৩১
আমি আবার, আর একটা বার
লেখা #AbiarMaria
৩১
তরীর সকালে ঘুম ভেঙে আশেপাশে দেখলো। চোখ কচলে বাচ্চাদের না দেখে কয়েক সেকেন্ড পর রাতের লজ্জাজনক পরিস্থিতির কথা মনে পড়ল। পাশে চেয়ে দেখল জিসান নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে, পর্দার ফাঁক গলে সকালের আলো তাকে ছুঁয়ে দিয়েছে। তরী বালিশে মাথা রেখে এক দৃষ্টিতে ওকে দেখছে। জিসান প্রতিদিন একটু একটু করে ওর মনে জেঁকে বসছে। ও এরকম কাউকে দ্বিতীয় বারের মত পাবে, কখনো ভেবেছিল? ইমরান ওকে এভাবে আগলে রাখত সবসময়। ওর অনুপস্থিতিতে জিসান সেই দায়িত্ব পালন করছে।
তরী মনে পড়ে দাদা বাড়িতে একবার কি কান্ড হয়েছিল। তখন ওর বিয়ে হয়নি। সেদিন এই তেলাপোকা আক্রমণ করেছিল আচমকা। তরী যখন কান্নাকাটি করে একাকার করেছে, তখন সবাই খুব বিরক্ত হয়েছিল। মুরুব্বী কয়েকজন ওকে বকেছেও সামান্য কারণে চেঁচিয়ে কান্না করে বাসা মাথায় তোলায়। তরী স্বাভাবিক হওয়ার পর অনেকেই এটা নিয়ে মজা নিয়েছে, রসিয়ে রসিয়ে কিছু কাজিন একজন আরেকজনের কাছে বলেছে, তরীকে ওরা ক্ষেপিয়েছে। কখনো কখনো তরী চুপ করে থাকত, কখনো কখনো খুব রাগ করত, উঠে চলে আসত। ওর রিএকশনে সবাই খুব মজা পেত। আমাদের সমাজে ফোবিয়া আক্রান্ত মানুষের মানসিক দিক নিয়ে ঠাট্টা করা খুব মজার এবং মুখ রোচক একটা ব্যাপার। অথচ কেউ কখনো ভাবে না এমতাবস্থায় ঐ মানুষের অবস্থা কেমন হয়। অনেকেরই অনেক রকম ফোবিয়া আছে- উচ্চতার ভয় বা এক্রোফোবিয়া, পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয় বা হাইড্রোফোবিয়া, বদ্ধ স্থানে নিশ্বাস আটকে যাওয়ার ভয় বা ক্লাস্ট্রোফোবিয়া, পোকামাকড়ের ভয়, ক্লাউনের ভয়। যে যেই জিনিস ভয় পায়, কেবল সেইই বুঝে এর মানসিক যন্ত্রণা কত। অথচ কি সহজেই আমরা একে অপরের কষ্টের মজা উড়াই, আহ!
তরী মুখে কাঁথা চেপে শুয়ে আছে, না জানি আজ এই বাড়ির মানুষজন ওকে কি না কি শুনাবে! বাবার বাড়ির মানুষদের উপর তো রাগ প্রকাশ করে এসেছে, কয়েকজনের সাথে ঝগড়া লেগে যাচ্ছিল সে। এখানে যে কিছুই বলা যাবে না, হাজার হোক, শ্বশুরবাড়ি। শ্বশুর বাড়ি কখনো আপন হয়?
তরীকে অবাক করে দিয়ে কেউ একটা টুঁশব্দটাও করল না। কেবল ইশতি ওকে কয়েকবার ঘুরে ঘুরে জিজ্ঞাসা করেছে রাতে ওর কি হয়েছিল। তরী বারবার এই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছে। বাকিরা সবাই এমন ভাব করল যেন গতরাতে কিছুই হয়নি, সব স্বাভাবিক। তরীও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। পেছন পেছন যা খুশি বলুক, সামনে এসে তো আর মজা লুটেনি!
