#4 Reunion (4)
Reunion
#ছোটগল্প
#৪
জাহিদের চাহনীতে মরিয়া হয়ে নিম্মি কিছু একটা খুঁজতে থাকে যাতে ওর মনের কথা গুলা পড়তে আরো সহজ হবে ওর জন্য।কিন্তু ছেলেটার মাঝে এত রহস্য কেন?নিম্মির সহ্য হয় না।এত বছরের জমানো প্রশ্ন গুলো আজ করতেই হবে।
-আচ্ছা,তুমি কেন আমাকে নাচার জন্যে নিয়ে আসছ?আরও অনেকেই তো ছিল
-কারণ আমি জানি,এখনো আমার উপর তুমি রেগে আছো
-রাগ ভাঙাতে আমার সাথে নাচতেছ?
-ঠিক তা না।আসলে কত দিন পর তোমাকে দেখলাম বলো তো!একটু নাচতে চাওয়া কি দোষের কিছু?
-হ্যাঁ,দোষের।যার সাথে আমি কথা বলি না,যার সাথে আমার যোগাযোগ নেই,যে আমার খোঁজ নেয় নি,আমিও যার খোঁজ নেই নি,সে আর যাই হোক,আমার সাথে নাচতে চাইতে পারে না।
-ওহ নিম্মি,এমন করছ কেন?আজকের দিনটাই তো,এরকম সময় তো আর আসবে না।
-না আসুক!আমি তো এরকম সময় চাইও নাই!
-এত রাগ আমার উপর? কেন? সেদিন চেহারা নিয়ে বলছিলাম বলে?নাকি টাইম পাস করছিলাম কিছুটা,তাই?সরাসরি বলো নিম্মি,আমিও শুনি কি কারণে এত রাগ পুষছ মনে।
-আমি সরাসরিই কথা বলি জাইদ।এসব ঘুরপ্যাঁচ আমার মাঝে না,তোমার মাঝেই!তোমার এসবের কোন কারণেই যোগাযোগ বন্ধ করিনি!আমি যেন পরীক্ষায় খারাপ করি,তাই আমাকে রাস্তা থেকে সরাতে এসব করছ!ভেব না আমি জানি না কিছু!এটা ঠিক,তোমার মত হ্যান্ডসাম ছেলে আসলে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা হইতেই পারে,ভালো লাগতেই পারে আল্লাহ তোমাকে সৌন্দর্য্য খুব ভালো করেই দিছে।কিন্তু তার মানে এই না যে,তোমার যাকে যখন ভালো লাগবে,ইচ্ছে হবে,কাছে টেনে আনবা,আবার মুড চলে গেলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবা।মেয়েরা তো তোমার ইচ্ছাগুলার মত সস্তা না!
-আহ,নিম্মি,কি শুরু করলা?এসব সিরিয়াস কথা দিয়ে এই মূহুর্তগুলো নষ্ট করতেছ শুধু শুধু।
-ওহ!রিয়েলি? Is that all about these moments? শুনো,আমার তোমার মত কারো উপর এক দুদিনের মোহ কাজ করে না,আমি এতটাও ফেলনা না যতটা ভেবে আমার কাছে এসছ তুমি!আচ্ছা,পরিষ্কার করে বল,চাওটা কি তুমি আমার কাছে,হ্যাঁ?কলেজে লাইফের শেষে এসে এমন একটা কাজ করলা যে তোমাকে দেখেই ভালো লাগার কোন অনুভূতি কাজ করে নাই আমার,আবার এসছ একটা দিন এঞ্জয় করতে।"seize the day" থিওরিতে চলা শুরু করেছ নাকি? forget the future,enjoy the present"??
জাহিদ কেমন করে যেন একটা হাসি দেয়,এই হাসি দেখে নিম্মির গায়ে আরো জ্বালা ধরে যায়।ইচ্ছা করে চড় দিয়ে এই ফ্লোরে চিত করে শুইয়ে দেয়।
-নিম্মি,এটা কিন্তু খারাপ বলোনাই! ভালোই লাগে ভবিষ্যৎকে বাদ দিয়ে বর্তমানে ডুবে থাকতে!হাহাহা!
-এই জন্য তুই আমার কলেজ লাইফটা শেষ করছিস??এনজয় করিস তুই???শুধু এইজন্য হারামী??
