♤তিন ♤
আজ সকাল ৯ টায় আব্দুল মোক্তারের লাশ তার নিজ বাসায় পাওয়া গিয়েছে ।ময়নাতদন্ত বলছে হার্ট ফেল।
তবে সন্দেহজনকভাবে রক্তাক্ত ছুরি পাওয়া গেছে ।যদিও সে রক্ত আব্দুল মোক্তারের নয়, যা একটা বড় রহস্য ।তাছাড়া, ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাঁচের গুড়ো ।যা বলছে যে এটা খুন।
এ অপমৃত্যুর যথাযথ তদন্ত না করলেই নয়।স্কুলের ছাত্ররা এ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড রটাচ্ছে।তাই এ সব কিছুর বোঝা এসে পড়েছে মিরপুর থানার ওসির ঘাড়ে ।
কিন্তু চাইলেই কি সব কিছুর সমাধান পাওয়া যায়? এ ধরনের কেস আগে কখনো পান নি ওসি সাহেব। আব্দুল মোক্তারের ক্ষেত্রে কোন ক্লু -ই তো পাওয়া যাচ্ছে না। কোন কিছু পাওয়া গেলে না হয় তদন্তের কুল কিনারা পাওয়া যাবে।
অনেক খোঁজ করে ওসি জানতে পারলেন যে আব্দুল মোক্তার গত ৮ দিন আগে এক সাইকলজিস্টের কাছে যায়।তাই তিনিও চললেন সেখানে।
ঘড়িতে বিকাল চারটা।মাকসুদুর রহিমের চেম্বার প্রায় ফাঁকা ।ওসি সাহেব ,চেম্বারে ঢুকলেন ।তার চুল উস্কোখুস্কো,চেহারায় বিরক্তি আর ক্লান্তির ছাপ।দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে উল্টাপাল্টা কথা বললে তেড়ে আসবে ।
অন্যদিকে মাকসুদের চেহারা কিন্তু বেশ ফিটফাট।
সন্দিহান দৃষ্টিতে ওসির দিকে তাকালেও হাসি মুখে তাকে আসতে বললো।
"আব্দুল মোক্তারের ব্যাপারে এসেছেন?"
ওসি এবার মাকসুদের দিকে তাকালেন যার অর্থ এই যে আপনি কি করে জানলেন ।
"টিভিতে দেখলাম।খুব খারাপ লাগছে" যদিও মাকসুদের মুখে খারাপ লাগার কোন লক্ষণই প্রকাশ পেল না।
"কি নিবেন চা নাকি কফি?" ভাবখানা এমন যে ওসিকে দেখে খুব মজা পাচ্ছে ।
"কিছু লাগবে না ।সরাসরি কাজের কথায় আসি। আব্দুল মোক্তার কিসের কারণে আপনার কাছে এসেছিল?"ওসি মাকসুদকে সন্দেহের চোখে জিজ্ঞাসা করলেন ।
"ঐ সাইকলজিস্টের কাছে মানুষ যে কারণে আসে...."
"কথা প্যাঁচাবেন না! যা বলেছি শুধু তার জবাব দিন" ওসি বিরক্তি ভরা কণ্ঠে বললেন ।
"আরে! রাগ করলেন যে" মাকসুদ হাসল।"তেমন কিছু না, স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হয়েছিল তার পর থেকে নিজের একমাত্র ছেলেকে নাকি ২ টি দেখতে পান।অদ্ভুত!"
"উনার স্ত্রী আর ছেলে!? ঠাট্টা করছেন নাকি?"
"কেন? আমি যা জানি তা-ই তো বললাম"
"তার মানে? আব্দুল মোক্তার তো অবিবাহিত!"
"কি!?" আশ্চর্য হওয়ার ভান করলো সাইকলজিস্ট ।"উনি কি আমাকে মিথ্যা বললেন?"
ওসি জোরে হাসতে লাগলেন ।
"হাসছেন কেন?"
"পাগলের চিকিৎসা করতে গিয়ে পাগল হয়ে গেলেন দেখছি!"
ঠিক সে সময় মাকসুদের চোখ দু'টো ধ্বক করে জ্বলে উঠল।ওসি তার চেহারার ভাব দেখে থেমে গেল।
"আমার পেশা নিয়ে মশকরা করবেন না!!"
"মশকরা কেন করবো? আপনি সঠিক কথা বলুন আমরা চলে যাব।"
মাকসুদ চুপ করে রইল।এক দৃষ্টিতে ওসির দিকে তাকিয়ে রইলো ।
কিন্তু হঠাৎ ঘরটা আশ্চর্যরকম ঠান্ডা হয়ে গেল। ওসির মনে হলো তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।খুব খুব অস্বস্তি লাগছে।এইখানে তার আর এক মুহুর্তও থাকতে ইচ্ছে করছে না।
এদিকে মাকসুদও কিছু বলছে না।
"ঠিক আছে, যখন প্রমাণ পাব তখন গারদে পুরবো তোকে!" ওসি মাকসুদকে শাসিয়ে চলে গেলেন ।
কিন্তু যদি তিনি পিছে ফিরতেন তবে দেখতে পেতেন মাকসুদের চেহারার সেই নিষ্ঠুর হাসি। যা আব্দুল মোক্তারের সময়ও সে হেসেছিল।
আজই তোর শেষ রাত!! মাকসুদ গম্ভীর স্বরে বললো।
Bạn đang đọc truyện trên: AzTruyen.Top