২১. ওমেগার অমানিশা

ওমেগাকে ল্যাবে আটকে ফেলেছে আবীর। তার মস্তিষ্কের জিনোমে ঢুকে গিয়ে জ্যাম করে দিয়েছে তার সময়ের চাকা। বদলে দিয়েছে তার সকল কোডিং।

সময়ের চাকা বন্ধ করে দিয়ে তাকে আটকে ফেলেছে বর্তমানে। সে অতীতে ফিরে যেতে পারবেনা আর। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ তিনকালের মাঝে আটকে গেছে তার অস্তিত্ব।

আবীরের মাল্টি মাইন্ড কানেক্টর সূক্ষ্ম ইলেক্ট্রোড দিয়ে ওমেগার মস্তিষ্ককে আবীরের মস্তিষ্কের সাথে জুড়ে দিয়েছে। তারবিহীন সূক্ষ্ম ইলেক্ট্রোড ইলেকট্রনের মত তার মস্তিষ্কের শতকোটি নিউরনকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। তাকে আলাদা করার সাধ্য কারো নেই।

ওমেগা হতবিহবলের মত জোনাকের ঝাঁকের মত আলোর স্পার্ক করতে করতে ল্যাবের দেয়ালে আঘাত করতে করতে আর্তনাদ করছে। সে ফিউচারে ঢুকতে পারছেনা। এখন সে আর আগে থেকে কিছু জানতে পারবেনা।

তার মস্তিষ্ক আবীরের হাজার কোটি অনুলিপির মস্তিষ্কের কাছে একটা তুচ্ছ বস্তু ছাড়া কিছু নয়।

তার সর্বনাশা গামা রশ্মির বিকিরণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তার প্রতিটি সচল অণু পরমাণু ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। তার শরীরের বিভিন্ন তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেড়েই চলেছে।

সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেনা ক্ষুদ্র এক মানব তাকে এতো বড় ধোঁকা দিয়ে ফেলেছে। সে নিজেকে ঈশ্বরের কাছাকাছি ভাবতে শুরু করেছিল। অথচ সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট তুচ্ছ এক মানবের কাছে সে পরাজিত হয়ে গেলো?

এখানে সাজানো বিকারগুলি সব মিথ্যা। এগুলি আবীরের সত্যিকারের মস্তিষ্ক নয়। আবীরের শতকোটি মস্তিষ্ক বসানো হয়েছে অন্য কোথাও। কোথায় তা মনে করতে পারেনা। তার স্মৃতি থেকে সে তথ্য মুছে গিয়েছে। হয়ত অন্য কোনো ধূসর প্রান্তরে। তা জানার সময় নেই এখন তার। তার অস্তিত্বকে রক্ষা করতে এখন একটাই উপায় বাকি।

সময়ের মূল ম্যাকানিজমের সময়ের সূতা কেটে দিয়ে অতীত থেকে বর্তমানকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। বর্তমান থেকে তার সব শক্তি হারিয়ে গেলেও অতীতে তার কোনো সত্ত্বা সমগ্র শক্তি নিয়ে পৃথিবীর বুকে তবু টিকে থাকবে। তবে কখনো জানবেনা সে এই দ্বীপের মাঝে কি ঘটেছিল।

ওমেগা চোখ বন্ধ করে মস্তিষ্কের শত কোটি প্রকোষ্ঠ খুঁজে সময়ের ফ্রেমে চলমান টাইম লাইন খুঁজে বের করতে গিয়ে বিস্ময়ের সাথে খেয়াল করে সময়ের ফ্রেম আরো আগে থেকেই কেটে রেখেছে কেউ।

ওমেগার মস্তিষ্ক স্ক্যান করে সে মেকানিজমের সকল তথ্য জেনে গিয়েছে আবীর। আবীর এখন চাইলেই ওমেগার মস্তিষ্কের প্রতিটি সিন্যাপ্স সংযোগ খুলে দিতে পারে। কিংবা পরিবর্তন করে দিতে পারে সবকিছু।

অথচ একটু আগেও সকল ক্ষমতা ছিল ওমেগার হাতে। এক নিমিষেই সবকিছু বদলে গেলো।

কিন্তু আবীর কেনো সময়ের সুতো কেটে দিয়ে অতীত বর্তমানকে আলাদা করে দিয়েছে?

তার মানে সে চিরতরে ধ্বংস হোক, এটা আবীর চায়না?? তাহলে কি চায় সে?

প্রচণ্ড এক আঘাত করে ল্যাবরেটরির পূর্বের দেওয়াল ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয় ওমেগা। তার শরীর বাতাসে উবে যাওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।

কালো ছায়ার মত অদ্ভুত অশরীরীর মত দেখায় ওমেগাকে। আর যাই হোক তাকে মানুষের মত মনে হয় না একেবারে। ওমেগার সত্যিকারের রূপ দেখেনি কেউ। তার রূপ তিন মাত্রার জগত থেকে দেখাও সম্ভব নয়।

তার শরীরে জায়গায় জায়গায় বৈদ্যুতিক বিস্ফোরণ হচ্ছে। কাছে কোথাও অ্যান্টিম্যাটার ট্র্যাপ রয়েছে। কিন্তু কোথায় ওমেগা তা জানেনা। তা জানার মত সময় বা উপায় কোনোটাই তার নেই।

ওমেগা দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট দ্বীপের বুকে যত্ন করে বসানো আবীরের বাবার তৈরি ল্যাব থেকে সোজা সামনের দিকে। দ্বীপের যেদিকে যাবে সে, সেখানেই সমুদ্র এসে পৌঁছাবে সামনে।

কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় ওমেগার ছায়া। আতংকে ঘর ঘর শব্দ করতে থাকে ওমেগা। তাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে আবীরের মৃত শরীরেরা। হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ আবীরের মৃত দেহ এগিয়ে আসতে থাকে সামনে।

ওমেগা ভয়ংকর আর্তনাদ করতে করতে থরথর করে কাঁপতে থাকে। কাছে কোথাও আবীরের নিউরাল সিন্যাপ্স বসানো রয়েছে। সেই সিন্যাপ্স সংযোগ এখনো শরীরগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে।

ওমেগা দুনিয়া কাঁপিয়ে চিৎকার করছে কুৎসিত পিশাচের মত রূপ পরিবর্তন করতে করতে। কিন্তু মৃত আবীরেরা তাকে টেনে টেনে নিয়ে যেতে থাকে সমুদ্রের গভীরে। দূর থেকে আরো দূরে কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে তারা। তাদের পিছনে আরো আবীর.. আরো আবীর।

তারপর বহুদূরে কোথাও তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ হল। সারা পৃথিবী জুড়ে ভয়ংকর আন্দোলন শুরু হলো। যেন মাটি ফেটে খাক হয়ে যাবে ধরণী। যেন মুছে যাবে এ সুধা চোখের নিমিষে....

continued to next part..
last part: next page!!!

Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top