চাপা কন্ঠে সাপের মত হিস হিস করে ওঠে নিম্মি।জাহিদ হাহা করে হাসি দিয়ে ওঠে।নীরবতার মাঝে এত জোরে হাসি শুনে কিছু মানুষ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।
জাহিদ মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে ইশারা করে।এরপর ওকে ছেড়ে ফ্লোর থেকে হাত ধরে টেনে এনে এক পাশে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গলা নিচু করে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,
-এটা কখনোই না নিম্মি,এজন্য কোনোদিনই এটা করব না।আমি এতটা সিলি না!
দাঁতে দাঁত চেপে নিম্মি বলে,
-তাহলে কি জন্য করছিস?
-রাগলে কিন্তু তোমাকে সুন্দর লাগে,ভীষন! সে যাই হোক,তোমাকে এতটা হেনস্তা করার জন্য আমি না,তুমি নিজেই দায়ী!
-হোয়াট?!আমি!
-ইয়েস,তুমি।মনে আছে রবিন ভাইয়ের কথা?
-কোন রবিন?
-ঐ যে,সেকেন্ড ইয়ারে প্রপোজ করল?তারপর তুমি...কি...মনে আছে?
-ঐ কালা নাক বোচা রবিন হারামজাদা?
-হো হো হো!হ্যাঁ,সেই কালা নাক বোচা রবিন হারামজাদা! ও আমার মামাত ভাই!
এতক্ষণে নিম্মির এত বছরের হিসাব মূহুর্তে মিলে যায়।এটা তাহলে রিভেঞ্জ গেইম ছিল?!জাহিদ রিভেঞ্জ নিতেই...??
রবিন ওদের থেকে ৫বছরের বড়,কিন্তু চরিত্র বিশেষ সুবিধার না।একেকবার একেক মেয়েকে তার মনে ধরে,তাদের পিছে কিছুদিন ঘুরে,টাকা উড়ায়,এরপর কলংক লেপে দিয়ে নতুন ফুলের দিকে হাত বাড়ায়।যদিও ছেলের চেহারা নাই,কিন্তু বাবার টাকা আছে,আর টাকা দেখলে কিছু মেয়ে তো আসেই!নিম্মিকেও সেরকমই কেউ ভেবে রবিন ওর পিছে লাগে।কলেজের এক ফাংশানে উপস্থাপনা করছিল ও,সেখানেই প্রথম দেখেছিল।এরপর থেকে আগের সব প্রেমিকা ফেলে নিম্মির পেছন পেছন ছুটে।তবে রবিন বুঝেনি নিম্মি কেমন। তাই পেছনে লাগার দু সপ্তাহের মাঝে যখন নিম্মিকে অষ্টম বারের মত প্রেম নিবেদন করেছিল,তখন নিম্মি ফুল নিয়ে দুহাতে দলাই মালাই করে ওর মুখে ছুড়ে দিয়ে বলেছিল,"তোর ব্যাঙের মত চেহারার সাথে মিলে,এরকম কাউকে খুঁজে প্রপোজ করিস!"
রবিন ছেলে ভালো না,তবে গুন্ডাও না,যে কারণে নিম্মি বেঁচে যায়,রবিন কোন ক্ষতি করেনি।বন্ধু বান্ধব অবশ্য বোঝায় যে এভাবে বলা ঠিক হয়নি,তবে তারা এটাও অস্বীকার করেনি যে রবিন নিম্মির জন্য যা যা করছিল,তা সবই মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এক চিলতে এটাও মনে পড়ে,একবার রবিনের সাথে জাহিদকে চা সিগারেট টানতে দেখেছিল,রবিন তীক্ষ্ণ চোখে নিম্মির দিকে চেয়ে ছিল।জাহিদকে পরদিন জিজ্ঞাসা করায় বলেছিল এলাকার বড় ভাই।ওর সাথে কি জিজ্ঞেস করতেই বলেছিল নিম্মিকে যেন আর কিছু না করে,সেটাই বুঝাচ্ছিল।তবে আসলে কি বুঝাচ্ছিল,তা নিম্মি এখন বুঝতে পারে!
