৩০

#অভিসারক_ও_অভিসারিণী
লেখা #AbiarMaria

#৩০

জামানের নির্দিষ্ট করে দেয়া এক মিনিট পার হয়ে গেছে। কিন্তু সে কি দরজা ভাংবে? নিজের বাসা হলেও তো ভাঙাভাঙি করত না, উপরন্তু ভাড়া বাসা। জামান রাগে গজগজ করছে। প্রায় দশ মিনিট পর ফারহা দরজা খুলে এক চোখ বের করে উঁকি দিচ্ছে, আর সেই সুযোগে জামান ধাক্কিয়ে দরজা খুলে ঢুকে গেল। চোখ লাল করে ফারহাকে ধরে বলল,
"এখন তুলে নিয়ে একটা আছাড় মারি?! হ্যাঁ?!"

ফারহা চোখ মুখ কুঁচকে কোনোমতে হাসি গোপন করল।
"মারলে তোমারই লস। বিধবা হবা তুমি"
"ছেলেরা বিধবা হয়?"
"ঐ আর কি, বিধবার ছেলে ভার্সন হবা। আর যদি হাত পা ভাঙে, তাহলেও তোমার লস। আমার সেবা তোমাকেই করা লাগবে"
ফারহার দাঁত বের করা হাসি দেখে জামানের রাগ পানি হয়ে গেল৷ দুই হাত সরিয়ে কপালে হাত ডলতে ডলতে বলল,
"ইরফান ভাই ফোন দিয়েছে, দাওয়াত আজ রাতে। ডিনার করতে যাবো। সময় নষ্ট না করে রেডি হও!"
"আমি তো রেডি!"
"এই ড্রেসে যাবা তুমি?!"
"সমস্যা কি?"
জামানের মেজাজ খারাপ হলো। নিজ হাতে ওর কামিজ খোলার চেষ্টা করতেই ফারহা ব্যাঙের মত।এক লাফ দিল।
"কি শুরু করলা তুমি!"
"ড্রেস চেঞ্জ করে দিচ্ছি! আজব!"
"তোমার করা লাগবে কেন? আমার কি হাত পা নাই?"
"হাত পা থাকলে সেসবের ব্যবহারপূর্বক জামা কাপড় বদলাও। নাহলে কিন্তু... "

জামানের ইশারা পেয়ে ফারহা ওর চোখের সামনে থেকে সুরসুর করে পালিয়ে যায়। ও ভালোভাবে বুঝতে পারছে, জামান একবার ধরলে খবর করে ছাড়বে। এই মুহূর্তে এত প্রেমও উথলে উঠেনি ওর!

যথাসময়ে তৈরি হয়ে ওরা চলে গেল ইরফানের বাসায়। সেখানে ডিনার আর আড্ডা দেয়া শেষে জামান বেশিক্ষণ থাকতে রাজী হলো না। বউকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে বলে ইরফান হেসে বলল,
"নতুন বিয়েতে এই তো মজা! শুধু বউ আর বউ!"
মেহেরজান মুখ ভেঙচে বলল,
"আর বিয়ের কয়েক বছর পার হলে শুধু পেটে ক্ষুধা লাগলে মনে পড়ে যে একটা বউ আছে!"
ইরফান জিভা কাটলো।
"ছিঃ বউ! এভাবে বলে? আমি তো রাতেও মনে করি!"
"ঐটাও তো ক্ষুধাই!"
জামান শব্দ করে হেসে ফেলল, আর ফারহার ওদিকে গাল লাল হয়ে যাচ্ছে। ও ভালোভাবেই টের পাচ্ছে আজকে জামান ওর ঘড়িতে ১২টা বাজাবে। ইশ, এসব কি মানুষের সামনে বলতে হয় নাকি? নাহলে ওর প্রতি ভালোবাসা আর ক্রেজিনেস বেড়ে চলেছে, বাড়তেই পারে! হাজার হোক, কত বছরের সাধনার পর এই প্রাপ্তি! ফারহা চুপচাপ থাকার সিদ্ধান্ত নিল। এখানে কিছু বলবে না, বেরিয়ে গিয়ে মজা দেখাবে। মানে মানে সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়ির দিকে ফারহাকে আগাতে দেখে জামান কপাল কুঁচকালো।