ছুটির দিন বলে নাস্তার পর তরী এক কাপ চা নিয়ে জিসানের কাছে গিয়ে দেখল জিসান কোথাও বের হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। তরী চায়ের কাপ টেবিলে রাখলো।
"কোথাও যাচ্ছেন বুঝি?"
"হুম, বন্ধুদের সাথে যাবো। কিছু লাগবে তোমার?"
"না। কখন আসবেন?"
"আসতে আসতে রাত হতে পারে"
তরী আমতা আমতা করে বলল,
"গতরাতের জন্য সরি"
"কেন? গতরাতে সরি বলার মত কি হয়েছিল?"
তরী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। জিসান ওর থুতনিতে ধরে মুখ উঁচু করে বলল,
"ভয়কে জয় করা শেখো। ক্ষুধা, ঘুম, ভয়; যত করে তত হয়। তাই এগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত সবার। আসি"
ওর কপালে চুমু খেয়ে জিসান ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তরী আনমনে পেছনে ফিরল। লোকটা এত ভালো কেন?
সারাদিন বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকলো ও। অফিসের কারণে বাচ্চাদের সাথে খুব অল্প সময় কাটে এখন। জিসানের সাথে কথা হয়েছিল একবার, জিসান সব খরচ দিতে চায় এবং ও যেন চাইলে চাকরি ছেড়ে দেয়। যতই জিসান খরচ দিক, তবুও চাকরি ছেড়ে পুরোপুরিভাবে আবার কিছু টাকার জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে চাচ্ছে না ও। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে বড় কোনো সমস্যা না এলে চাকরি ছাড়বে না। মাস শেষে একটা স্যালারি যে কোনো মেয়ের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে তরীর মত অবস্থানে থাকা মেয়েদের। জিসান ভালো মানুষ হলেও কি দরকার চাকরি ছাড়া? কোনোদিন যে কিছুই বলবে না, এর কোনো নিশ্চয়তা আছে?
সন্ধ্যার দিকে ও আলমারি থেকে একটা পুরাতন কাপড় বের করতে গিয়ে উপরের আরও কয়েকটা কাপড় ফেলে দিল। সেগুলো তুলতে গিয়ে খেয়াল হলো আলমারিতে কাপড় গোছানোর সময় পাচ্ছে না ও। এই ফাঁকে নিজের তাকের সবগুলো কাপড় বের করে ফেলল। একটা পুরাতন খবরের কাগজ বিছানো। তরী নতুন কাগজ এনে পুরাতন কাগজ ফেলে দেয়ার জন্য বের করল। তখন কি যেন একটা নিচে পড়ল। তরী নিচু হয়ে সেটা তুললো, একটা ডায়রি। কার ডায়রি এটা? বিয়ের পরদিন ওকে আলমারির এই তাক খালি করে দেয়া হয়েছে, আগে জিসানের জিনিসপত্র দিয়ে বোঝাই ছিল। একবার জিসানের ডায়রি পড়ে ওর শিক্ষা হয়েছে, আবার ডায়রি পড়ে সে একই কান্ড ঘটাবে নাকি? থাক।
তরী ডায়রি একপাশে রাখে। কাপড়গুলো গুছিয়ে এরপর যে কোনো একপাশে সেটা রেখে দিলেই হবে, জিসান আসলে ওর জিনিস ওর কাছে তুলে দিবে। কারো ব্যক্তিগত বিষয় জানার কোনো দরকার নেই!