রাগে ওর গা কাঁপতে থাকে।জাহিদকে মেরে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে ওর।কোন কিছু না ভেবেই তাই ওর দুপায়ের মাঝে সাড়ে তিন ইঞ্চি হিল দিয়ে দুম করে লাথি মেরে বসে।৫.১১ ইঞ্চির জাহিদ যখন 'ওক' করে মুখ কুঁচকে নিচু হয়ে যায়,নিম্মি ডান হাত মুঠো করে সমস্ত শক্তি দিয়ে নাকে একটা ঘুষি মারে! হাতে দুটি আংটি থাকায় জাহিদের নাক থেকে সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোয়,ও এক হাতে নাক,আরেক হাতে পেট চেপে উউউউউ করে চিৎকার দিয়ে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।নিম্মির ইচ্ছা করছিল চুলের মুঠি ধরে একদম মাটিতেই ফেলে দিবে,কিন্তু তার আগেই দেখে আশপাশ থেকে বেশ কয়েকজন দৌড়ে আসছে।এখন ধরা পড়লে তো বিরাট ঝামেলা! নিম্মি ডান হাতে শাড়ির কুচি ধরে লাফ দিয়ে টেবিল থেকে পার্স নিয়ে এক দৌড় দেয়।বাইরে বেরিয়ে সিএনজি দেখে কোন কিছু না বলেই উঠে পড়ে।ড্রাইভারও কিছু বুঝতে পারে,সেও না বলেই সিএনজি নিয়ে দেয় এক টান।
মিনিট চারেক পর নিম্মি কিছুটা শান্ত হয়।দাঁতে দাঁত চেপে ভাবে,"শালা,আজকে যদি মানুষ না থাকত,তোর চেহারা ব্লেড দিয়ে এঁকে ছেড়ে দিতাম,যাতে মেয়েরা তোর মত লুইচ্চাকে দেখে না পটতে পারে!আল্লাহ একটা চেহারা দিছে,সেই চেহারা বেচে খাস শুধু!" সিগন্যাল এ পড়ার পর টোকাইয়ের কাছ থেকে পানি কিনে নেয়,ঢকঢক করে অর্ধেক বোতল পানি শেষ করে ফেলে,উফ!কলিজা বুঝি শুকিয়ে যাচ্ছে!তবে খুব হাসি পায় ওর,এত বছরের রাগ যায়গা মত ঝেড়েছে!
সিএনজি যখন আবার চলতে শুরু করে,নিম্মি বাইরে তাকায়,আহা!শেষ বিকেলের আলো আকাশের সাদা মেঘ গুলোকে লাল করে দিয়েছে।বুক ভরে অক্সিজেন নেয়।
ঠিক এসময় ওর ফোন বেজে ওঠে।একটা অপরিচিত নাম্বার।
-হ্যালো,
-আসসালামু আলাইকুম, মিস নিম্মি?
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।জ্বি বলছি।কে?
-রাশেদ বলছিলাম,আপনার কলিগ।আচ্ছা,আপনার কাছে কি মাল্টিপ্ল্যানের ইনভেস্টমেন্ট এর ফাইলটা আছে?
-সরি,আমি বাইরে আছি,তাই বলতে পারছি না।তবে এটা আমার কাছে থাকার কথা না।আপনি মামুন স্যারকে বলতে পারেন,আমি তো আসলে এদিকটা সামলাই না।
-আমি কাকে কি বলব,সেটা আমি জানি মিস নিম্মি।আমি জানি এটা আপনার কাছেই আছে।আপনি বাসায় গিয়ে দেখবেন আছে কিনা,থাকলে আগামীকাল অফিসে নিয়ে আসবেন।আর যদি না থাকে,তাহলে আপনার ডেস্কে অবশ্যই থাকবে।আগামীকাল ফাইল যেন আমার কাছে পাই।
মুখের উপর রাশেদ ফোন কেটে দেয়।নিম্মি মুখ ভেংচি মারে
-আমি জানি আপনার কাছেই আছে!আগামীকাল নিয়ে আসবেন!আমার ডেস্কে যেন পাই!এই বদমেজাজী খবিশটা কোন দুঃখে আমার সন্ধ্যাটা নষ্ট করতে কল দিল!ফাজিল কোথাকার!
নিম্মি রাগে গজগজ করতে থাকে।রাশেদকেও এখন জাহিদের মত এক হাত দেখে নিতে ইচ্ছা করছে!
চলবে...
বিঃদ্রঃ এই গল্পের আসল নাম "ছোটগল্প"। Reunion হচ্ছে নিম্মির জীবনের একটা ঘটনা মাত্র।প্রতিটা ঘটনাই সংযুক্ত একে অপরের সাথে,তবে পাঠকদের খুব বেশি অপেক্ষা আর সাস্পেন্সে না রাখতে ঘটনাগুলো আলাদা আলাদা শিরোনামে দেওয়া হবে,যাতে নিম্মির পুরো জীবনটাই তুলে ধরা হবে।আশা করি পাশে থাকবেন সবাই...
লেখনীতে, #Abiar_Maria
Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top