১৯
#অভিসারক_ও_অভিসারিণী
লেখা #AbiarMaria
#১৯
দুজনে যথাসম্ভব নিঃশ্বাস চেপে শুয়ে আছে। জামান ফারহাকে আরও জোরে শরীরের সাথে চেপে ধরেছে নিজের অজান্তেই। সামনে আসন্ন ভয়াবহ বিপদ। ফারহা কিছু একটা বলতে চাইলে জামান ওকে ইশারা করল কিছু না বলতে।
ধীরে ধীরে পদশব্দ আরও কাছে এগিয়ে আসছে। একটা গাড়িতে ওরা দুইজন মিলে মেরে বসল। ডোর লকের এলার্ম জোরে জোরে বাজছে। ওরা এর মাঝে কাঁচ ভাঙতে শুরু করে দিয়েছে। ছেলেগুলো তীব্র স্বরে গালিগালাজ করছে এখন। ফারহা কিছুটা ভয়ে জামানের ওভারকোট খামচে ধরে রেখেছে। ছেলেগুলো হল্লা করতে করতে ওদের ধীরে ধীরে অতিক্রম করল। এখনও ওদের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। ফারহা ফিসফিস করে বলল,
"ওরা কি ড্রাংক?"
"হুম"
"করতেছে কি?"
"ডাকাতি করবে। মেয়ে পেলে গ্যাংরেইপ"
ফারহা ভয়ে ঢোক গিলল। আমেরিকার এইসব রেইপ কেইস নিয়ে অনেক শুনেছে। এই সভ্য দেশেও এমন অপরাধ কম হয় না। ও ভয়ে ভয়ে বলল,
"পুলিশকে কল দেয়া যাবে না?"
"ওরা স্থানীয়। লাভ নেই। উলটো তুমি ওদের টার্গেট হবা"
"তাহলে চলেন, দুটো লাঠি নিয়ে ওদের মারি দুজন মিলে!"
জামান এমন ভাবে ফারহার দিকে তাকালো যেন এরকম হাস্যকর কথা কেউ আগে কোনোদিন বলেনি।
"ওরা আর্মড। গুলি করে দিবে। তোমার কলিজা আছে, যদিও এই কলিজা দিয়ে লাভ হবে না কোনো। সাচ আ ওয়েস্ট !"
জামান ফারহার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কি হয়েছে ও নিজেও জানে না, আগের মতই ফারহার লিপস্টিকে রাঙা ওষ্ঠ জোড়া ওর দৃষ্টিতে বারবার আটকে যাচ্ছে। নিজেকে যতই নিয়ন্ত্রণ করুক, নিজের দৃষ্টি যে নিয়ন্ত্রণে থাকছে না, তা বলাই বাহুল্য! ফারহার মনে দুষ্টুমি উঁকি দিল।
"জামান ভাই, এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন না প্লিজ। এরকম সিন তো ইংরেজি সিনেমায় হয়। নায়ক নায়িকা এভাবে কাছে চলে আসে, আর দুজনে দুজনকে চুমু খায়!"
জামান ফারহার হাতে চাপ দিল। ফারহার চাইতেও ফিসফিস করে বলল,
"এই পরিস্থিতিতেও রসিকতা যায় না তোমার? তোমাকে চুমু খেতে যাই, আর ওরা আমাদের দেখে ফেলুক, না?"
"দেখবে না। আপনি কি চপচপ আওয়াজ করবেন নাকি?"
"বের হয়ে নেই। তোমাকে আমি চুমু খাওয়াচ্ছি! ঐ যে, রাস্তার ধারে কতগুলো ভেগাবন্ড বসে থাকে, মাঝে মাঝে হাতে সাইনবোর্ড থাকে, নিড আ কিস? তোমাকে ওদের কাছে ফেলে দিয়ে আসবো। তোমাকে চুমু খাওয়ার মত দুঃস্বপ্ন আমি দেখি না!"