"ওদিকে কোথায় যাচ্ছো?"
"বাসায় যাবা না?"
"না গেলে?"
ফারহা খেয়ালও করতে পারেনি কখন জামান ওর কাছে চলে এসেছে। জামানের মুখ থেকে গরম নিঃশ্বাস ধোঁয়ার মত ওর মুখ স্পর্শ করছে। ফারহা কিছু একটা বলার জন্য মুখ খুললেও পারলো না। জামানের হাত ওর কোমর জড়িয়ে ধরেছে, আর ওষ্ঠদ্বয় দখল করেছে তাদের কাঙ্ক্ষিত স্থান। বেশ কিছু সময় পর যখন জামান কিছুটা দূরত্বে আসলো, ফারহা তখন জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। এমন হুটহাট পাগলামীর মাঝে ভয়ানক রকম একটা ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। ফারহা ভাবে, ও আগে কখনোও ভাবেনি যে স্বামীর এমন হুটহাট ভালোবাসাময় আক্রমণ সে কতটা উপভোগ করবে। মন চাচ্ছে এভাবে আলিঙ্গনে সারাটা জীবন বন্দী থাকতে। জামান মাদকতা মেশানো দৃষ্টি ছুড়ে স্নিগ্ধ কন্ঠে প্রশ্ন করল,
"ওভাবে কি দেখো?"
"তোমাকে!"
"আজকে সারারাত আমরা হাঁটবো"
"সেকি? বাসায় যাবা না?"
"বাসায় যাওয়ার জন্য এত উতলা হচ্ছো কেন?"
জামানের ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসি জমেছে। ফারহা কি ভাবছিল? সেটা লুকানোর চেষ্টা করে কাঁধ নাড়ায়।
"তাড়াহুড়ো করে বের হয়েছ এজন্য বললাম!"

জামান ঝুঁকে কিছু একটা করতে গিয়ে বাঁধা পেল। পকেটে ফোন ভাইব্রেট করছে। ফোন বের করে দেখল সুজান কল করেছে। কল রিসিভ করার পর সুজনের সাথে কথা বলতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। ফোন কেটে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,
"চলো, এক যায়গায় যাই"
"কোথায় যাব?!"
"গেলেই দেখবে"
ফারহাকে জবাব না দিয়ে ওরা গাড়িতে উঠে পড়ল। দশ মিনিটের ড্রাইভের পর ওরা একটা বারের সামনে নামলো। ফারহা ভ্রু কুঁচকালো।
"বার?!"
"ওরা এখানেই আছে। নামো তুমি। সবার সাথে মিট হবে"
"তুমি কি এখানে ড্রিংক করতে আসো?"
"এখানে আসলে কি ড্রিংক ছাড়া থাকা যাবে না নাকি? এখানে তো অন্য কিছুও আছে"
"আমার স্পষ্ট উত্তর দাও। তুমি কি এখানে ড্রিংক করতে আসো?"
"আরে ধুর, নাহ! আসো তো, নামো!"
হাত নেড়ে জামান পুরো ব্যাপারটা উড়িয়ে দিয়েছে। ফারহার মা খটকা লাগছে। ও দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে জামানের কলার চেপে দাঁতে দাঁত চেপে  বলে,
"যদি দেখি তুমি একটা ফটকা,
দিব ঘাড় ধরে একটা মটকা!
মনে থাকে যেন, তুমি আমার কাছে আটকা!"

ফারহার উদ্ভট কবিতা শুনে জামান হেসে ফেলল। হিজাবের উপরে দিয়ে মাথায় চুমু খেলো।
"আমি ফটকা না, বুঝছো? সবার সাথে ফটকাবাজী করা গেলেও বউয়ের সাথে কিন্তু করা যায় না!"
ফারহা দুই আঙুল নিজের চোখের দিকে নির্দেশ দিয়ে জামানের দুই চোখের দিকে ইশারা করে। যার অর্থ, আমি তোমাকে দেখে নেবো! জামান হাসতে হাসতে বউয়ের কোমর জড়িয়ে ধরে ভেতরে প্রবেশ করে।

ফারহা আশা করেছিল সিনেমার মত সেখানে লাল নীল সবুজ আলোর ঝলকানি দেখবে, সেখানে অনেক রকম মেয়েরা ছেলেরা কোমর দুলিয়ে নাচবে! ফারহা বেশ হতাশ হয়ে আবিষ্কার করল, এখানে এমন কিছুই নেই। এক সাইডে পুল খেলার জন্য দুটো বোর্ড আছে, আরেক দিকে চেয়ার টেবিল বসানো। ওদের মত অনেক গ্রুপই সেসবে বসে আছে, আড্ডা দিচ্ছে। ফারহা ওখানে গিয়ে জামানের তিন বন্ধু আর এক বান্ধবীকে আবিষ্কার করেছে। ওদের সাথে আগেও কথা হয়েছে, কিন্তু ফারহার ওদের এক্সেন্ট শুনলে আক্কেলগুড়ুম হয়ে যায়। ওদের মাঝে একজন আইরিন আমেরিকান, আরেকজন ব্রিটিশ। তাদের এক্সেন্ট এত অদ্ভুত! ফারহা চোখের পলক না ফেলে এদের দেখে। একে তো কথা বুঝতে গিয়ে ব্রেইনের নিউরনে প্যাঁচ লেগে যায়, তার উপর মরার মত সাদা চামড়া দেখে মনে আতঙ্ক লাগে। এরা আবার ভ্যাম্পায়ার না তো? এত সাদা কেন? একেকটা যেন সাদা ভূত!

