি ব্যাকুল সে কণ্ঠস্বর। তবু কি মধুর সে ধ্বনি। পুব আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। আবীর নৌকো করে ছুটে যাচ্ছে আঁখির দিকে।
ঐ তো সামনে.. ঐ তো আরেকটু সামনে। আবীর প্রাণপণে বাইছে সে তরী।
সমুদ্রের কালো পানি ক্রমশ ফুঁসে উঠছে। যেন তাকে সহ শুষে নিতে চাইছে এক নিমিষেই।
তবু আবীরের মুখে প্রশান্তির আনন্দে ঝলমল করছে।
তার চোখে পানি।
এ লগ্ন যে শুধু তার। এবারে যে আর কিছুতেই হারিয়ে যেতে দেবেনা তাকে...
তার আঁখিকে। শুধু তার আঁখি.....
***-
সাগরের সেই আকাশ সমান ঢেউ নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে গেছে সব। সমুদ্র এখন সুবোধ বালকের মত শান্ত।
পানির উপর ভাসছে আবীরের মৃতদেহ। খানিক দূরেই পড়ে আছে আঁখির কোমল পেলব শরীর। একটু পরেই ভোরের সূর্যোদয় হবে। আঁখির শরীরের উপর চিরচেনা রোদ এসে খেলা করতে চাইবে। তার মৃতদেহের পাশে ছায়ার মত আবছা এক অন্ধকারের পরী দাঁড়িয়ে আছে। সে আঁখি। আঁখি এ মুহূর্তের অন্তিম সাক্ষী হয়ে বেরিয়ে পড়েছে তার নিজের বুক চিঁড়ে।
আঁখি জানতো না আবীর ফিরে আসবে। সে আপন মনে হেটে যেতে থাকে দূরে। বহু দূরের কোন পথ ধরে। যেন কিছুতেই কিছু আসে যায়না তার। চলে যেতে থাকে দূর থেকে বহুদূরে....
আর পানি এসে এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে আবীর আর আঁখির নিথর দেহগুলিকে। ঠিক আবীরের মৃত শরীরটি মাথার পাশে ধূসর বালুবেলার উপর পড়ে রইলো কেবল একটি ডায়েরী।
আবীরের ডায়েরী, সোনালী রোদের আলোয় ঝিকমিক করা ডায়েরীটা পড়ে আছে সেই চিরচেনা তেপান্তরের বালুকায়, ডায়েরীর প্রতিটা পাতা যেন আজ জীবন্ত, নতুন কোন প্রারম্ভের উদ্দেশ্যে। এ যেন প্রকৃতির চিরচেনা একটি সকাল। কত সহস্রবার দেখেছে এ সকাল। তবু তার আনন্দের কমতি নেই।
বাতাসের ঝাপটায় ডায়েরীর পৃষ্ঠাগুলি উল্টোতে শুরু করেছে। এর প্রতিটা মুহূর্ত প্রকৃতির মুখস্থ। শত সহস্রবার দেখেছে সে দৃশ্য। প্রকৃতি জানে তার মাঝে নিশ্চয়ই কোনো একটি পাতা বেরিয়ে আসবে তার খুব পছন্দের। অধীর আগ্রহ নিয়ে সে পড়বে সে কয়টি লাইন......
দখিনের বালুবেলা ভিড়ে
মরুময় ধু ধু
আজো কেউ হায়, ঐ ছুটে যায়-
ফেলে রেখে যায়-
কিছু পদচিহ্ন শুধু।
সমাপ্ত....
এভাবেই শেষ হলো গল্প নম্বর ৩৩,৩৩৩....
তারপর আবার প্রথম থেকে শুরু হলো আবীর আর আঁখির চির-চলমান অন্তহীন গল্পটা। :)
*******
:)
Goodreads.com এ আপনার রেটিং ও মতামত জানালে খুশি হবো।। c:
Goodreads rating :
https://www.goodreads.com/book/show/38316016
Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top