তরী মনে মনে কথাগুলো আওড়াচ্ছে আর কাজ করছে। সব কাপড় রাখা শেষে যখন ডায়রিটা হাতে নিল, তখন সে এতক্ষণ আওড়ানো বুলি ভুলে গেল! কোথায় গেল সেদিনের বকাঝকা, কোথায় গেল ওর নীতি! সব ভুলে সে ডায়রি খুলে বসলো। অনেক আগের ডায়রি এটা, প্রায় এগারো বছর আগের তারিখ দেয়া। এত আগের ডায়রি? তখন তো ইমরানের সাথেও ওর পরিচয় ছিল না। কেমন ছিল তখন জিসান? কি লিখত সে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিকে থাকার কথা জিসানের। অদম্য কৌতূহল নিয়ে তরী প্রথম পৃষ্ঠা থেকে পড়তে শুরু করল।
শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু মজার স্মৃতি লিখা। কয়েক পৃষ্ঠা হাবিজাবি লেখা পড়ার পর তরী দেখলো খুব সুন্দর হাতের লেখা কিছুটা কাঁপা কাঁপা। জিসান বোধহয় খুব উত্তেজিত ছিল লেখার সময়। সেখানে লিখা-
"আজ একটা মেয়েকে দেখলাম রাস্তায়। আমার জীবনে এত সুন্দর পরী বোধহয় কোনোদিন দেখিনি! মনে হচ্ছিল, ওকে দেখার পর আমি এখানে নেই, কোথাও হারিয়ে গেছি! কলেজ জীবন থেকে বন্ধুদের প্রেম করতে দেখি। কেউ প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে, কেউ কথা বলতে বলতে পড়ে। আমি বুঝি প্রথম দেখায় ওর প্রেমে পড়ে গেলাম! মেয়েটা ব্যস্ত ভঙ্গিতে চশমা ঠিক করে রিকশায় উঠে চলে গেল। আমার শালার এমন দশা হলো যে ওকে ফলো করার কথাও মনে আসলো না! কে জানে কোন মেয়ে সে। এখন ওকে কোথায় পাবো? ইশ, ওর চেহারা আমি ভুলতে পারছি না কিছুতেই। আল্লাহ, আমাকে ওকে আবার দেখার সুযোগ দিও!"
এটুকু পড়ে তরী বেশ মজা পেলো। মনে মনে হাসলো, জিসানও তাহলে এমন পা ভেঙে প্রেমে পড়েছিল এক সময়! অথচ এমন ভাবে ওকে ভালোবাসার কথা বলে, যেন ওই ওর একমাত্র প্রেম! জেলাসি অনুভব করার চিন্তাও ওর মাথায় আসলো না, উলটো দ্বিগুণ আগ্রহ নিয়ে পরের পেজ পড়তে শুরু করল।
"আজ থেকে কতবার যে আমি ভার্সিটি গিয়ে ওকে খুঁজেছি, তার ইয়ত্তা নেই। একটা মানুষ কেন একবারের জন্য এখানে আসবে? কেন সে বারবার আসবে না? এই ঢাবির ক্যাম্পাসে কেউ কখনো মাত্র একবারের জন্য আসে? পরী, তোমাকে যে আবার আসতে হবে, বারবার আসতে হবে! আর আমার কাছে ধরা দিতে হবে! সেদিন ও দাঁড়িয়েছিল স্মৃতি চিরন্তনের ওখানে, ব্যস্ত ভঙ্গিতে রিকশা খুঁজছিল। আর আমি খুঁজছিলাম ওর চোখে হারিয়ে বেরোনোর পথ! ঐ পথ আর পাবো না, তাই প্রতিদিন একটু একটু করে ওর মাঝে হারাচ্ছি! অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তিন দিন ধরে ওকে না দেখলেও স্বপ্নে ও ঠিকই দেখা দিয়েছে। আহ! কবে তুমি সামনে আসবে?"
"দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেল। অথচ ওর দেখা পেলাম না। সেদিন রুবেল বলছিল, আমি ওদিকে কি খুঁজি, কোনো মেয়ে আছে কিনা। আমি খুব সাবধানে সেটা এড়িয়ে গেলাম। ওরা জানতে পারলে আমাকে ক্ষেপিয়ে মারবে। মারবে মারুক, তবুও তো ওর ব্যাপারে সামান্যতম তথ্য হলেও তো আমার জানা দরকার! আচ্ছা, কিসে পড়ে মেয়েটা? মনে হয় না বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, নিশ্চয়ই কলেজের কিংবা নবম-দশম শ্রেণির হবে। মেয়েদের বয়স আমি একদম বুঝি না। ওদের কাপড়ের সাথে বয়স ওঠা নামা করে। এই যেমন নিপাপু শাড়ি পরলে ওকে কত বড় দেখা যায়, অথচ থ্রিপিসে সেই ছোট্ট আপু মনে হয়। আচ্ছা, আমার পরীকে শাড়ি পরলে কেমন লাগবে? আহ, এরপরের বার যদি শাড়ি পরা দেখতে পেতাম! উফ, বড্ড বাড়াবাড়ি হচ্ছে। ওকে দেখারই খবর নেই, আর আমি আছি শাড়ি পরা অবস্থায় দেখব, যত্তসব!"
"দীর্ঘ এক মাস কষ্টের পর আমার পরীর খোঁজ পেয়েছি! আমি তো কল্পনাও করিনি যে এমন কিছু ঘটবে! আজ পুরান ঢাকায় কল্পনা ফুপির বাসায় গিয়েছিলাম। বাসা থেকে বের হতেই দেখি সে রিকশা দিয়ে যাচ্ছে। কোনো কিছু চিন্তা না করে সামনে যে রিকশাওয়ালা পেয়েছি, তাকে নিয়েই পিছু পিছু ছুটলাম। ওর রিকশা ঘুরতে ঘুরতে ঘন্টাখানেক পর মিরপুর আনসার ক্যাম্পে গিয়ে থামলো। মানুষ এত দূর থেকে এভাবে রিকশা করে যায়? আমার তো কোমর ব্যথা হয়ে গেছে! তারপরও শুকরিয়া ওকে ফলো করতে পেরেছি। অবশ্য একদিক দিয়ে ভালোই, আমার পরী যদি বাসে উঠত, তাহলে কত ছেলে কত বাহানায় ওকে ছুঁতে চেষ্টা করত কে জানে! ভালোই হয়েছে রিকশা করে গেছে। এবার ওখানকার বন্ধুদের কাজে লাগিয়ে দিয়েছি। একদিনের মাঝে সব তথ্য চলে আসবে আমি নিশ্চিত!"
"আমার পরীকে এলাকার তেমন কোনো ছেলে চেনে না। সমস্যা নেই, অন্য কোনোভাবে ওর তথ্য পাবোই। কারণ বন্ধু বলল, ওলে কলেজ ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় দেখেছে। এখন ওকে বের করা কঠিন হবে না। একদিক থেকে শান্তি, মেয়েটা কলেজে পড়ে, আর আমি মাস্টার্সে। খুব বেশি জুনিয়র হবে? নাহ, মেয়েরা নাকি একটু জুনিয়রই ভালো, স্বামীকে ভালো বুঝে। আমি তো দেখছি খুব এডভান্স! হেহে!"
"ওর নাম ঠিকানা সব নেয়া শেষ। আমার মাস্টার্স এর আরও সময় আছে, ততদিন ওকে পাহারা দিয়ে রাখতে হবে। এত ছোট মেয়ে, মাত্র ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে! এত অল্প বয়সে প্রেম করলে যদি রেজাল্ট খারাপ হয়? ক্যারিয়ার নষ্ট হয়? শুনেছি খুব ভালো ছাত্রী। সমস্যা নেই, আমার পরীকে কেউ দখল করতে পারবে না। যত পোকা মাকড় ওর আশেপাশে আসবে, সব কারেন্টের শক দিয়ে মারব! আমার উপযুক্ত সময় হওয়ার আগে পর্যন্ত ওকে পাহারা দিয়ে রাখব, আর লুকিয়ে লুকিয়ে মন দিয়ে দেখব। আহ, আমার পরী!"