ফারহার চিন্তার কিছুটা আঁচ পেয়ে যেন সুজান ওকে প্রশ্ন করল,
"তোমার গায়ের রঙটা কি সুন্দর! আমাদেরটা দেখো৷ একেবারে ফ্যাকাসে। তোমাদের মত কিছুতা ব্রাউনিস হলে কি সুন্দর হতো!"
ফারহা দাঁত বের করে হেসে বলল,
"আমরা সব খাবারের সাথে হলুদ খাই। ভাতের সাথে হলুদ, সবজির সাথে হলুদ, সালাদের সাথে হলুদ, এমনকি জুসেও হলুদ খাই আমরা! তোমরা তো খাও না, এজন্য এই অবস্থা!"
সুজান উৎসুক হয়ে বলল,
"আজ থেকেই আমি সবকিছুতে হলুদ খাবো!"
এসময় জামানের দৃষ্টি ওদের দিকে পড়ল। মুখটা এগিয়ে এনে বলল,
"শোনো না, আমি ফাইনালি জানলাম তোমরা এশিয়ানদের গায়ের রঙ এত সুন্দর হয় কি করে!"
"আচ্ছা? কি করে সুন্দর হয়?"
"তোমরা সবকিছুতে হলুদ খাও, এজন্য!"
সুজান এমন ভাবে বলল যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছে! জামান আড়চোখে কটমট করে ফারহার দিকে তাকালো। ফারহা দাঁত বের করে হাসছে। জামান সুজানকে বলল,
"আমার বউয়ের কথা শুনো না, ওর কথা সব উল্টাপাল্টা!"
সুজান অবাক হয়ে ফারহার দিকে তাকাতেই ফারহা জোরে জোরে মাথা নাড়লো। জামানের কি ওর প্রেস্টিজের চাকা ফুটো না করলে হতো না? এর জন্য আজকে তাকে পানিশমেন্ট পেতে হবে! আপাতত মুখ গুঁজে সহ্য করা ছাড়া কিছু করার নেই।

যেহেতু ফারহার এতগুলো মানুষের সামনে কেবল ঠিকঠাক কথা বলতে না পারার কারণে বোর লাগছিল, বের হওয়ার সময় ও সবার আগে বেরিয়ে আসে। জামান হাসতে হাসতে বন্ধুদের সাথে বাইরে এসে খেয়াল করল ফারহা আশেপাশে নেই। কোথায় গেল? গাড়িতে নাকি? গাড়ির দিকে চোখ পড়তে খেয়াল হলো, চাবি তো ওর পকেটেই। তাহলে?

কয়েক সেকেন্ড পর জামান খেয়াল করল কিছুদূরে ফারহা একটা লোকের সাথে ধস্তাধস্তি করছে। সেকি! ওখানে আবার কি হলো! ভাবনার চেয়ে দ্রুত গতিতে সে ফারহার দিকে দৌড় দিল। ওর দেখাদেখি ওর বন্ধুরাও ওকে অনুসরণ করল। জামান কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে খেয়াল করল ফারহা লোকটার কলার ধরে মাটিতে ফেলে ঘুসি মারছে। লোকটাও থেমে নেই। সে ফারহার শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গে আঘাত করে বসেছে। ফারহা মুখে যা তা গালি মেরে তাকে পা দিয়ে লাথি মারছে। জামান দৌড়ে এসে ফারহার কোমর ধরে টান মেরে তুলে ফেলে। ওর দুই বন্ধু লোকটাকে দৌড়ে চেপে ধরে। ফারহা প্রচন্ড আক্রোশে ফেটে পড়ে গালাগালি করছে আর বলছে,
"তোকে আমি খুন করব! তোর কলিজা বের করে ফেলব একবারে! আমার হাত থেকে তুই বাঁচতে পারবি না! কত্ত বড় বুকের পাটা তোর আমার গায়ে হাত দিস?!!"

দূরে পুলিশি সাইরেন শোনা যাচ্ছে। এর মাঝে কে পুলিশকে খবর দিল! জামান প্রমাদ গুনলো। লোকটা স্থানীয়। মলেস্ট করুক কিংবা রেপ, এই দেশের বাইরের মানুষ হিসেবে লসে পড়বে ও নিজেই। না জানি পুলিশ এখন কি হ্যারাসমেন্ট করে!  জামান ফারহাকে শরীরের সব শক্তি দিয়ে জাপটে ধরে। এই মেয়েকে আটকে রাখতে জামানের ঘাম ছুটে যাচ্ছে! জামান আল্লাহকে ডাকছে, সামনে বিশাল বিপদ!

চলবে...

(দুঃখিত কিছু সমস্যার কারণে এই পর্ব দিতে দেরী হলো বলে। ইনশাআল্লাহ, এরপরের গুলো দ্রুত দেয়ার চেষ্টা থাকবে)

Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top