"আমার চোখের দিকে তাকিয়ে এত বড় মিথ্যা বললেন? আমি দেখতে পাচ্ছি আপনি চুমু খেতে চাচ্ছেন! এই যে, এখন ইচ্ছে করছে চুমু দিয়ে আমার মুখ বন্ধ করতে, তাই না?!"
জামান নিজের শরীর টেনে কিছুটা উপরে তুলে ফারহার মুখ ওভারকোটের সাথে চেপে ধরে যেন ফারহা বেশি কথা না বলতে পারে। ফিসফিস করে বলল,
"তোমার কথা বন্ধ করার আরও অনেক উপায় আমি জানি। ইংরেজি সিনেমার হিরোইনের মত নির্লজ্জ তুমি হলেও আমি হিরোর মত নির্লজ্জ না যে চান্স পেয়েই এসব অসভ্যতা করব!"
ফারহা ওর হাত দিয়ে জামানকে খামচে সরানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে বেশি নড়াচড়া করতে পারছে না, আবার নিঃশ্বাসেও কষ্ট হচ্ছে। ওদিকে মোটা ওভারকোট, স্যুট পেরিয়ে ফারহার তীব্র খামচি গুলোকে হালকা নাড়াচাড়া মনে হচ্ছে। বেচারি কোনোভাবেই সুবিধা করতে পারছে না।
কয়েক মিনিট পর যখন বুঝতে পারল ওরা চলে গেছে, তখন জামান উঠে দাঁড়িয়ে ফারহাকে এক টানে শোয়া থেকে দাঁড় করিয়ে ফেলল। তারপর মাথা নিচু করে ছায়ায় ছায়ায় লুকিয়ে ওদের গাড়ির কাছে আসলো। ফারহাকে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসিয়ে সে ড্রাইভিং সিটে চড়ে বসলো। গাড়ি স্টার্ট হতেই ফারহা জামানকে আচ্ছামত কিল ঘুসি যা পারছে দিচ্ছে। জামান হুইল ঘোরাতে ঘোরতে বলল,
"এত মারামারির কি আছে? তোমাকে তো চুমু খাইনি আমি! নাকি চুমু না খাওয়ায় এত রাগ? বেশি বেশি করলে একেবারে কানাগলিতে ফেলে আসবো কিন্তু। তখন আবার যখন ওরা আসবে, বুঝবে মজা! অবশ্য তোমার তো চুমু চাই। ওরা দিবে, ভালোভাবে দিবে!"
ফারহা আবার জামানকে মারতে শুরু করল। এদিকে জামান মেইন রোডে উঠে এসেছে এর মধ্যে। ডান হাত দিয়ে ফারহার দুই হাত কায়দা করে চেপে ধরে ড্রাইভ করতে লাগলো। ফারহা যতই চেষ্টা করুক, কিছুতেই হাত ছাড়াতে পারছে না। জামান রাস্তার দিকে নজর দিতে দিতে বলল,
"সরি বলো?"
"বলব না!"
"না বললে হাত আরও জোরে চেপে ধরব কিন্তু!"
"আস্ত একটা গন্ডার আপনি! এইভাবে কেউ মুখ চেপে ধরে? আমি শ্বাস বন্ধ হয়ে মারাই তো যাচ্ছিলাম! আবার এখন হাত ধরে রাখছেন!"
"তোমার মত কই মাছ এত তাড়াতাড়ি মরবে না আমি জানি। শুকরিয়া করো যে আমি হাত নাড়াতে পারছিলাম না। নাহলে যেমন উল্টাপাল্টা বকছিলে, তোমার মুখে ময়লা কাপড় গুঁজে দেয় দরকার ছিল!"
ফারহা ঝাটকা মেরে দুই হাত ছুটিয়ে হাত ডলতে থাকে। ওপাশ ফিরে বলল,
"গন্ডারের ছাও একটা। এহ, এমন একটা ভাব ধরছে যেন ভার্জিন! এত সুন্দরী একজনকে কাছে পেয়েও লোভ হয় না!"