এইটুকু পড়ার পর তরী জিসানের কথা শুনতে পেলো। মাত্র আটটা বাজে, এত আগে আসলো কেন সে? তরী দাঁড়াতে গিয়ে হাত থেকে পড়ে বিছানার কিছুটা নিচে ঢুকে গেছে। তাড়াহুড়ো করে সেটা বের করতে গিয়ে দুম করে ডান কাঁধে আঘাত পেলো। বাম হাতে ডান কাঁধ চেপে কোনো মতে ডায়রিটা আলমারির ভেতর নিজের কাপড়ের আড়ালে লুকিয়ে ফেলল।
রাতে ঘুমানোর সময় শুয়ে তরী ডান কাঁধ চেপে ধরে রেখেছে। জিসান প্রশ্ন করল,
"কি হয়েছে কাঁধে?"
"হালকা ব্যথা। ঠিক হয়ে যাবে"
"কাঁধে ব্যথা হলো কি করে?"
"খাটের কোণায় লেগে"
জিসান ঠিক বুঝতে পারলো না খাটের ওখানে ও ব্যথা পায় কি করে? জিসান হাত মুখ মুছছিল, ঐ সময় তরী প্রশ্ন করল,
"আপনার প্রথম প্রেম কে?"
জিসান বেশ বিস্মিত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো।
"আমার প্রথম প্রেম? হঠাৎ এই প্রশ্ন?"
"এমনিই জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করল। করতে পারে না?"
"হুট করে এমন উদ্ভট চিন্তা কেন মাথায় আসবে?"
"বলুন না"
"আমার এক ছোট বেলার বান্ধবী। দুজনে তখন হাফপ্যান্ট পরে ঘুরতাম আর একজন আরেকজনের কুলফি খেতাম। আজকালের ছেলে মেয়েদের মত পাকা হলে ওর সাথে বড় হয়েও প্রেম করতাম! কপাল খারাপ, বড় হওয়ার আগেই ও হারিয়ে গেল!"
তরী জিভ দিয়ে চুকচুক শব্দ করল।
"আহারে! ঐসব বাচ্চাকালের না, বড় হয়ে কখনো প্রেমে পড়েননি?"
"ওসব জেনে কি হবে?"
"আহ, বললে কি হবে?"
"নাহ, পড়িনি কখনো। এখন ঘুমাও। অনেক রাত হয়েছে"
জিসান আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। তরীর অভিমান হচ্ছে, কষ্টও হচ্ছে। জিসান কেন ওকে মিথ্যা বলল? ওকে বললে কি হতো সেই রিকশার মেয়েটার কথা? যাকে সে ফলো করত? কেন মিথ্যা বলল? কে জানে ওই মেয়ের সাথে তার কি কি না জানি হয়েছে! অন্ধকারে হুট করে তরীর কান্না পেয়ে গেল। হয়ত নিজের অজান্তে আশা করেছিল ও জিসানের জীবনের একমাত্র আকর্ষণীয় নারী যে কিনা দুই সন্তানের জননী হওয়া সত্ত্বেও জিসান এগিয়ে এসেছে। অথচ ঘটনা এরকম না! জিসানও এক সময় একজনকে ভালোবাসত। হয়ত তার কাছ থেকে ব্রেকাপ হয়ে যাওয়ায় তরীর দিকে মুভ অন করেছে।
নিমেষে তরী ভুলে গেল, জিসানের আগে ও ইমরানকে ভালোবেসেছে। কেবল তাই নয়, তাদের সংসার ছিল, দুটো সন্তানও আছে। অথচ ও ছাড়াও অন্য কাউকে জিসান ভালোবাসে, কারণ প্রথম ভালোবাসা তো কেউ ভুলে না; এটা ভেবে ওর চোখ বেয়ে নোনাজলের ধারা গড়িয়ে পড়ছে। তার উপর জিসান ওকে মিথ্যা বলেছে! না জানি এই লোক আরও কত মিথ্যা ওকে বলেছে! কে বলে সে এত ভালো? সব ভালোর আড়ালে নিশ্চয়ই অনেক বড় কোনো মিথ্যা লুকিয়ে রেখেছে সে!
চলবে...
Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top