জামান আস্তে করে বলল,
"আমি কিন্তু আসলেও ভার্জিন!"
ফারহা চিৎকার করে উঠল,
"হ্যাঁ, হ্যাঁ, আর আমি নন ভার্জিন! নন ভার্জিন কোকোনাট অয়েল!"
জামান হাসছে। ড্রাইভ করে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরও বিশ মিনিট লেগে গেল। এই বিশ মিনিট ফারহা ননস্টপ বকবক করে জামানের মাথা ধরিয়ে ফেলেছে। জামান গাড়ি থেকে বেরিয়ে ওপাশে যেতে যেতেই ফারহা গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে। হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলল,
"আপনি মানুষটা আসলে একটুও সুবিধার না। কিন্তু শুধু শুধু সাধু হওয়ার ভাণ ধরেন! এইসব আমি বুঝি না ভাবতেছেন? আজকে আপনি জেলাস ছিলেন, আমি শিওর। কেউ আমার সাথে থাকলে খুব জেলাসি হয়, না?"
জামান এক টানে ফারহাকে কাঁধে তুলে নিল। ফারহা জামানের চুল ধরে টানছে আর পিঠে কিল ঘুসি মারছে। জামানের এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে গাড়ি লক করে ফারহাকে এমন ভাবে নিয়ে উঠতে লাগলো যেন ফারহা একটা আটার বস্তা। ফারহা এবার ওর ঘাড়ে খামচি দিতে শুরু করল, আপাতত এটুকু খালি যায়গা পাওয়া যাচ্ছে, এছাড়া জামানের পুরো শরীর কভার করা।
খুব বেশি খামচি দেয়ার আগেই জামান ওর এপার্টমেন্টে ঢুকে গেল। দরজা আটকে নিজের ঘরে গিয়ে আলমারি থেকে কি যেন একটা বের করল। ফারহা চেঁচামেচি আর থ্রেট দিয়েই যাচ্ছে জামানকে কাঁধ থেকে নামানোর জন্য। জামান ওকে কাঁধে করে এনে ধুম করে সোফায় ফেলে দিল। তারপর ওর দুই হাত পিছ মোড়া করে হ্যান্ডকাফ দিয়ে আটকে দিল। ফারহা তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠল,
"হোয়াট দ্যা হেল! এই হ্যান্ডকাফ কোত্থেকে আসছে! আপনি কি আমাকে এরেস্ট করলেন? দেখেন জামান ভাই, একদম ভালো হবে না! একদম না!"
জামানের চোখে মুখে ভয়াবহ কামনার আগুন। আজকে খারাপ কিছু একটা হয়েই যাবে। ফারহা বাঁধা অবস্থায় মোচড়াচ্ছে, আর জামান ওর দুই হাত দিয়ে ফারহার দুই বাহু চেপে সোফার সাথে ওকে মিশিয়ে রেখেছে। জামানের গায়ে এত জোর কেন ভাই! ফারহা প্রাণপণে ছোটার চেষ্টা করছে। জামান ফারহা মুখের কাছে মুখ নামিয়ে আনলো। ফিসিফিসিয়ে বলল,
"খুব চুমু খাওয়ার শখ, না? আজকে শখ মিটাবো তোমার। আর জীবনেও আমার সাথে পাঙ্গা লাগতে আসবা না!"
"আপনি না বললেন আপনি এসব দুঃস্বপ্ন দেখেন না? আমি জানতাম, ইন ডিপ, আপনি একটা অসভ্য!"
"ঠিক আছে, তোমার কথাই সত্য প্রমাণিত হোক!"
জামানের মুখ নেমে আসছে ফারহার কাছে, আরও কাছে। ফারহা চোখ বন্ধ করে আছে। আর ভাবছে, আজকে সত্যি সত্যি নন ভার্জিন কোকোনাট ওয়েল হবে যাব আমি!!!
চলবে...
Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top